ফরিদগঞ্জে মৎস্যজীবীদের মানবন্ধন : প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নিবন্ধন ॥ ডাকাতিয়া রক্ষার দাবী
ফরিদগঞ্জ: প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নিবন্ধন, ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা পরিষ্কার করে মাছ, পানি এবং পরিবেশ রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের দাবীতে ৩রা সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে মানববন্ধন ও মিছিল সামবেশ করেছে ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স গেইটে মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, সিআইপি’র অভ্যন্তরে ফরিদগঞ্জে প্রবাহমান ডাকাতিয়া নদীর পানি পচে প্রতি বছর মাছ মরে ভেসে উঠছে। প্রচন্ড দুর্ঘন্ধ ছড়াচ্ছে নদীর দু’পাড়ে। হুমকীর মুখে পড়ছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও জনজীবন। নদীতে জমাট বাঁধা কচুরীপানা পচে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে, নদীকে কেন্দ্র করে জীবন-জীবীকা নির্বাহকারী জেলে-মৎস্যজীবীরা রয়েছে খুবই বিপাকে।
বক্তারা ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক ভাবে নদীতে সৃজিত হয় কচুরীপানা এবং নদীর দুই তীরের চরসমূহ থেকেও বিপুল পরিমান কচুরীপানা নদীতে ছাড়া হয়। নদীর অসংখ্য বাঁক এবং কাটাখালী লোহার পুলের কারণে শ্রোতের টানে কচুরীপানা বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে, বছরে কয়েক দফা জমাট বাঁধা কচুরীপানা পচে মাছের মড়ক লেগে ডাকাতিয়া মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র।
মৎস্যজীবীদের দাবী, ডাকাতিয়া নদীকে সারা বছর পরিস্কার রাখা গেলে বিপুল পরিমাণ দেশীয় মাছ উৎপন্ন হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে এবং এই অঞ্চলের আমিষের চাহিদা পূরণে ডাকাতিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তারা বলেন, বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, ডাকাতিয়া নদীর কচুরীপানা পরিস্কার রাখা জেলে, মৎস্যজীবি ও দুই তীরের জনগনের সাধ্যের অতীত। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ সরকারী উদ্যোগ। তাই, ডাকাতিয়া নদীকে কচুরীপানা মুক্ত রাখতে টি আর, কাবিখা-কাবিটার মত স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ গত কয়েক বছর ধরে মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ ও স্মারকলীপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। তা সত্বেও, সরকার এ ব্যপারে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছেন। তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, মৎস্যজীবী ও ভূক্তভোগী মানুষের ন্যায় সঙ্গত দাবী মানা না হলে পরবর্তীতে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
তারা আরও বলেন, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের বাঁধের ফলে ডাকাতিয়া নদীতে প্রাকৃতিক জোয়ার ভাটা বন্ধ হলেও ডাকাতিয়া একটি উন্মুক্ত জল মহাল। উন্মুক্ত জলমহাল ইজাড়া দেওয়ার বিধান না থাকায় মহল বিশেষ ডাকাতিয়া নদীর প্রকৃতি পরিবর্তন করে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজাড়া নেওয়ার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। মহল বিশেষের হীন চক্রান্ত বাস্তবায়িত হলে জীবিকা হারাবে হাজার হাজার জেলে মৎস্যজীবি, নদী ব্যবহারের অধিকার হারাবে দুই তীরের লক্ষ মানুষ। মৎস্যজীবিরা অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন স্থানে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের পরিবর্তে অমৎস্যজীবি ও সুবিধাবাদীদের নিবন্ধন দেয়ার হীন কাজ করছে। তাই, তারা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের তালিকা প্রণয়ন ও নিবন্ধন করার জন্য জোর দাবী জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাসদ কনভেনশন প্রস্তুত কমিটি ফরিদগঞ্জ এর সদস্য সচিব জি এম বাদশা, মৎস্যজীবি সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, মৎস্যজীবী অনিল দাস, শীতল দাস, সুখ রঞ্জন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সদস্য ফারুক আহাম্মদ পাটওয়ারী প্রমুখ।
বার্তা প্রেরক: আবু হেনা মোস্তফা কামাল