সিআইপি’র অভ্যন্তরে ফরিদগঞ্জে প্রবাহমান ডাকাতিয়া নদীর পানি পঁচে গেছে। গত এক মাস যাবৎ নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীর দু’পাড়ে। হুমকীর মুখে পড়েছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনজীবন। নদীতে জমাট বাঁধা কচুরীপানা পঁচে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীকে কেন্দ্র করে জীবন-জীবীকা নির্বাহকারী জেলে-মৎস্যজীবীরা পড়েছে খুবই বিপাকে। এ অবস্থার অবসানের জন্য আন্দোলনে নেমেছে ফরিদগঞ্জের মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ। মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা ৭ এপ্রিল বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এ সময় সংগঠেনর পক্ষ থেকে নদীর কচুরীপানা পরিষ্কারের স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সংগ্রাম পরিষদের পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ৬০-৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়া নদীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ফরিদগঞ্জ উপজিলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। উন্মুক্ত ডাকাতিয়ার দুই তীরে লক্ষ মানুষ ও হাজার হাজার জেলে-মৎস্যজীবী আবহমান কাল থেকে নদী ব্যবহার ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের বাঁধের ফলে ডাকাতিয়া নদীতে প্রাকৃতিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ হলেও ডাকাতিয়া একটি উন্মুক্ত জলমহাল। উন্মুক্ত জলমহাল ইজারা দেওয়ার বিধান না থাকায় মহল বিশেষ ডাকাতিয়া নদীর প্রকৃতি পরিবর্তন করে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজারা নেওয়ার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মহল বিশেষের হীন চক্রান্ত বাস্তবায়িত হলে জীবিকা হারাবে হাজার হাজার জেলে মৎস্যজীবি, নদী ব্যবহারের অধিকার হারাবে দুই তীরের লক্ষ মানুষ যা কোনোভাবেই জেলে-মৎস্যজীবি ও নদীর দুই তীরের মানুষ মেনে নেবে না।
ডাকাতিয়া নদীতে একসময় প্রাকৃতিকভাবে শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, একাধিক প্রজাতির পুঁটি, কাইক্কা, বাইম, মলা-ঢেলা, চান্দা, পাপদা, পলি, পলি বইচা, কুলি, চাপিলা, বাইলা, ল, গজার, শোল, খলিসা, টাকি, গনিয়া, চীতল, রুই, কাতলা, মৃগেল, চিংড়ি, আইড়সহ প্রায় ৩০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। সেই ডাকাতিয়া এখন বছরের বেশীর ভাগ সময়ে মাছ শূন্য থাকে। এর মূল কারণ, প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট কচুরীপানা এবং নদীর দুই তীরের চরসমূহ থেকে বিপুল পরিমাণ কচুরীপানা নদীতে ছাড়া হয়। নদীর অসংখ্য বাঁক এবং কাটাখালী লোহারপুলের কারণে শ্রোতের টানে কচুরীপানা বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে বছরে কয়েক দফা জমাট বাঁধা কচুরীপানা পঁচে মাছের মড়ক লেগে ডাকাতিয়া মাছশূন্য হয়ে পড়ে এবং পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডাকাতিয়া নদীকে সারাবছর পরিস্কার রাখা গেলে বিপুল পরিমাণ দেশীয় মাছ উৎপন্ন হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং এই অঞ্চলের আমিষের চাহিদা পূরণে ডাকাতিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, ডাকাতিয়া নদীর কচুরীপানা পরিস্কার রাখা জেলে-মৎস্যজীবি ও দুই তীরের জনগণের সাধ্যের অতীত। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ সরকারি উদ্যোগ। তাই ডাকাতিয়া নদীকে কচুরীপানা মুক্ত রাখতে টি.আর., কাবিখা-কাবিটার মতো স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
স্মারকলিপি প্রদান পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাসদ ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদস্য সচিব জিএম বাদশা সিআইপি’র ভিতরে বসবাসকারী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মৎস্যজীবীদের উদ্যেশে করে বলেন, এ আন্দোলন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে বহু বাধা-বিঘ্ন আসতে পারে। সে সব মোকাবেলা করেই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এ সময় অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, শীতল চন্দ্র দাস, অনিল চন্দ্র দাস, নুরুল ইসলাম কুট্টি, সুখ রঞ্জন বর্মন, বিমল চন্দ্র দাস প্রমুখ।
স্মারকলিপি’র অনুলিপি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রশাসক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন মৎস্যজীবি সংগ্রাম কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু।