Saturday, December 28, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদঢাকা - সুন্দরবন রোড মার্চ সফল করুন - বাসদ (মার্কসবাদী)

ঢাকা – সুন্দরবন রোড মার্চ সফল করুন – বাসদ (মার্কসবাদী)

RoadMarch16_18October15গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আহুত ঢাকা-সুন্দরবন রোড মার্চ সফল করে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)। দলের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী প্রচার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে প্রকাশিত প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে মানুষ বিক্ষুব্ধ। এর মধ্যেই মহাজোট সরকার সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালে বিশাল আকৃতির কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে একই ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি নতুন প্রকল্পের জন্য আরও জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব সম্প্রতি একনেক পাশ করেছে। শুধু তাই নয়, অদূরেই ওরিয়ন কোম্পানিকে ৬০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য জমি দেয়া হয়েছে।

এখন, সুন্দরবনের পাশে এতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে যে লক্ষ লক্ষ টন কয়লা পোড়ানো হবে তাতে কালো ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হবে। নির্গত হবে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। কয়লার ছাই মাটি ও পানিকে বিষাক্ত করবে। গতবছর শ্যালা নদীতে একটি তেলবাহী জাহাজডুবিতে সুন্দরবনের বিপন্ন দশা আমরা দেখেছি। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ কয়লা বহনকারী জাহাজ আসা-যাওয়া করবে বনের ভেতর দিয়ে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন ও ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ সুন্দরবনের দশা তাহলে কী দাঁড়াবে? কয়লার বিষক্রিয়ায় ধীরে ধীরে সুন্দরবনের মৃত্যু হলে সারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় দক্ষিণাঞ্চল অরক্ষিত হয়ে পড়বে।

কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশবিধ্বংসী প্রভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত: জনবহুল এলাকা, উর্বর কৃষিজমি বা বনাঞ্চল থেকে দূরে এধরণের প্রকল্প স্থাপন করা হয়। পাশের দেশ ভারতেও আইন আছে – সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিমি-এর মধ্যে কোনও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। অথচ, সেই ভারতের এনটিপিসি কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান সরকারি হিসাবেই সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে। ভারতীয় কোম্পানির সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্তগুলোও অসম এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও পড়বে বেশি।

বিদ্যুৎসংকট নিরসনের জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। এর আগে বিদ্যুৎসংকট নিরসনের কথা বলে তেলচালিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তারও বেশী। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে দিতে হচ্ছে বেসরকারি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে। এভাবে, জনগণের প্রয়োজন পূরণের নাম করে চলে জনগণের সম্পদ লুটপাট এবং অধিকার হরণ। আসলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে সরকারের দাবি- সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রামপাল কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, এতে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু যত উন্নত প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হোক না কেন, বিশ্ব জুড়ে এখন পর্যন্ত নিরাপদ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ (clean coal energy) বলে কিছু নেই। পরিবেশের ক্ষতির মানদণ্ড বিচারে এগুলো লাল তালিকাভুক্ত (red catagory)।

বাসদ (মার্কসবাদী) সহ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও অন্যান্য বামপন্থী দল, দেশপ্রেমিক ব্যক্তিবর্গ-সংগঠনসমূহ রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। বহুল সমালোচিত এই প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যে শুধু দেশে নয়, ইউনেস্কো-রামসারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাও প্রশ্ন তুলেছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় কয়েকটি বিনিয়োগকারী ব্যাংক ইতিমধ্যে এতে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। অথচ, প্রধানমন্ত্রী একহাতে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরষ্কার নিচ্ছেন, অন্য হাতে সুন্দরবনের জন্য বিপজ্জনক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। সকল মহলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অনির্বাচিত মহাজোট সরকার স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় এই প্রকল্প অগ্রসর করছে। যতই যৌক্তিক হোক, বাধ্য না হলে তারা জনমতকে তোয়াক্কা করেন না। জনসাধারণের সংগঠিত আন্দোলনের চাপেই কেবলমাত্র সরকারকে তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করা সম্ভব।

সেই লক্ষ্যে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আগামী ১৬ – ১৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে সুন্দরবন রোডমার্চের ডাক দিয়েছে। এই রোডমার্চ চলাকালে পথে পথে জনসভা-পথসভা-মিছিল-প্রচারপত্র বিতরণ-গণসংযোগ-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে।

প্রচারপত্রে জনগণের অংশগ্রহণ-সমর্থন-সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয় এবং এই কর্মসূচি সফল করে দেশের সম্পদ ও ভবিষ্যত রক্ষায় এবং অধিকার আদায়ে গণআন্দোলনের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments