মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মীয় মৌলবাদ, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সকল বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ আগষ্ট ২০১৬ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী), কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। কমরেড নজরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা, বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর আহম্মেদ, নারী নেত্রী অধ্যাপক শ্যামলী শীল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা, ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফাইজুল হাকিম লালা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, জাতীয় গণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা রজত হুদা, কৃষক নেতা নিমাই মন্ডল, শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ছাত্র নেতা নাঈমা খালেদ মনিকা প্রমুখ।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গিবাদসহ সকল নিপীড়নের মূল কারণ হল পুঁজিবাদ, গোটা বিশ্বব্যাপী যা আজ ফ্যাসিবাদী রূপ গ্রহণ করেছে। সম্পন্ন ঘরের ছেলেরা কেন জঙ্গি হচ্ছে তার কারণ বুঝতে হলে শিক্ষা ও সমাজের দিকে তাকাতে হবে। শিক্ষার পরিমাণগত বিস্তার ঘটেছে কিন্তু গুণগত উৎকর্ষ ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাসহ জ্ঞান চর্চার অভাব ঘটছে। পাঠ্য বাইতে ইতিহাসের স্থান সংকুচিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বগত বিজ্ঞান, মানববিদ্যা-দর্শন, ইতিহাস এসবের কোন চর্চা হয়না। এভাবে শিক্ষার নামে অজ্ঞানতা, বিচ্ছিন্নতা-সমাজ বিচ্ছিন্নতা, ইতিহাস বিচ্ছিন্নতা, যুক্তি বিচ্ছিন্নতা তৈরী হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতা পুজিবাদের রোগ; তৈরী করছে হতাশা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুবৃত্তায়ন, দুর্নীতি, আগ্রাসন, লুটপপাট- এ সবের যথার্থ কারণ বুঝতে না পেরে কখনও তাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয়টাই বড় হয়ে উঠছে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তরুণর দুঃসাহসিক কাজ চায়। একাত্তরে এই তরুণরাই লড়েছে জীবনের জন্য। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা জীবনের কাজের পরিবর্তে জীবিকার কাজে তরুণদের নিবদ্ধ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বড় দলগুলোর রাজনৈতিক আধিপত্যের পরিবেশে নেই কোন মতাদর্শিক আলোচনা, তর্কবিতর্ক ও খেলাধুলা। ২৫ বছর ধরে হচ্ছেনা ছাত্র সংসদ নির্বাচন।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ সরকার যে মানসিকতায় রাষ্ট্র চালাচ্ছে, তার সাথে জঙ্গিবাদের দর্শনের কোন পার্থক্য নেই। জঙ্গিবাদের দর্শন হল- ‘আমার মতই শ্রেষ্ঠ। ভিন্নমত না জায়েজ, হত্যা করা তাই সঙ্গত। সরকার নিজেদের জনবিরোধী কাজকেই সঠিক মনে করছে। গণবিরোধীতা তার কাছে অপরাধ। ক্রসফায়ার তার কাছে জায়েজ, সুন্দরবন রক্ষার দাবি তার কাছে না জায়েজ। যাকে সরকার উন্নয়ন বলবে, সকলকেই তা উন্নয়ন বলতে হবে। ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বাহ্যিক তৎপরতা যেটি দৃশ্যমান, তা লোক দেখানো ব্যাপার। জঙ্গিবাদী মতাদর্শ দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোন ঘটনা ঘটলেই সাম্রাজ্যবাদীরা সহযোগিতার নাম করে ছুটে আসে। অথচ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের প্রধান হোতা মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান, আলকায়েদা, আইএস- এদের তৈরীর পেছনে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। ফলে এদের ও এদের সহযোগিদের ‘ওয়ার অন টেরর’ এর পথে জঙ্গিবাদ দমন হবেনা। এরা যেমন তৈরী করে, আবার সময়ে দমনও করে। সবকিছুর মূলে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ। কলঙ্কেভরা, সন্ত্রাসের হোতারাই আজ জঙ্গি দমনে তৎপর!। সাম্প্রদায়িকতা-অসহিষ্ণুতা যে সামাজিক পরিবেশে তৈরী হচ্ছে, তাকে মোকাবেলা করতে হলে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-নারী সমাজের লড়াই, জাতীয় সম্পদ রক্ষাসহ জন অধিকারের দাবির লড়াই গুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।’।
২২ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত প্রচারপক্ষে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভা, সমাবেশ, জনসভা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে।