ধানসহ কৃষি ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করা এবং হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে ধান কেনার দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-এর উদ্যোগে ২৫মে বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে সমাবেশ ও পরবর্তীতে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য মানস নন্দী, জহিরুল ইসলাম, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “এ বছর সরকারিভাবে প্রতি মণ ধান এক হাজার ৪০ টাকা ও চাল এক হাজার ৫২০ টাকা (প্রতিকেজি ধানের দাম ২৬ টাকা ও চালের কেজি ৩৮ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে ২ মে থেকে সারাদেশে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র ইস্যু না করায় ১৭/১৮ মে-র আগে কোথাও তা শুরু হয়নি। এরপরও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসগুলো প্রধানতঃ মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনছে, ধান কেনা এখনো শুরু করেনি। ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়ে লাভজনক মূল্য পাচ্ছে না চাষীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে ধান-চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অধিকাং স্থানে কাঁচা ধান বাজারে সাড়ে ৪শ-৫শ টাকা মণ ও শুকনো ধান ৬শ-সাড়ে ৬শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “সারাদেশের কৃষকদের ধান বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত ক্রয়কেন্দ্র ও সংরক্ষণের জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে কৃষকরা কম দামে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়া ও চাতাল মালিকের দালালদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিবারই সরকার সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে দেরি করে এবং অল্প ধান কিনে বেশিরভাগ চাল ক্রয় করে। কৃষকরা মহাজনি ঋণ পরিশোধ করার তাগিদে ও সংসার খরচ যোগাড় করতে কম দামে লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আমাদের অধিকাংশ কৃষক বর্গা বা প্রান্তিক চাষী। বেশির ভাগ কৃষকই ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। ক্ষেতের ধান উঠলে তাদের সে ঋণ শোধ করতে তাগাদা দেয় ঋণ প্রদানকারীরা। পাওনাদারদের চাপে অধিকাংশ সময় কৃষকেরা সরকারের ন্যায্য মূল্যের আশায় বসে না থেকে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়ে থাকেন। তাছাড়া, সরকারী খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে ধরতে হয় বিভিন্ন দালাল ও সরকারী দলের নেতাকর্মীদের। এবছর বৃষ্টির কারণে ঠিকমত ধান শুকাতেও পারছেন না কৃষকরা। বিক্রি করার সময় কৃষক দাম পাচ্ছেন না, অথচ ক্রেতাকে বাজার থেকে চাল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ফলে, বাম্পার ফলনের সুফল না কৃষক না ভোক্তা কেউই পাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভবান হয় ব্যবসায়ী, সরকারী দলের নেতা-কর্মী ও আমলারা। সরকারিভাবে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র চালু, সঠিক সময়ে তৎপরতার সাথে ধান সংগ্রহ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে কমিটির মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে ধান কিনতে সরকারকে বাধ্য করতে হলে জোরদার চাষী আান্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”