ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত করে কৃষক বাঁচাতে সরকারী ধান ক্রয় অভিযান অবিলম্বে জোরদার ও বিস্তৃত করা এবং হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবিতে বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্র্রঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি আজ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধন-অবস্থা নসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৬ মে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সীমা দত্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সারাদেশে আজ কৃষকের হাহাকার। বাম্পার ফলন ফলিয়েও ধানের দাম পাচ্ছে না চাষী। দুঃখে-ক্ষোভে ফসলে আগুন পর্যন্ত দিচ্ছে কৃষক। সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ এখনো অনেক স্থানে জেলা-উপজেলায় তা শুরুই হয়নি। ফলে, সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয়মূল্য মণপ্রতি ১০৪০ টাকা হলেও বাস্তবে কৃষকদের কাছ থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কিনছে মণপ্রতি স্থানভেদে ৪০০-৫৫০ টাকায়। সরকারী ক্রয়ের অনুপস্থিতিতে ক্ষুদ্র কৃষকরা এভাবে লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের পক্ষে ধান মজুদ করে রাখা সম্ভব নয়, কারণ একদিকে আয়োজনের অভাব, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ ও সংসার খরচ যোগানোর তাগিদ। আবার চলতি বোরো মৌসুমে সরকার শস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সাড়ে ১২ লাখ টন, এর মধ্যে দেড় লাখ টন মাত্র ধান, বাকী ১১লাখ টনই চাল। অর্থাৎ, কৃষকের কাছ থেকে অল্প ধান কিনে সরকার প্রধানত চাল কিনবে ধানকল মালিক-চাতাল মালিক-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এই মিল মালিকদেরই এজেন্ট হল ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে যেটুকু ধান উপজেলা পর্যায়ের খাদ্যগুদামে কেনা হয় তাও অনেক সময় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হয় না, এই সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এভাবে মিল মালিক-চাল ব্যবসায়ী-দুর্নীতিবাজ প্রশাসন-শাসক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সকলে মিলে এক মধ্যস্বত্তভোগী সি-িকেট নিয়ন্ত্রণ করছে ধান-চালের বাজার। এর ফলে শোষিত হচ্ছে গরিব কৃষক, ভোক্তারাও মূল্যবৃদ্ধির শিকার হচ্ছে।”
বক্তারা আরো বলেন, “এবারের সংকট নতুন নয়, বছরের পর বছর এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বাম্পার ফলনের কৃতিত্ব সরকার নেয়, কিন্তু কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করার কোন উদ্যোগ নেই। বরং, সরকারী নীতি ও কার্যক্রম লুটেরা ব্যবসায়ী-মধ্যস্বত্তভোগী সি-িকেটকেই শক্তিশালী করছে। ‘কৃষক বান্ধব’ বলে নিজেদের দাবি করলেও বাস্তবে সরকার কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, এ ঘটনা থেকে তা পরিস্কার। আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় ঋণখেলাপী ব্যাংক লুটেরাদের রেয়াত দেয়ার জন্য ওকালতি করছে, অন্যদিকে সামান্য ঋণের দায়ে কৃষকদের নামে লক্ষ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা দিচ্ছে। কৃষকদের প্রতিবাদকেও সহ্য করতে পারছে না এই ফ্যাসিবাদী সরকার। তাই মন্ত্রীরা বলছেন, ফসলে আগুন দেয়া সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র। আরো জোরদার আন্দোলন-গণপ্রতিরোধের পথেই কেবল এই গণবিরোধী ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা সম্ভব। গত কিছুদিন ধরে সচেতন ছাত্র ও দেশবাসী যেভাবে কৃষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতার এই সংহতিকে অগ্রসর করে নিতে হবে লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে।”