ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধেও ইউরোপ অমেরিকার সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শ্রমিকদের খাটানো হতো। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমেরিকায় ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হত। অনেকটা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মতো। পুঁজিবাদী বিশ্বের সর্বত্রই প্রায় একই রকম অবস্থা ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবিতে বড় বড় আন্দোলন হয়।
শ্রমিক শ্রেণির অকৃত্রিম বন্ধু, পথপ্রদর্শক মহান কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরেছিলেন। তাঁরা ডাক দিয়েছেন, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। মার্কস-এঙ্গেলস শ্রমিক শ্রেণিকে দেখিয়েছেন তাদের ঐতিহাসিক কর্তব্যের পথ। এরই পথ বেয়ে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলন জোরদার হয়। ১৮৮৬ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের ইনজাংশন অমান্য করে ধর্মঘট করার অপরাধে ১৩শ ধর্মঘটীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে শিকাগোসহ যুক্তরাষ্ট্রের সকল শহরে ও শিল্পাঞ্চলে সফল ধর্মঘট হয়। আমেরিকার বুর্জোয়া প্রেসের তথ্য অনুযায়ীই সেদিন সারাদেশে তিন লাখ চল্লিশ হাজার শ্রমিক মিছিল করেছিল। শুধু শিকাগোতেই মিছিলে অংশ নিয়েছিল আশি হাজার শ্রমিক। পহেলা মে-তে কোনো ধরনের রক্তপাত হয়নি, যদিও পুলিশ ও মালিকের দালালদের উস্কানি ছিল। ৩ ও ৪ মে পুলিশ বিনা কারণে গুলি চালায়। এরপর শুরু হয় চরম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। আমেরিকার বড় বড় বুর্জোয়া কাগজগুলো দাবি করে – ‘প্রত্যেকটি ল্যাম্পপোস্ট কমিউনিস্টদের লাশ দ্বারা সুসজ্জিত করা হোক’। যারা শ্রমিক খুন করল তাদের বিচার হলো না, বিচার হলো শ্রমিক নেতাদের। এ বিচার ছিল প্রহসনমূলক। মিথ্যা অভিযোগে চারজন শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হলো। স্পাইজ, ফিশার, এঞ্জেল ও পার্সনস শ্রমিক শ্রেণির মহান চার বীর নির্ভীক চিত্তে ফাঁসির মঞ্চে জীবন দিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রহসনমূলক বিচার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা ও ইউরোপে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রেডারিখ এঙ্গেলসের নেতৃত্বে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সমিতির প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলো প্যারিসে। উক্ত কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো – শিকাগোর মহান শ্রমিক সংগ্রাম স্মরণে পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর পহেলা মে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসাবে পালিত হবে। তখন থেকেই শ্রমিক শ্রেণি মে দিবস পালন করে আসছে। তাই মে দিবস নিছক আনন্দ-উদযাপন করার দিন নয়। সকল ধরনের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য শপথ গ্রহণের দিন।
শ্রমিকরা আজ কেমন আছে?
মে দিবসে শ্রমিকদের লড়াই এবং জীবনদানের বিনিময়েই মালিকেরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকেরাও মানুষ, তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম বিনোদনের অধিকার আছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিকভাবে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারিত হয়েছিল। শ্রমিকশ্রেণি পেয়েছিল তাদের লড়াইয়ের হাতিয়ার- ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার অধিকার। বিশ্বব্যাপী জোরদার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে বহুদেশে তা বাস্তবায়িতও হয়েছিল। আমাদের দেশেও শ্রমিকশ্রেণির সেসব অধিকার, অন্ততপক্ষে সংবিধানে ও কাগজে-কলমে স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু আজকে যেন গোটা বিশ্ব আবারও উনিশ শতকে ফিরে যাচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় এবং শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে মালিকশ্রেণি আবারও উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। লাগামহীন শোষণ ও লুটপাটের স্বার্থে তারা শ্রমিকশ্রেণির সমস্ত অধিকারকে পায়ে মাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান অবস্থার সাথে দেড়শ বছর পূর্বেকার অবস্থার বড় কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ শুধু শ্রমিকরা নন, যারা বহু বেতনের কর্পোরেট কাজ করেন তারাও ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার পান না। পুঁজিবাদ শ্রমিকের জীবন থেকে স্বাভাবিক বিশ্রাম-বিনোদন কেড়ে নিয়েছে। যে জীবনকে সচল রাখতে জীবিকার প্রয়োজন সেই জীবিকাই খেয়ে ফেলে জীবনের পুরোটা। এদেশে এখনো অধিকাংশ শ্রমিক নিয়োগপত্র, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ওভারটাইম, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বোনাস, লভ্যাংশ কিছুই পায় না। না আছে কারখানায় বা কর্মস্থলে থাকার মতো ব্যারাক-কলোনি, না আছে চিকিৎসা সুবিধা, না পায় রেশন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বৃদ্ধি, শিক্ষা-চিকিৎসার বাড়তি খরচের চাপে সীমিত আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীরা দিশেহারা। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজাতে হাজারো শ্রমিক মরেছিল, কিন্তু আজও কর্মস্থলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নেই, নেই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ। মালিকদের লক্ষ্য মুনাফা, শ্রমিকের জীবন তাদের কাছে মূল্যহীন। আর সরকার মালিকদের ব্যবসার উন্নতির জন্য মনোযোগী; শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তাদের যেন কোনো দায়িত্ব নেই। কোনো আধুনিক ক্ষতিপূরণ আইন সরকার করেনি।
ইনফরমাল সেক্টরের শ্রমিকরা ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার
সর্বাধিক দুর্দশার শিকার অসংগঠিত বা ইনফরমাল সেক্টরের শ্রমিকরা। তারা আজো শ্রম আইনের সুবিধা পায় না। মালিকের মর্জির ওপর তাদের চাকুরি ও পাওনা নির্ভরশীল, সরকারের যেন তাদের বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নেই। ফলে কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, তাঁত শ্রমিক, চাতাল শ্রমিক, ইটভাটা শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, হোটেল শ্রমিক, পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক, রেডিমেড ও অর্ডারি দর্জি শ্রমিক, গৃহকর্মী, নৈশ প্রহরী, রিকশাচালক, কাঠ মিস্ত্রি, হকার, ফেরিওয়ালাসহ কোটি কোটি শ্রমিক আইনী অধিকারবঞ্চিত মানবেতর জীবনযাপন করে। অথচ সরকারি হিসেবে দেশে যত কর্মসংস্থান হয়, এর ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ‘শ্রমশক্তি জরীপ ২০১৬-১৭’ এর হিসাবে দেশে কর্মক্ষম মানুষ (অর্থাৎ ১৫-৬৪ বয়সের) ১০ কোটি ৯১ লাখ। কাজে নিয়োজিত আছে ৬ কোটি ৮ লাখ, বেকার ২৬ লাখ ৮০ হাজার (৪.২%)। কর্মরতদের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৫ কোটি ১৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, আর আনুষ্ঠানিক খাতে ৯১ লাখ। ইনফর্মাল সেক্টরে চাকুরির স্থায়িত্ব যেমন নেই, তেমনি নেই তাদের বেতন, পেনশন, স্বাস্থ্য, বীমা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন ও সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা নেই। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা মাত্র। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রিকশা উচ্ছেদ চলছে। গৃহশ্রমিকরা তো আজ অবধি শ্রমিকের মর্যাদাই আদায় করতে পারেননি।
আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও অনিয়মিত শ্রমের ক্ষেত্রে শিশুশ্রম একটি নিয়মিত ঘটনা। ‘জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩’ অনুযায়ী এদেশে কর্মরত শিশু (৪-১৭ বছর) সাড়ে ৩৪ লাখ, শিশুশ্রমিক (৪-১১ বছর) হিসেবে গণ্য হয় ১৭ লাখ। [সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ১২.৬.২০১৭] দেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় নিয়ামক বিদেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রবাসে ও স্বদেশে ওই শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কোনো ভূমিকা নেই। দেশে দৈনিক ভিত্তিতে ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এই শ্রমিকেরা চাকুরীকালীন আইনানুগ সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। ইদানিং বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর, পোশাক শিল্প, নির্মাণ শিল্পসহ নানাবিধ শিল্পে ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ এবং তাদেরকে যখন-তখন কর্মস্থল থেকে কোনো সার্ভিস বেনিফিট প্রদান না করেই বিদায় করা হচ্ছে। এতে করে শ্রমিকের ভবিষ্যৎ, সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
পোশাক শ্রমিক : সর্বোচ্চ আয়কারী হয়েও তীব্র অবহেলিত
এদেশের সর্ববৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক খাত পোশাকশিল্প। যথাযথ মজুরি না দেওয়া, বাসস্থান, পরিবহন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকা, সাপ্তাহিক ছুটি না দেওয়া, বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় কাজ করানো, মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেওয়া গার্মেন্ট শিল্পের নিয়মিত সমস্যা। আইনে থাকলেও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কোনো শিশুপরিচর্যা কেন্দ্রের ব্যবস্থা না থাকা, আগুন লাগাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পর্যাপ্ত অভাব, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা না থাকাও গার্মেন্ট শ্রমিকদের বড় সমস্যা। বিদেশি ক্রেতা, বিদেশি সামাজিক সংগঠনসহ দেশি নানা সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের গভীর দৃষ্টি রয়েছে গার্মেন্ট খাতের ওপর। তারপরও এখানকার শ্রমিকরা এখনও ট্রেড ইউনিয়ন করার আইনি অধিকার পাননি। সরকার ও মালিকপক্ষের চাপে এই খাতের শ্রমিকরা এই অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮২% আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে। গার্মেন্টস শিল্পের উন্নতি হচ্ছে, রপ্তানি আয় বাড়ছে, অথচ শ্রমিক বেঁচে থাকার মতো মজুরি পায় না। আইএলও কনভেনশনের ১৩১ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘সর্বনিম্ন মজুরি অবশ্যই আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।’ সরকার নিযুক্ত নিম্নতম মজুরি কমিশন ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করার পেছনে জীবনযাত্রার খরচ, শ্রমিকের এবং তার পরিবারের চাহিদা, উৎপাদনের খরচ, উৎপাদনশীলতা, পণ্যের দাম, নিয়োগকারীদের ক্ষমতা, দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতির হার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে থাকে। এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে – বর্তমান বাজারে মানুষের মতো বাঁচতে হলে নিম্নতম মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা (বেসিক মজুরি ১০০০০ টাকা, ৪০% বাড়িভাড়া ৪০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫৭০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৭৮০ টাকা, টিফিন ভাতা ৬৫০ টাকা) দিতে হবে। এ দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের সর্বনি¤œ বেতন নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১৫,২৫০ টাকা। শ্রমিকরা এর চাইতে কম পেতে পারে না। বাংলাদেশে সর্বনিম্ন মজুরি ৫,৩০০ টাকা অন্যান্য সকল গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক দেশের চেয়ে অনেক কম।
শ্রমশোষণের মানবিক মুখোশ ‘সি এস আর’
কর্পোরেট পুঁজির শোষণকে আড়াল করার জন্য আপাতদৃষ্টিতে এই শোষণের একটা মানবিক মুখোশ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেই চেষ্টার একটি পোশাকী নাম তারা বের করেছে ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ (সি এস আর) বা পুঁজির সামাজিক দায়বদ্ধতা। এই সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের মাধ্যমে সমাজের বা রাষ্ট্রের হেন দিক নেই যেখানে পুঁজি তার খুদকুঁড়ো ছিটাচ্ছে না। আমাদের জাতীয় পতাকা বা জাতীয় সঙ্গীতের গিনেস বুকে নাম উঠানোর কর্মসূচি বা ক্রিকেটের স্পন্সর, সবখানে কর্পোরেট পুঁজির টাকা যাচ্ছে। খুব মার্জিতভাবে হাত খুলে দান-দক্ষিণা করছে, ভদ্রতার মুখোশ পরে জনকল্যাণ কর্মসূচির নামে সংগঠন বা ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের অধীনে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারীর জীবন মান উন্নয়নে বা তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার এই দানশীল পুঁজির মালিকেরা কখনও মেনে নেয় না।
উন্নয়নের তীব্র শোরগোল প্রতিদিন যেন উপহাস করছে সাধারণ মানুষকে। মধ্যম আয়ের দেশ, ১৬১০ ডলার মাথাপিছু আয় – এসব বুলির সাথে মানুষ তার জীবনের সঙ্গতি খুঁজে পায় না। এ সমাজে শ্রমিক যেমন বাঁচার মতো মজুরি পায় না, কৃষকও পায় না ফসলের দাম। গরিব সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে শিক্ষা-চিকিৎসার সুযোগ। অন্যদিকে চুরি-দুর্নীতি লুটপাটের মধ্য দিয়ে সমাজের ক্ষুদ্র অংশের হাতে জমা হচ্ছে অঢেল সম্পদ। গত ১০ বছরে এরা দেশ থেকে পাচার করেছে ৬ লক্ষ কোটি টাকা। সমাজ জুড়ে আজ এই মালিকদেরই দাপট। রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও তারাই। মালিকী এ ব্যবস্থা ও রাজনীতির বদল ছাড়া শ্রমিকসহ কারো জীবনেই মুক্তি আসবে না।
সভ্যতার কারিগর শ্রমিকশ্রেণি, কিন্তু নামমাত্র মজুরি ছাড়া উৎপাদনের সুফল তারা পায় না। ১৮৪৮ সালেই মহামতি মার্কস-এঙ্গেলস দেখিয়েছিলেন – পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদনযন্ত্রের মালিকানা পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে থাকার কারণে উদ্বৃত্ত সম্পদের সিংহভাগ তারাই ভোগ করে। মালিকরা পুঁজির জোরে রাষ্ট্র চালায়, আইন-পুলিশ-বিচারবিভাগ সবকিছু তাদের হাতে। ফলে এই শোষণমূলক সমাজে শ্রমিকের পরিপূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য চাই সমাজতন্ত্র, যেখানে উৎপাদনযন্ত্রের ওপর ব্যক্তির পরিবর্তে সামাজিক মালিকানা কায়েম এবং সম্পদের সুষম বণ্টন হবে। মে দিবসের রক্তেভেজা ইতিহাস সেই লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে।