টিপাই মুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় কর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখা ৬ জুন ’১৫ বিকাল ৩ টায় নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। মিছিলটি সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েবের সভাপতিত্বে এবং মুখলেছুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য সুশান্ত সিনহা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াৎ আহমেদ, শাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক অনীক ধর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’দেশের সুসর্ম্পকের কথা বলে আজ এদেশে আসলেও বাস্তবে বাংলাদেশের স্বার্থ বিপন্ন হবে। দীর্ঘ দিন থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানে ভারতের টিপাই মুখ নামক স্থানে বাধঁ নির্মানের আয়োজন করে সিলেট অঞ্চলের প্রাণ ও প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে ভারতীয় শাসক গোষ্ঠি। আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভারত সরকার একতরফা ভাবে টিপাই বাঁধ নির্মাণের সকল আয়োজন নিশ্চিত করতে চাইছে। অথচ দু’দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের মুখে এখন পর্যন্ত টিপাই বাঁধের সম্পূর্ণ আয়োজন নিশ্চিত করতে পারে নি। তাই টিপাই বাধঁ নির্মান প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ভারত সরকারের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করতে হবে। শুধু কি টিপাই বাধঁ, ইতিমধ্যে ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর মধ্যে সারি,যদুকাটাসহ ৫১টি নদীর উজানে বাধঁ নির্মাণ করেছে ভারত সরকার। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর পানি প্রত্যাহার,এমনকি বাংলাদেশের মানুষের জীবন মরণের সমস্যা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাও বাংলাদেশ পাচ্ছে না।
অপর দিকে, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সীমান্ত ও ছিট মহল সম্যস্যা সমাধাণ করে আজ বাহবা নিচ্ছে মহাজোট সরকার,কিন্তু এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে চুক্তি হয়েছিল আর বি.এস.এফ কর্তৃক সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যা তো নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এর বিনিময়ে এখন ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে পন্য এবং সৈন্য যাতায়াতের জন্যে করিডোর সুবিধা চাচ্ছে, যা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। আবার আমাদের দেশের শাসক গোষ্ঠি রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পরিকল্পীতভাবে ধ্বংস করে দিয়ে বিদ্যুতের জন্যে ভারতের কাছে মুখাপেক্ষী হচ্ছে,ইতিমধ্যে ভারতের স্বার্থে সুন্দরবন ধ্বংস করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অপতৎপরতায় তারা লিপ্ত। বিদ্যুৎখাতে ভারতের কাছে এই আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের সামগ্রীক উন্নয়নের জন্যে মারাত্বক হুমকি স্বরূপ। আর বৈষম্যমূলক বানিজ্যীক নীতি বহাল রেখে দু’টি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক কখনই তৈরি হবে না।
এ সব কিছু ছাপিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারত সরকার সর্বাত্বক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর। গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন ও জনসমর্থনহীন মহজোট সরকারের প্রতি ভারতের নির্লজ্জ সমর্থন গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানুষকে হতবাক করেছে। বক্তরা তাই জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মাধ্যমে বংলাদেশের শাসক গোষ্ঠির নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অপতৎপরতা প্রতিহত করার আহবান জানান।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পুলিশি হয়রানী এবং গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান নেতৃবৃন্দ। পুলিশ ঢাকার সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা রেবতী বর্মণ তমা এবং সাইমা ইসলামকে।নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের এই নগ্ন আক্রমণ প্রমাণ করে দেশে আজ চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।