Tuesday, December 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদনারী নির্যাতন ও নারী শিশু পাচার বন্ধ এবং মৌলবাদ- সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে নারী...

নারী নির্যাতন ও নারী শিশু পাচার বন্ধ এবং মৌলবাদ- সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে নারী সমাবেশ ও মিছিল

রংপুর নারীমুক্তি ২৪ আগষ্ট ২০১৪

অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, নারী নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার বন্ধ এবং মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও দিনাজপুরসহ ১৬টি জেলায় ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ২৪ আগষ্ট ’১৪ রংপুরে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে অনুষ্ঠিত হয় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় বিশাল মিছিল ও নারী সমাবেশ। বেলা ১২টায় পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ থেকে শুরু হওয়া নারীদের এই বিশাল মিছিল পৌরবাজার-পায়রা চত্বর-জাহাজ কোম্পানী মোড়-প্রেসক্লাব ও গ্রান্ড হোটেল মোড় হয়ে পুনরায় পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশ বেলা ৩টায় টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন এবং সভা পরিচালনা করেন রংপুর জেরা শাখার সভাপতি প্রভাষক আরশেদা খানম লিজু। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাসদ-কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ-কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ নারমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস পপি।

10628088_535118389923094_2529948430957244897_nসমাবেশে প্রধান বক্তা কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন- নারী সমাজের উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার যে ভয়ংকর রূপ আমরা দেখছি তা চূড়ান্তভাবে অবক্ষয়ী-বৈষম্যমূলক পূঁজিবাদী ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। এ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নারী নিগ্রহের মাত্রাই শুধু বাড়াবে না, সমাজেও নিদারুণ সাংস্কৃতিক সংকট ডেকে আনবে। ফলে সকল প্রকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সহ নারীমুক্তি আন্দোলন আজ সমাজপ্রগতির সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এ আন্দোলনে প্রগতিশীল বিবেকবান মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। কমরেড মুবিনুল হায়দার আরো বলেন- ইতিহাসের দীর্ঘ অতীত যেমন একদিকে নারী জীবনের অপমান, অবমাননা ও লাঞ্চনার ঘটনায় পূর্ণ, অন্যদিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাঁচার আকুতিভরা লড়াইয়ের প্রচেষ্টা। কিন্তু সঠিক দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবে নারীর বৈষম্যহীণ গণতান্ত্রিক অধিকার তথা মর্যাদাপূর্ণ জীবন এখনো সূদুর পরাহত। শোষণ মুক্তির চেতনায় নারী আন্দোলন সংগঠিত করা ছাড়া নারী মুক্তি অসম্ভব। সুতরাং নারী নির্যাতন বিরোধী সকল আন্দোলনকে আজ শোষণমুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন- আজ থেকে ১৯ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট ইয়াসমিন নামক কিশোরী পুলিশ গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এই ঘটনায় দিনাজপুরে সৃষ্টি হয়েছি এক গণঅভ্যূত্থান মূলক পরিস্থিতির। গণআন্দোলনের চাপে সেদিন প্রশাসন অচল হয়েছিল, ফাঁসি হয়েছিল তিন পুলিশ সদস্যের। সেই আন্দোলন ইতিহাসে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ঘোষিত হয়। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এই দিবসে অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা ও নারী নির্যাতন, নারী শিশু পাচার বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করেছে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন- অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, নারীর প্রতি সহিংসতা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে নারী সমাজ ও দেশবাসী আতংকগ্রস্থ। মোবাইল ফোনে ছবি ডাউনলোড, পর্ণো পত্রিকা, নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে করে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র এই অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে কিশোর-তরুণ-তরুণী যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে। যে তরুণ যুবশক্তি দেশে ভবিষ্যৎ তারাই এই সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের শিকার। অন্যদিকে মাদক-জুয়ার আসর চলছে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে। মাদক সেবনকারী ৭০ শতাংশই কিশোর-কিশোরী। অথচ সরকার নির্বিকার। কারণ যুবসমাজকে যদি মাদকে নিমজ্জিত রাখা যায়, তাহলে কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না। ফলে পরিকল্পিতভাবে সরকারের প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে এই মাদক সর্বত্র ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
10612632_535120483256218_7205601513482990095_nআর একটি বিষয় হল জুয়ার আসর। এই জুয়ার আসরে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও যুক্ত। জুয়ার ফলে নিঃস্ব হয় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। অর্থাৎ এই অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা ও মাদক-জুয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি নিগৃহিত ও নির্যাতনের শিকার হয় নারীরা। সেজন্য বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এসবের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান করছে।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, শুধু রংপুর জেলা বদরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ১২ জন। যার মধ্যে ৮ জনই শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ৯৮ জন। যারমধ্যে ৪৯জনই ছাত্রী। শুধু রংপুরেই নয় গাইবান্ধায় একের পর এক নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। সেখানে রিক্তা হত্যার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। রিক্তা ছাড়াও আরও ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ধর্ষণ ও গণধর্ষণের সাথে যুক্ত শাসক-বুর্জোয়া দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে পুষ্ট সন্ত্রাসীরা।
এক্ষেত্রে বর্তমান শাসক দলের ভূমিকা প্রধান। তাই আন্দোলনের ফলে আসামী গ্রেফতার হলেও সরকারের ছত্রছায়ায় তারা ছাড়া পেয়ে যায়। শুধু রংপুর-গাইবান্ধ নয়, নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ সারা বাংলাদেশে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অভাবে নারীর প্রতি এই সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সকল বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব। আর মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা চিন্তার ফলে সমাজের মনন কাঠামোয় নারীদের সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে নেতৃবৃন্দ রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

সমাবেশে সভাপতি অশ্লিলতা অপকসং®কৃত মাদক জুয়া, নারী নির্যাতন, নারী পাচার বন্ধ এবং মৌলবাদ সম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

১। ১৫-২১ অক্টোবর ২০১৪ রংপুর রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলায় সপ্তাহ ব্যাপী অপসংস্কৃতি অশ্লীলতা বিরোধী অভিযান এবং জনসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করা হবে।

২। ২১ অক্টোবর ২০১৪ জনসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি শেষে প্রতিটি জেলা উপজেলায় একযোগে একই সময়ে অশ্লীল পোস্টারে কালিলেপন, অপসারণ ও অগ্সংযোগ করা হবে।

উল্লেখিত কর্মসূচির পর প্রশাসন যদি অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি মাদক, জুয়া, আশ্লীল নৃত্য বন্ধে কার্যকর আইনি উদ্যোগে গ্রহণ না করে তাহলে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহন করবে। সেই আন্দোলন-সংগ্রামে সকলকে অংশগ্রহনের আহ্বান জানিয়ে সভাপতি সমাবেশ সমাপ্ত করেন।

চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের আহবান-

দেশব্যাপী অব্যাহত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন

10616693_10202592744843133_5389698860639461935_nবাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র উদ্যোগে “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস” উপলক্ষে নিউমার্কেট চত্বরে বিকাল ৫টায় এক মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি পপি চাকমার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তার, সহ. সাধারণ সম্পাদক পূরবী চক্রবর্তী। সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ সালে ২৪ আগষ্ট দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিকে পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে দিনাজপুরের সংগ্রামী জনতা গর্জে উঠেছিল । সেদিন প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৭ জন সংগ্রামী ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। দেশব্যাপী এ ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। নারী সমাজ এ দিনটিকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস” ঘোষনা করে। সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিবছর বিশেষ তাৎপর্যের সাথে এই দিবসটি পালন করে। আমরা মনে করি ২০ বছর আগে ইয়াসমিনকে পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। কিন্তু আজও নার ীদের উপর ধর্ষণ, হত্যা , অপহরণ, এসিড নিক্ষেপের চিত্র ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি নারী নির্যাতনের চিত্র জাতীয় পত্রিকায় উঠে এসেছে। ২০১৩ সালে শুধুমাত্র নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮১৭টি আর ২০১৪ সালে ৩০৯ জন নারী। নারী নির্যাতনের এই চিত্র দেখে বুঝা যায় নারী সমাজ আজ কতটা নিরাপত্তাহীনতায় জীবন যাপন করছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ঘরে বাইরে নারী আজ কোথাও নিরাপদ নয়। সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপনে নারীদের উপস্থাপন করা হচেছ ভোগ্য পণ্য হিসেবে। সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম ক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্পে শতকরা ৮০% নারী কাজ করে। অর্থনীতিতে অন্যতম ভূমিকা রাখলেও নারী শ্রমিকরা পায়না নায্য মজুরি, পায়না কার্যক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ। তাই নেতৃবৃন্দ বলেন , নারীদের এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রামের মাধ্যমে সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবব্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে ঢাকায় সমাবেশ ও মিছিল

10636293_10152613653354004_6053493331883262041_nবাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে আজ ২৪ আগস্ট বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নগর শাখার সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তাসলিমা নাজনীন সুরভী, তাসলিমা আক্তার বিউটি, ফারহিন ইসলাম সোমা।
তোপখানা রোড থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশের পর পুনরায় একটি মিছিল হাইকোর্ট মোড় ঘুরে তোপখানা রোডে এসে শেষ হয়।

বগুড়ায় নারীমুক্তি কেন্দ্রের মিছিল
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে বগুড়ায় নারীমুক্তি কেন্দ্রের মিছিল
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments