বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ এক বিবৃতিতে খুলনায় আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিক নেতা অলিয়ার রহমান ও নূর ইসলামকে আটক ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রায়াত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে শ্রমিকরা কর্মচ্যুত হয়েছে। আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় আন্দোলনে নামে। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে উল্টো ভয়-ভীতি ছড়িয়ে ও গ্রেফতারের মাধ্যমে আন্দোলন দমনের পথ বেছে নিয়েছে। এর আগেও এই পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন-অনশন করেছে, অনশনে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করেছে। তারপরও তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর এখন সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের পথে বসিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সমস্ত পাটকলগুলোকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “৯০-এর দশকের সময় থেকে সরকার উদারীকরণ নীতির আওতায় একের পর এক রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প কারখানা বেসরকারিকরণ করেছে। তার অংশ হিসাবে পাটকলও বেসরকারিকরণ শুরু হয়। কিন্তু অন্যদিকে ব্যক্তি মালিকানায় পাটকল গড়ে উঠতে থাকে। বেসরকারি পাটকলগুলোর বাজার সুবিধা দিতেই রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা হয়নি কিন্তু এখন লোকসানের সমস্ত দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। এইভাবে বেসরকারিকরণের মাধ্যমে এদেশে পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করছে সরকার।”
বিবৃতি তিনি আরো বলেন, “সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদ বেসরকারিকরণের মধ্য দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।এর ফলে শ্রমিক ছাঁটাই, মজুরি হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনজীবনে চাপ বাড়ছে, মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শ্রমিকদের উপর। দিশেহারা শ্রমিকরা যখন বাঁচার তাগিদে রাস্তায় নেমে এসেছে, তখন তাদের উপর নেমে আসছে নিপীড়ন। ভয়-ভীতি ও গ্রেফতারের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করতে চাইছে। এটা সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণেরই নগ্ন প্রকাশ।”
তিনি শ্রমিকসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায়, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল ও গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে দেশের জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।