সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ২২ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র সমাবেশ শেষে পাঠ্যপুস্তকের লেখা বিকৃতি, লৈঙ্গিকবৈষম্য, সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু অর্ন্তভুক্তির প্রতিবাদে মিছিল সহকারে স্মারকলিপি শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, দপ্তর সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে এবছর যে নজিরবিহীন ভুল হয়েছে তা শুধু সরকারের বা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার প্রকাশই নয়, এই ঘটনা সরকারের মদদপুষ্ট। হেফাজতের দাবি অনুসারে পাঠ্যপুস্তকে লেখা বাতিল এবং সংযোজনই প্রমাণ করে এতে সরকারও জড়িত। এভাবে হেফাজতের সাথে আপোষ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে মধ্যযুগীয় অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। মুখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেও বাস্তবে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের আদর্শিক জমিন তৈরি করে দিচ্ছে। সে কারণেই প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে ধর্মীয় ভাবধারার লেখা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে। যে সমস্ত মহান সাহিত্যিকরা একসময় সামন্তীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মশাল জ্বেলেছেন তাদের লেখা বাদ দিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক চেহারা উন্মোচিত হয়েছে।’
তারা আরো বলেন, ‘ শুধু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক নয়, গোটা শিক্ষাক্ষেত্রেই ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে। সংবিধানে সর্বজনীন এবং একই পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এদেশে আজও শিক্ষা সর্বজনীন নয়। বরং শিক্ষাকে দিন দিন পণ্য করে তোলা হয়েছে। এভাবে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সর্বস্তরে ব্যয়বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শিক্ষা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্মূল্যে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বহু ধারায় বিভক্ত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভক্ত মন নিয়ে বেড়ে উঠছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষণে জর্জরিত মানুষের প্রতিবাদের শক্তি যেন গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য শাসকশ্রেণী শিক্ষাব্যবস্থাকে এভাবেই গড়ে তুলেছে ও পরিচালিত করছে। এই অবস্থার অবসানের জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার সংগ্রাম অপরিহার্য। এ লক্ষেই ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশে একটি ‘সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা’ গড়ে তোলার সংগ্রামে নিয়োজিত।’
বক্তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীদের আগামীদিনের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।