সম্প্রতি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজকে জাতীয়করণের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেঠা ও গুলিতে শিক্ষক ও এক পথচারী নিহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে সাংসদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার দগদগে স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি দেশের মানুষ। সেই স্মৃতি অপসৃত হওয়ার আগেই এবার খোদ রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর হাতে নিহত হল এক শিক্ষকসহ দু’জন ব্যক্তি। রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির এই হল পুরস্কার! সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা স্বচ্ছল জীবনের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও যে শিক্ষকেরা মানুষ গড়ে তোলার দায়িত্ব কাধেঁ নিয়েছেন এই হল তাদের পাওনা! ছাত্র ও শিক্ষকদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া- সরকারের ফ্যাসিবাদী রূপেরই বহিঃপ্রকাশ। সরকারের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে অনার্স পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষাদানের কথা থাকলেও শিক্ষাকে বেসরকারীকরণের প্রধান ধারাই বহাল আছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের নজিরবিহীন দুর্নীতি আর প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের কারণেই আজ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। পুলিশি হামলায় আন্দোলনরত একজন শিক্ষক নিহত, সাধারণ মানুষসহ অসংখ্য আহত হওয়ার পরও পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
বাস্তব ঘটনা হলো, সরকার ২৩টি কলেজকে জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত করে। এর মধ্যে সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা ফুলবাড়িয়া কলেজকে বাদ দিয়ে এমপিওবিহীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজকে (ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়া কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার মানুষ বলছেন, সব দিক দিয়েই ফুলবাড়িয়া কলেজটি এগিয়ে থাকলেও তুলনামূলকভাবে সব দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা কলেজকে জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে তাঁরা প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছেন। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩০০ এবং এখানে সাতটি বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়। অন্যদিকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০। ১৯৯৯ সালে কলেজটি সাংসদ মোসলেম উদ্দিনের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল। ২০০৯ সালে কলেজটির নাম পাল্টে রাখা হয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সাংসদের কারণেই ফুলবাড়িয়া কলেজটি জাতীয়করণ হয়নি। এই অভিযোগে আন্দোলনকারীরা দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছে। প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর স্বার্থে আন্দোলনকে নস্যাৎ করতেই এই হত্যা হামলা ও গুলি চালানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ নভেম্বর দুপুর ১ টায় জেলার ফুলবাড়িয়া কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখা মানববন্ধন করেছে। বাকৃবি শাখা সাধারণ সম্পাদক গৌতম করের সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি জুনায়েদ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ, আরিফুল হাসান, মাগফুরা জেরিন, রিয়াদ হাসান।
ঢাকা : শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে একই দিন সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, গোবিন্দ দাস খোকন মোহন্ত, তৌফিকা লিজা প্রমুখ।
সিলেট : সিলেটে নগর শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াত আহমেদ। মিজানুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন মোখলেছুর রহমান, এ্যাডভোকেট উজ্জল রায়, শিক্ষক ফজলে রহমান চৌধুরী, অপু কুমার দাশ , রুবেল মিয়া , সাদিয়া নোশিন তাসনিম।
খাগড়াছড়ি : এদিকে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ও বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সংগঠক কবির হোসেন, অরিন্দম কৃষ্ণ প্রমুখ।