তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ’ সুন্দরবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত ৩রা মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনধ্বংসী বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আবারো বিষোদগার করেছেন। তিনি একই সঙ্গে অনেকগুলো ভূল তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আন্দোলনকারীরা কেবলমাত্র ভারতের কারণেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতা করছে। আমরা বার বার বলেছি, যেসব প্রকল্প সুন্দরবনের জন্য ধ্বংসকারি তা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এমনকি যদি বাংলাদেশের কোন কোম্পানিরও হয় আমরা তার প্রবল বিরোধী। তিনি বলেছেন আন্দোলনকারীরা মানুষকে রক্ষা না করে কেবল পশু-পাখি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে। যে কোন সুস্থ মানুষই জানেন যে, সুন্দরবন শুধু যে অমূল্য অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ তাই নয় এটি রক্ষার সাথে কোটি কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা জড়িত। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করে। সুন্দরবন না থাকলে বাংলাদেশই অরক্ষিত হয়ে পড়বে। শুধুমাত্র ভারতের এনটিপিসি ও বাংলাদেশের ওরিয়ন কোম্পানির বিদ্যুৎ প্রকল্পই নয়, সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ আরো অনেক ধরনের অপতৎপরতা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। সাইলো, সিমেন্ট কারখানা, ভূমি দস্যুদের তৎপরতা ছাড়াও সরকার এখন সুন্দরবনের কাছে বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের তৎপরতা দেখে মনে হয় সুন্দরবনের গুরুত্ব বুঝতে তারা পুরোপুরিই অক্ষম।
ভুল তথ্য অস্বচ্ছতা এবং জবরদস্তি করে উন্নয়নের নামে, বিদ্যুতের নামে এমন সব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে যা দেশকে এক ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে আরো লক্ষ করছি যে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সব আলোচনার পথ বন্ধ করে, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করে সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। অন্য দিকে স্থলভাগের গ্যাস সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সব আয়োজন করছে সরকার।
অথচ দেশের স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাসসম্পদে শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে উত্তোলন করলে বাংলাদেশ পরিবেশসম্মতভাবে ও সুলভে বিদ্যুতের যোগান দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু এরজন্য জাতীয় সংস্থার সুযোগ ও দক্ষতা বৃদ্ধির পথে না গিয়ে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে সম্পদ ও কর্তৃত্ব; আর বিদ্যুতের সংকটের কথা বলে কমিশনভোগী ভয়াবহ তৎপরতায় পুরো দেশকে বহুমুখী সংকটে নিক্ষেপ করছে। জনস্বার্থ ও দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ উপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠির স্বার্থে পরিচালিত সরকারের এসব তৎপরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা অবিলম্বে দেশবিরোধী সর্বনাশা সব তৎপরতা বন্ধ করবার দাবি জানাই।