শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে অগণতান্ত্রিক শিক্ষা আইন ২০১৬ বাতিলের দাবিতে আজ দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে কলাভবন, বাণিজ্য অনুষদ ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা ও সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “গত ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন করে। সেই সময়ই আমরা বলেছিলাম এই শিক্ষানীতি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণকে ত্বরান্বিত করবে। গত কয়েক বছরে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কয়েক গুণ ফি বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আমাদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। সেই শিক্ষানীতির উপর ভিত্তি করেই সরকার এবার শিক্ষা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে এই আইনেও ছাত্রস্বার্র্থবিরোধী অনেক বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তাই আমরা শিক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকারহরণকারী এই শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি করছি।”
বক্তারা বলেন, “শিক্ষা আইনে একদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক’ শিক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে অন্যদিকে আবার ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়ার বিধানও রেখেছে। যা সংবিধান প্রতিশ্রুত শিক্ষার সার্বজনীন অধিকারের পরিপন্থী। স্বঘোষিত সংবিধান রক্ষাকারী সরকার এভাবে নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করছে। সংবিধানে একই পদ্ধতির শিক্ষার কথা বলা হলেও বিগত শিক্ষানীতির মতই বর্তমান শিক্ষা আইনেও তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তিনধারায় বিভক্ত এ শিক্ষাব্যবস্থা যেমন বৈষম্য তৈরি করছে তেমনি দেশে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাকেই পরিপুষ্ট করছে। আজকে মৌলবাদীরাও হিন্দুত্ববাদের ধুয়া তুলে এই শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি করছে। তাদের দাবি মানলে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ মহান সাহিত্যিকের রচনা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে। যারা বাঙলা ভাষা ও কৃষ্টির রূপকার, এদেশের মানুষকে আধুনিক গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচয় করিয়েছেন, সভ্যতার অগ্রগতিকে সচল করেছেন তাদের সৃষ্টি ও উত্তরাধিকার বাদ দিয়ে মানুষকে আবার পশ্চাদপদ জীবনের দিকে ঠেলে চায় মৌলবাদীরা। ফলে মৌলবাদীরা যে কারণে এই দাবি করছে তাদের সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।”
বক্তারা আরও বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের বিধান রাখা হয়েছে। যা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে। যদিও এই প্রক্রিয়া চলমান কিন্তু আইনসঙ্গত হওয়ার ফলে এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ। বাস্তবে এই শিক্ষা আইন শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে শিক্ষার অধিকার আরও হরণ করবে। তেমনি বিদ্যমান শিক্ষার সংকটও দূরীভূত হবে না। শিক্ষা আইনে শিক্ষার সংকট দূরীকরণে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনায় সরকারের করণীয় কি সে বিষয়টি সযতেœ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নোট বা গাইড বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও লঘু দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্নীতে আকন্ঠ নিমজ্জিত প্রশাসনে এটাও কার্যকরী হবে কি’না সেটা সংশয়ের উর্দ্ধে নয়। সর্বোপরি এই শিক্ষা আইনে এদেশের ছাত্রসমাজের আকাক্সক্ষার কোন প্রতিফলন নেই। শিক্ষার সংকট নিরসনে কার্যকর কোন প্রস্তাবনা নেই। তাই অবিলম্বে শিক্ষার অধিকার হরণের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ও এর উপর ভিত্তি করে প্রণীত শিক্ষা আইন বাতিল করতে হবে।”