Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনে যাচ্ছে

ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনে যাচ্ছে

SONY DSC

ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর কচুরীপানা পরিস্কার ও মাছ পানি-পরিবেশ রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানিয়েছে মৎস্যজীবীরা। এতে, অনতিবিলম্বে দাবী মানা না হলে সংগ্রাম পরিষদ নেতারা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদানসহ ৬ দফা কর্মসূচী পালন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ২৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুরে ফরদিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ এসব কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এ সময় বাসদ, কনভেনশন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে, মৎস্যজীবি সংগ্রাম পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্লুইচ গেট চালু হবার পর থেকে প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত বিপুল পরিমাণ কচুরী পানা নদী গর্ভে পতিত হয়। স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা না থাকায় এবং নদীর অসংখ্য বাঁক ও কাটাখালী লোহার ব্রিজটির কারণে কচুরী-পানা আটকা পড়ে জমাট বাঁধা কচুরী পানার পচন শুরু হয়। এর ফলে, গোটা নদীর পানি দূষিত হয়ে মাছের মড়ক শুরু হয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপযর্য়ের ফলে শুধু, মৎস্যজীবীরাই নয়, পুরো জীব বৈচিত্রসহ নদীর দুই তীরের জনসাধারণও মারাত্বকভাবে ক্ষতির শিকার হন। কচুরী-পানা পচনের ফলে গত প্রায় ১৫ দিন যাবৎ চতুর্দিকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং পানি দূষণের ফলে শত শত মাছ মরে ভেসে উঠছে। ফলে, মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নদী ও এর থেকে বের হওয়া অসংখ্য খাল পাড়ের মানুষ।
সংগ্রাম পরিষদ নেতা আরও বলেন, ডাকাতিয়া নদী থেকে কোন মাছ বেরিয়ে যায় না বরং হাজীমারা স্লুইচ গেট ওপেন করলে প্রচুর মাছ প্রবেশ করে। এছাড়া প্রায় ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ নদীতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়। ডাকাতিয়া নদীকে কচুরীপানা মুক্ত রাখা গেলে মাছ উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যাবে। এর ফলে শুধু মৎস্যজীবি এবং দুই তীরের জনগণই উপকৃত হবে না, এই অঞ্চলের আমিষের চাহিদা পূরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।
কচুরী পানা পরিস্কার রাখার এবং মাছ পানি পরিবেশ রক্ষা করা শুধু মৎস্যজীবি ও দুই তীরের জনগণের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ সরকারী উদ্যোগ। জনগনের এই সম্পদ রক্ষায় সরকারীভাবে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে মৎস্যজীবি ও দুই তীরের জনগণের সহযোগিতা নিয়ে কচুরী পানা পরিষ্কার করে মাছ পরিবেশ রক্ষা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীর কচুরীপানা পরিস্কার করে মাছ পানি পরিবেশ রক্ষার দাবীতে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, সংগ্রাম পরিষদ প্রচার পক্ষসহ ১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত কর্মসূচী ঘোষণা করছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মেঘনার শাখা হিসাবে খ্যাত ডাকাতিয়া মেঘনা থেকে উৎপত্তি হয়ে আবার মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এক সময়ের উত্তাল, খরস্রোতা এ নদী কালের প্রবাহে এবং সেচ প্রকল্পের কারণে এখন মৃত প্রায়। প্রায় ৭০/৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়ার দুই তৃতীয়াংশ ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ডাকাতিয়ার দুই তীরে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ ও হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি পরিবার আবাহমান কাল থেকে ঝাক, জাল, বড়শী নানা উপায়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ডাকাতিয়া নদী দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প (সি.আই.পি) বাঁধের ভিতর পানি সেচ কাজে ব্যবহার হওয়া ছাড়াও, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।
৬০ এর দশকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও, তাহা সম্পন্ন ও পুরোদমে সেচ কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। সেই থেকে প্রাকৃতিক ভাবে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার প্রবহ বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরই সুবিধা ও মুনাফালোভী ব্যক্তিরা কৃত্রিমভাবে বদ্ধ ডাকাতিয়া কৃত্রিম বাঁধ সৃষ্টি করে নদী ইজারার নামে মাছ চাষ জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের উচ্ছেদের চক্রান্ত শুরু করে। এমন এক পটভূমিতে গড়ে ওঠে মৎসজীবি সংগ্রাম পরিষদ। অব্যাহত এক অবৈধ ইজারার বিরুদ্ধে মৎসজীবি সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিক্ষোভ, ঘেরাও, মৎস্যজীবি ধর্মঘটের ফলে শেষ পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ ডাকবাংলোর পাশ থেকে রুমুর খালের মুখ পর্যন্ত উন্মুক্ত নদীর অবৈধ ইজারা বাতিল করতে কর্র্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। আন্দোলনের ফলে মুনাফা লোভী চক্র পিচু হটলেও, মৎস্যজীবিরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। কারণ, নদী বেহাত হলে শুধু মৎসজীবিরাই দুর্দশায় পতিত হবে না। এর ফলে নদী তীরের জনগণও নদী ব্যবহারের সমস্ত অধিকার হারাবে এবং কর্মহীন হবে হাজার হাজার মানুষ, সৃষ্টি হবে অপরাধ ও সামাজিক সংকট।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সহসভাপতি অনিল চন্দ্র দাস, তাজুল ইসলাম গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম কুট্টি, শুরেশ চন্দ্র দাস, আরব আলী, মুসলিম মিয়া, বাচ্চু মিয়া, শীতল চন্দ্র দাস, নূর হোসেন, জল হক, সুখ রঞ্জন বর্মন, চিত্ত বর্মন, মোফাজ্জল, আ. মালেক, রণজিৎ চন্দ্র দাস, সিরাজুল ইসলাম, মোবারক হোসেন, মিজানুর রহমান প্রমূখ।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments