Wednesday, November 20, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধফিদেল ক্যাস্ত্রো ও কিউবা

ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও কিউবা

(গত ২৫ নভেম্বর ’১৬ কিউবা বিপ্লবের রূপকার ফিদেল ক্যাস্ট্রো ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সারা দুনিয়ার লক্ষ-কোটি নিপীড়িত সাধারণ মানুষকে চোখের জলে ভাসিয়ে তাঁর এই বিদায় কেবল বিয়োগান্তক ঘটনা নয়, অফুরান অনুপ্রেরণারও উৎস। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে মোকাবেলা করে মহান সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে তিনি যেভাবে কিউবাকে একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন, তা আগামী দিনেও মুক্তিসংগ্রামকে পথ দেখাবে। মহান এই বিপ্লবী চরিত্রকে স্মরণ করে আমরা এই লেখাটি প্রকাশ করলাম।)

Fidelএমন কোনো দেশের কথা কি কেউ কল্পনা করতে পারে যেখানে একজন মানুষও অনাহারে-দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে— বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করে না? খোলা আকাশের নিচে কি ফুটপাতে কি বস্তিতে একজন মানুষকেও দিনাতিপাত করতে হয় না? যে দেশে নিরক্ষরতার অভিশাপে মানুষের জীবন ভারবাহী জীবের মতো নয়? অনেকের ভাবনায়, এমন দৃশ্য শুধু স্বপ্ন-কল্পনাতেই সম্ভব। ভাবনাটি হয়তো অসঙ্গতও নয়, কেননা আমাদের পরিচিত অভিজ্ঞতার সাথে এ মেলে না। আমাদের দেশে— এই ঢাকা শহরে ঘর থেকে বেরুলেই এই দৃশ্যগুলো চোখে পড়ে। প্রচন্ড শীতের রাত্রিতেও ৪ লক্ষাধিক মানুষকে পথে ফুটপাতে ঘুমাতে হয়— আকাশ ঢাকা ভবনের সমাহারে তাদের থাকার কোনো ঘর নেই। জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি মানুষ এখনও একবেলা না খেয়ে থাকে। সিডার এক গবেষণা প্রতিবেদনে ধরা পড়েছে ১৫-২৯ বছরের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ জনসংখ্যার হিসেবে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ তরুণই নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন করে। কোনো ধরনের কাজ বা পড়াশোনার সাথে এরা জড়িত নেই। ভাবা যায় জীবনের কী নিদারুণ অপচয় এই দেশে হচ্ছে?

এখন এরকম আরো অসংখ্য দৃশ্যের সাথে প্রতিনিয়ত যে মানুষের পরিচয় ঘটে তার পক্ষে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই পৃথিবীতেই ‘স্বর্গরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তব হলো এমন ‘অসম্ভব’ কাজটিই করেছে কিউবার মানুষ। শত শত বছর ধরে মানুষের ওপর মানুষের লাঞ্ছনা বঞ্চনা-নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে এক মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ। কিসের বলে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করলো কিউবা? সে কি কোনো জাদুমন্ত্রে? তাই চরম বিপদের দিনেও, ক্ষণেও ধৈর্য আর সাহস নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর উপলব্ধি, ‘আসলে কি জানো তুমি যদি আদর্শে স্থির থাক তাহলে এভাবে পথে পথে কত অপ্রত্যাশিত বন্ধু যে তুমি পেয়ে যাবে তার কোনো শেষ নেই’।

কারাগারে প্রেরণের পর ফিদেল ক্যাস্ত্রোসহ তার সঙ্গীদের শুরু হয় ঐতিহাসিক বিচার। বিচার প্রক্রিয়ায় ফিদেলকে কোনো আইনজীবী দেওয়া হয়নি। নিজেই নিজের আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন তিনি। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাও ঐতিহাসিক। টানা চার ঘন্টাব্যাপী কিউবার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্দশা আর মানুষের বিপন্নতার এক দলিল উপস্থিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিদ্রোহের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি চিরে চিরে দেখান, যুগে যুগে যখনই শাসকশ্রেণি মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করেছে, অবস্থিত সমাজব্যবস্থায় মানুষের বিকাশের সমস্ত রাস্তা রুদ্ধ হয়েছে তখনই মানুষের এই বেদনাকে বুকে ধারণ করে সেই দাস সমাজের স্পার্টাকাস থেকে শুরু করে রুশো ভলতেয়ারের মতো মনীষীরা বিদ্রোহ করেছেন, বিদ্রোহের রসদ যুগিয়েছেন। তাদের এ বিদ্রোহও তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষিতে আইনসঙ্গত ছিলো না। কিন্তু ন্যায়সঙ্গত ছিলো। কেননা তা ছিলো মানুষের পক্ষে। তাই ফিদেল বলেছেন, “বিপ্লবী ন্যায় আইনি দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল নয়, নৈতিক বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল”। তাঁর এই বক্তব্যের যৌক্তিকতায় এবং নৈতিক অবস্থানের কারণে এসময় কিউবার বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিক সমাজ, নাগরিক সংগঠন ও সাংবাদিক অনেকেই ফিদেলদের পক্ষে সোচ্চার হন। বিচারে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ১৫ বছরের জেল হয়। বাকিদেরও নানা মেয়াদের শাস্তি হয়। জেলে বসেই এবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো দলকে সংগঠিত করেন। দলের নতুন নামকরণ হয় ‘মুভমেন্ট জুলাই ২৬’। জেলে বসেই ফিদেল তাঁর জবানবন্দীটি লেখেন এবং জেলের বাইরে পাঠান ছাপানোর জন্য। ‘ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে’ এই শিরোনামে বইটি ছাপা হলে এটাই এই দলের রাজনৈতিক মেনিফেস্টো হিসেবে ভূমিকা পালন করে। মানুষের ভেতরও দারুণ সাড়া ফেলে। অনেক মানুষ এই দলের সাথে যুক্ত হতে থাকে। বাতিস্তার সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে ক্রমে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মুক্তির দাবি জোরালো হতে থাকে। তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে ২২ মাস পর ফিদেল ক্যাস্ত্রো মুক্তি পান।

সহযোদ্ধা চে: বিপ্লবের নতুন বন্ধু
মুক্তি পেয়েই নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলেন। সশস্ত্র অভ্যুত্থান সুচারুরূপে সংঘটিত করার জন্য ছোট ভাই রাউলসহ মেক্সিকো যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকেই পুরো পরিকল্পনা রচনা করেন। মেক্সিকো এসেই ফিদেল ক্যাস্ত্রোর পরিচয় হয় কিউবা বিপ্লবের আরেক কুশীলব আর্নেস্তো চে গুয়েভারার সাথে। কিউবা থেকেও ধীরে ধীরে অনেক বিপ্লবী এখানে এসে যোগ দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৫৬ সালে ২৫ নভেম্বর রাতে ‘গ্রানমা’ নামে ছোট এক জাহাজে ৮২ জন সশস্ত্র যোদ্ধা মেক্সিকোর উপকূল থেকে যাত্রা করে কিউবার উদ্দেশ্যে। কথা ছিলো ৩০ ডিসেম্বর পৌঁছানোর। সেই মতো হাভানাতেও বিদ্রোহ শুরুর। কিন্তু সমুদ্র অস্বাভাবিক উত্তাল হওয়ায় জাহাজ আর এগুতে পারেনি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। খাবার রসদ ফুরিয়ে যায়। সাত দিনের দিন বাধ্য হয়ে অনির্ধারিত উপকূলে নামলে সেখানকার কোস্টগার্ড টের পেয়ে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। এই যুদ্ধেও দলের অধিকাংশই নিহত হয়। মাত্র ২২ জন কোনোক্রমে সিয়েরামায়েস্ত্রো পাহাড়ে আশ্রয় নিতে সক্ষম হন।

সিয়েরামায়েস্ত্রো এলাকার মানুষ বিশেষত আখচাষীদের মধ্যে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর দলের জনভিত্তি ছিলো। তারাও ক্রমে এই যুদ্ধে শরিক হয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে শুরু হয় গেরিলা যুদ্ধ। হাভানায় এর পূর্ব থেকেই বিক্ষোভ, আন্দোলন শুরু হয়েছে। অনেকের ধারণা মাত্র ৮২ জন মানুষ নিয়েই ফিদেল ক্যাস্ত্রো কিউবায় বিপ্লব করে ফেলেছেন। হ্যাঁ এটা সত্যি যে, যে দলটি চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য গিয়েছিলো তার সংখ্যা ৮২ জনই ছিলো। কিন্তু সাথে সাথে আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, কিউবার বিপ্লব শুধু গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়নি। কিউবার বিপ্লবের রণকৌশল ছিলো সশস্ত্র অভ্যুত্থানমূলক। এই অভ্যুত্থান করার জন্য সংগঠিত হয় কিউবার অভ্যন্তরে থাকা ‘মুভমেন্ট জুলাই ২৬’ দলের সদস্যরা। এই অভ্যুত্থান সংঘটিত করার জন্য শত বছর ধরে অত্যাচারিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষই ছিলো ভরসা। তাদের বিপ্লবে শরিক করার জন্য, সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য মানুষের কাছে যেতে হয়েছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু গেরিলা আক্রমণের মধ্য দিয়েই সেখানে বিপ্লবটা হয়ে যায়নি। অন্যান্য বামদলগুলিও ইতোমধ্যে এই আন্দোলনে সমর্থন দেয়। আন্দোলন যেমন তুঙ্গে তেমনি দমন-পীড়নও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গেরিলা এই বাহিনীর সাথে পেরে ওঠে না বাতিস্তার ভাড়াটে সেনাবাহিনী আর মার্কিন পুঁজিপতি হাঙ্গরেরা মিলে। বুকের ভেতর স্ফূলিঙ্গ নিয়ে অসীম সাহসিকতায় যদি কেউ যুদ্ধে নেমে পড়ে তাহলে তাদের কাছে ঐ বেতনভোগী সৈন্যরা কোনো শক্তিই নয়। ইতিহাসে এমন অগণিত প্রমাণ আছে। কিউবায় তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। কোনোমতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে অবশেষে ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল বাতিস্তা হাভানা ছেড়ে মেক্সিকো পালিয়ে যায়। ক্ষমতা দখল করে বিপ্লবী বাহিনী। শুরু হয় কিউবার ইতিহাসের নতুন পর্ব।
সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সামনে এগিয়েছে কিউবা, শিক্ষা-চিকিৎসায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছে
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই শত বছরের লাঞ্ছনা ও অপমানের বিপরীতে কিউবার মানুষ তাঁর আপন পরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শপথ নিলো। মনুষ্যত্ব ও মানবতার জন্য অপমানজনক সমস্ত বিধিবিধান ছিন্ন করে মানুষের হারানো গৌরবকে পুনরুদ্ধার, তাকে আত্মমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করলো। যে কিউবা গোটা পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছিলো প্রমোদ শহর হিসেবে তাকে এক মানবিক রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। শুরুতেই কিউবার সব ক্যাসিনো, জুয়ার আসর আর পতিতালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি কিউবার সমুদ্র সৈকত এমনকি অনেক পার্ক— যা ছিলো ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষ্ণাঙ্গ ও গরীব মানুষদের কোনো প্রবেশাধিকার ছিলো না সেখানে। বর্ণবৈষম্য ও শ্রৈণী বৈষম্যের চর্চা নিষিদ্ধ করে এই সমুদ্র সৈকত ও পার্কগুলো উন্মূক্ত করে দেয়া হয়। খনিজ সম্পদ, তেল খনি, ভূমি — যা কি’না কিউবার জনগণের সম্পদ কিন্তু মার্কিনি বিভিন্ন কোম্পানির দখলে ছিলো — সেসব সম্পদ জাতীয়করণ করা হয়।

এই বিপ্লবের সুফল-ফসল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, বিপ্লবকে রক্ষার প্রয়োজনে নেয়া হয় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিউবার সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার জন্য। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে শিক্ষার্থীরা এই কাজে যুক্ত হয়। অবশ্য এছাড়া কিউবার অন্য উপায়ও ছিলো না। এত রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে বিপ্লব — তাকে ধ্বংস করার জন্য মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে দৈত্যের মতো সর্বক্ষণ হা করে আছে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা। এই সর্বগ্রাসী দানবের হাত থেকে বিপ্লবকে বাঁচাতে হলে দেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ও সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে আবদ্ধ মানুষকে বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত প্রচার ও বিভ্রান্তির হাত থেকে মুক্ত করে বিপ্লবের পক্ষে সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ করার জন্য শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। শুধু বিপ্লব রক্ষার কথাই কেন বলি, স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য শিক্ষা। তাই কিউবা সেদিন তার সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্য নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো এই ‘শিক্ষাযুদ্ধে’। এই কারণেই আজ কিউবাতে কোনো নিরক্ষর মানুষ নেই। এমন একটি শিশুও নেই যে এই বয়সে স্কুলে যাচ্ছে না। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা খরচে ছেলে মেয়েরা পড়ছে। যুুক্তরাষ্ট্রের খুবই প্রভাবশালী পত্রিকা ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর সাংবাদিক জুলিয়া সুইয়িগ লিখেছেন, “কিউবার নাগরিকেরা উচ্চশিক্ষিত, কসমোপলিটান, অসম্ভব মাত্রার উদ্যোগী এবং বিশ্বমানের বিবেচনায় বেশ স্বাস্থ্যবান…পুরো ব্যবস্থাই খুবই অংশগ্রহণমূলক; ১৯৯০ এর দশকে কিউবার শিশুমৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্রেরও নিচে নেমে গেছে। শতকরা ১০০ ভাগ শিশু ৯ম গ্রেড পর্যন্ত স্কুলে যায়।…বিজ্ঞানী ও অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির দিক থেকে কিউবা এখন উদ্বৃত্ত।” প্রতি ১০ জনের ১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় শিক্ষিত। শুধু শিক্ষিতের হার নয়, তার মানও ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে উচ্চস্থানে। ১৯৯৮ সালে ইউনেসকোর এক স্টাডি থেকে জানা যায়, থার্ড এবং ফোর্থ গ্রেডের ভাষা ও গণিতে দক্ষতার স্কোর ৩৫০, ল্যাটিন আমেরিকায় গড় যেখানে ১০০। এই মানসম্মত শিক্ষাপ্রদান সম্ভব হয় কারণ কিউবায় ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ১২:১। যা গোটা পৃথিবীতেই সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত। কিউবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০০০ স্কুল রয়েছে — যেখানে গড়ে ১০ জনেরও কম ছাত্র। কিন্তু সে স্কুলগুলোতেও সমান সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। সর্বত্র এই সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে কিউবা তার জিডিপি’র ১০-১১ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ইউনেসকোর সুপারিশ যেখানে ৮ শতাংশ বরাদ্দের। শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের কারণেই কিউবায় শিক্ষা আজ এই সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি স্বয়ং বিশ্বব্যাংকও দিতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের এক রিপোর্টে বলছে, “Education in cuba is entirly public, centrally planned, and free.”
কিউবায় হাভানা শহর বাদে প্রতিটি প্রদেশে দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দুটি অনুষদ বাধ্যতামূলক। এক. চিকিৎসা। দুই. কৃষি। কিউবার চিকিৎসাব্যবস্থা আজ গোটা দুনিয়ায় শীর্ষস্থানে। এত প্রতিকূলতা আর সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও এটা কী করে সম্ভব? সম্ভব কারণ এই সমাজে মানুষের জীবনের মূল্যই সবচেয়ে বেশি। মানুষই এই সমাজে সম্পদ। তাই মানুষকে সুস্থ-সবল-কর্মক্ষম রাখার তাগিদ রাষ্ট্রের এত বেশি। তাই বিপ্লবের আগে যেখানে প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১ জন ডাক্তার ছিলো আজ সেখানে প্রতি ১০০ পরিবারের জন্য তিনজন ডাক্তার আর তিনজন নার্স মিলে একটি করে স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। এটা দেশের যেকোনো স্থানে। পুরো কিউবা জুড়ে ৪৮২টি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল আছে। জনসংখ্যার বিবেচনায় হাভানা শহরেই আছে ৮২টি হাসপাতাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, যেখানে বিশ্বের সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো অর্থ ছাড়াই সেখানে কিউবার প্রতিটি নাগরিক এই চিকিৎসা সেবা পায়। ব্রিটিশ নারীবাদী লেখক জার্মেইন গ্রীয়ার তাঁর কিউবা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লিখেছিলেন, “যেসব টেস্ট ব্যয়বহুল বলে টেস্ট করা বৃটিশ নারীদের অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব নয়, ব্যয়বহুল বলে ধনী রাষ্ট্রগুলোও এই দায়িত্ব নেয় না, সেসব জটিল টেস্ট সকল কিউবান নারীর জন্যই এই গরীব দেশ সহজপ্রাপ্য করেছে। কোনো টাকা পয়সার ব্যাপার নেই।” কিউবার স্বাস্থ্যসেবা এমন আস্থা অর্জন করে যে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অনেক মার্কিন নাগরিকও চিকিৎসার জন্য গোপনে কিউবায় যান। শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও উদ্ভাবনেরও কেন্দ্র এখন কিউবা। মার্কিন চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণাও অনেকক্ষেত্রে কিউবার দ্বারস্থ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘তৃতীয় বিশ্বে’র জন্য ২০০০ সাল নাগাদ যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছিলো, কিউবা ১৯৮৩ সালেই তা অতিক্রম করে যায়। ‘হেলথ ফর মেডেল’ দেবার মাধ্যমে কিউবার এই অর্জনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

খাদ্য ও আবাসনসহ সমস্ত মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে রাষ্ট্র
শিক্ষা ও চিকিৎসা নয় শুধু, কিউবা তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছে। সেখানে মাত্র ২ ডলার খরচ করে প্রত্যেক কিউবান প্রতিমাসে জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ পান। ফলে অভুক্ত কোনো মানুষ নেই। রাস্তায় নেই কোনো ভিক্ষুক। গৃহহীনও নেই একটিও মানুষ। বিপ্লবী বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই কিউবায় বাড়ি ভাড়া ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ৩৫ লক্ষ ৩৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে গড়ে ৩.১৬ জন সদস্য প্রত্যেক বাড়িতে বাস করে। শতকরা ৯৬টি বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। প্রত্যন্ত এলাকার বাড়িগুলোতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। কর্মক্ষম শতকরা ৯৮ জনেরও বেশি কর্মরত। কর্মজীবী মায়েদের শিশুসন্তানকে নিয়ে কোনো বিড়ম্বনা নেই। সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দেয়া ‘ডে কেয়ার’ আছে অজ¯্র। সন্তানের যা প্রয়োজন তার সবই রাষ্ট্র নিয়েছে। এই শিশুরাই দেশের আরও বিপুল ভবিষৎ রচনা করবে। তাই রাষ্ট্রও তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে। সেখানে বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ, ধর্ম — কোনো পরিচয়েই বিভেদ নেই। এভাবে কিউবা মানবিক

সমাজের এক মূর্ত রূপ নির্মাণ করেছে। নতুন সমাজের নূতন মানুষ
কিউবা তার নাগরিকদের বৈষয়িক সুবিধাদি দিয়েছে শুধু এমনটিই নয়, মানুষের জীবনের চলার পথে যত বাধা — তার বিকাশের পথে যত প্রতিবন্ধকতা — তার প্রায় সবটাই দূর করে মানুষের মানবিক বিকাশের অর্গল দিয়েছে খুলে। আমাদের দেশে, আমাদের চারপাশে আমরা প্রতিনিয়ত দেখি স্বার্থান্ধ আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষের ভিড়, নিজের জন্য ছাড়া অন্য মানুষকে নিয়ে ভাবার অবকাশ তাদের নেই। শিক্ষক-ডাক্তার যত উচ্চশিক্ষিতই হোক না কেন মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কোনো প্রকাশ নেই। কয়েকদিন আগেই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে গ্রামাঞ্চলে বা মফস্বলে যেসব ডাক্তারদের পাঠানো হয় তারা অনেকেই প্রশিক্ষণ কিংবা অন্যকোনো ছলে কর্মস্থানে যেতে চান না। দুর্গম বা চরাঞ্চলে অবস্থিত অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। কেন? শিক্ষকরা সেখানে যেতে চান না। শিক্ষকরা একটু ভালো জায়গায় থাকতে চান — এজন্য তদবিরের শেষ নেই। ডাক্তাররা শহরে থাকতে চান— কারণ গ্রামাঞ্চলে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ মেলে না। এই হলো এদেশের ডাক্তার-শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার নমুনা! অথচ ফিদেল ক্যাস্ত্রো তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলছেন যে, বিপ্লবের সময়কার ৪০ জন পুরোনো ডাক্তার বাদে কিউবায় একজন ডাক্তারও পাওয়া যাবে না যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস অর্থাৎ চিকিৎসার বিনিময়ে বাড়তি অর্থ রোজগারের চিন্তা করতে পারেন। ভাবা যায়, একটি দেশের ডাক্তারদের মূল্যবোধের, সামাজিক দায়বদ্ধতার কোন্ স্তরে নিয়ে গেলে পরে এমন কথা বলা সম্ভব। এমন করে তৈরি করতে পেরেছেন বলেই বিপ্লবের সময় যেখানে ৬০০০ ডাক্তারের ৩ হাজারই দেশ ছেড়ে চলে যায় সেখানে বাকি ৩ হাজার ডাক্তার নিয়ে শুরু করেই আজ কিউবার স্বাস্থ্যসেবা শীর্ষস্থান অধিকার করতে পেরেছে। কিউবার ৭৫ হাজার ডাক্তারের মধ্যে ৫০ ভাগই জীবনের কোনো না সময় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেশের বাইরে গিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ৬৮টি দেশে কিউবার প্রায় ৩০ হাজার চিকিৎসক কাজ করছে। ১৯৬১ সালের পর থেকে কিউবা বিভিন্ন কাজে ১৫৪টি দেশে যে ৩ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী পাঠিয়েছে তার দেড় লক্ষই চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। পূর্ব তিমির নামে যে দেশটি বছর পনেরো আগে স্বাধীন হয়েছে তার পুরো স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোটাই তৈরি করে দিয়েছে কিউবার ডাক্তাররা। শুধু ডাক্তার নয়, কিউবার শিক্ষকরাও মানবিক মূল্যবোধের এমন স্বাক্ষর রেখে চলেছে। নিকারাগুয়া বিপ্লবের পর কিউবার কাছে এক হাজার শিক্ষক চেয়েছিলো। কিউবা তার দেশের শিক্ষকদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিকারাগুয়া যাওয়ার আবেদন করলে ৩০ হাজার শিক্ষক সেই মিশনে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে সেখানে দু’হাজার শিক্ষক পাঠানো হয়। সেখানে প্রতিবিপ্লবীদের গুলিতে কিউবার কয়েকজন শিক্ষক নিহত হলে প্রতিবাদ স্বরূপ কিউবার সমস্ত শিক্ষক নিকারাগুয়া যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে। এই হলো কিউবার শিক্ষক— কিউবার নতুন সমাজের নতুন মানুষ। মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গের জন্য সদা প্রস্তুত। আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থমগ্ন সমাজে কিউবার এই নূতন মানুষের জন্ম হলো কীভাবে? পুরনো আর ক্ষয়িষ্ণু সমাজের আদর্শ ধারণ করে নূতন মানুষের চাষ সম্ভব নয়। নূতন যুগের প্রয়োজনে নূতন মানুষ তৈরি করতে হলে চাই নূতন আদর্শ, মূল্যবোধ। কিউবার মানুষ এই নূতন আদর্শ — সমাজতান্ত্রিক আদর্শের স্পর্শে নূতন জীবন পেয়েছে। জীবনের মহত্তর তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছে। তাই লোভ লালসা-ভোগের জীবনকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে অবলীলায়।

ভবিষৎ গতিপথ
টিকবে কি কিউবার এই নতুন সমাজ? সম্প্রতি কিউবা বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেলের মহাপ্রস্থানের পর এই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে। বিপ্লবের পর থেকে অদ্যাবধি অনেকেই সংশয়ের চোখে তাকিয়েছেন কিউবার দিকে। দেশের সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে ব্যক্তিমালিকানার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে কিউবা আজ এখনকার অবস্থানে। দেশের যেকোনো সমস্যা যৌথভাবে মোকাবিলা করার দৃষ্টান্ত একসময় ছিলো রাশিয়াতে, ছিলো চীনেও। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানার বিরুদ্ধে অবস্থান দুর্বল হওয়ায় আবার ফিরে এসেছে পুঁজিবাদে। সংশয় সন্দেহের দোলাচলেই এখনো পথ চলছে কিউবা — গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের অবশিষ্ট বাতিঘর। সোভিয়েতের পতনের পর কিউবা যেভাবে একা সমাজতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো তা এক দৃষ্টান্ত। সেসময় ফিদেল ক্যাস্ত্রো অনমণীয় কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হয় সমাজতন্ত্র, নয় মৃত্যু’। এই দৃঢ় পণ নিয়ে সেদিন ফিদেল ক্যাস্ত্রো দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সমাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে মানুষ অসীম ত্যাগ করেছে। তেল কিনবার পয়সা নেই বলে গাড়ি বন্ধ করে চীন থেকে সাইকেল আমদানি করেছেন। ফিদেলের আহ্বানে মানুষ সেই কষ্ট স্বীকার করে সাইকেলে চেপেই যাতায়াত করেছে। ট্রাক্টর কেনবার টাকা ছিলো না তাই কিছুদিনের জন্য কৃষকদের লাঙল ব্যবহার করতে বলেছেন। এভাবে নিজস্ব শক্তিতেই সেদিন কিউবা বিপদ সামলে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে অপরাজেয় শক্তিতে। কিউবায় ব্যক্তিমালিকানার বিপরীতে জনগণের সে যৌথতার সংগ্রাম বিশ্বকে পথ দেখাবে — এ প্রত্যাশা বিশ্ববাসীর।

বিপ্লবের পূর্বে কিউবার যে অবস্থা ছিলো আমাদের দেশের অবস্থাও তার থেকে ব্যতিক্রম নয় মোটেও। প্রায় দু’শো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি প্রায় ঔপনিবেশিক শাসনের কবলে পড়ে এদেশের মানুষ। শোষণ থেকে মুক্তির আশায় মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর গত হলেও কাক্সিক্ষত মুক্তি আসেনি। সেই প্রজন্মের অনেকেই এখন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন— এত রক্ত আর ত্যাগ আর চোখের জলে আমরা কি এই দেশই চেয়েছিলাম? অশিক্ষার অন্ধকার ঘরে ঘরে। চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে লক্ষ-কোটি মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুণছে। দেশের সম্পদের ওপর জনগণের অধিকার নেই।

গ্যাসক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশই বহুজাতিক কোম্পানির কব্জায়। দেশের বাজার বিদেশি পণ্যে সয়লাব। মানুষের হাতে কেনবার টাকা নেই। যুবক-তরুণদের কাজ নেই। দিশাহীন জীবনের পথ। এরকম অন্তহীন সমস্যার জালে বন্দী দেশের মানুষ। আমরা যদি এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদের স্মরণ করতে হবে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর অবিস্মরণীয় সংগ্রামকে। কিউবার মুক্তির যে রাস্তা তিনি দেখিয়েছেন — সমাজতন্ত্রের যে পথ — সেই পথে হাঁটতে হবে আমাদেরও। তাই কিউবা আজ গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের অবশিষ্ট বাতিঘর—অমিত প্রেরণা।
তথ্যসূত্র :
১. বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা – আনু মুহাম্মদ
২. আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সাথে – শাহাদুজ্জামান
৩. ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মুখোমুখি (সাক্ষাৎকার) – জাহানারা নূরী
৪. বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট

অনুশীলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মুখপত্র, ফেব্রুয়ারি ২০১৭

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments