ভোটাধিকারসহ গণতন্ত্র রক্ষায় ও জনজীবনের সংকট নিরসনে আন্দোলন গড়ে তুলুন
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতা দখলে রেখেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। মহাজোট সরকারের গণবিরোধী নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, দমনমূলক শাসন, চূড়ান্ত লুটপাট-দুর্নীতি, দখলদারিত্ব, দলীয়করণ সবকিছু মিলে মানুষ অতিষ্ঠ। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অতীতে একই কায়দায় দেশ চালিয়েছে। মানুষ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু বিকল্প কী? জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া যথার্থ বিকল্প গড়ে উঠবে না। বিপ্লবী শক্তির নেতৃত্বে জনস্বার্থে নানা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পথেই কেবল বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নির্মাণ সম্ভব। আমাদের পার্টি বাসদ (মার্কসবাদী) সেই লক্ষ্যে বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
মহাজোট সরকার ‘উন্নয়ন’-এর শ্লোগান দিচ্ছে। অথচ, সাধারণ মানুষের খেয়ে-পরে বাঁচবার উপায় নেই। ক্ষমতায় আসার আগে ‘১০ টাকা সের চাল’ দেয়ার প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সরকার। চালসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কোন ভূমিকা রাখছে না। মজুতদার, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। অথচ গ্রামের কৃষক ফসলের দাম না পেয়ে পথে বসেছে। ক্ষেতমজুরদের কাজ নেই সারা বছর। ২০১৫ সালে পে কমিশন হিসাব করে দেখিয়েছিল, ৬ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে মাসে ন্যূনতম দরকার সাড়ে ১৫ হাজার টাকা। অথচ ৪৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরী মাত্র ৫৩০০ টাকা, যা পোশাক রপ্তানীকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম, বাড়ছে বাড়ি ভাড়া-গাড়ি ভাড়া।
প্রত্যেক ঘরে চাকুরীর প্রতিশ্রুতি রাখেনি সরকার। এখন কেরানীর চাকুরীর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। শিক্ষা-চিকিৎসা নিয়ে চলছে ব্যবসা। নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ক্রমেই ছেড়ে দিচ্ছে। ঔষধের দাম বাড়ছে। বেসরকারি হাসপাতালের নামে মুনাফার চক্র তৈরি হয়েছে যেখানে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সর্বব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ গরীব মানুষের শিক্ষা নেয়ার রাস্তাকে সংকুচিত করেছে। সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে না। ভর্তি ফি, বেতন, পরীক্ষার ফি প্রতি বছরই বাড়ছে। গাইডবই ও কোচিং ব্যবসার রমরমা চলছে। অপ্রয়োজনীয় দুুটি পাবলিক পরীক্ষা (পিইসি, জেএসসি) অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে শিশু মনে নিরর্থক চাপ বাড়াচ্ছে। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষার নৈতিক ভিত্তিকে ধসিয়ে দিচ্ছে। বাড়ছে নারী নির্যাতন-ধর্ষণ, বিস্তার ঘটছে মাদক-জুয়া-পর্ণোগ্রাফীর।
সাধারণ মানুষের জীবন যতই দুঃসহ হোক, ক্ষমতাসীন ও সংশ্লিষ্টদের পোয়াবারো। বেপরোয়া চুরি-দুর্নীতি-লুটপাট চলছে। চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার, হাইওয়ে ও সেতু ইউরোপ-আমেরিকার চেয়েও ৩/৪ গুণ বেশী খরচে নির্মিত হচ্ছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ এখন সোয়া লক্ষ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে জনগণের আমানত লুট করছে ব্যাংক মালিক, ব্যবসায়ীরা। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে ক্রসফায়ার-গুম নামে বিনা বিচারে হত্যা, সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব চলছেই। প্রতিবাদের ক্ষীণ কণ্ঠটুকুকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে গায়ের জোরে। পরিকল্পিতভাবে ভীতি সঞ্চারী পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সমাজের সমস্ত শোষিত-সাধারণ মানুষ জীবনভারে পর্যুদস্ত। সর্বত্র দাপট আজ ক্ষমতাবানদের, টাকার মালিকদের। কৃষক খাদ্যের যোগান দেয়, কিন্তু তার খাবার জোটে না। শ্রমিক বৈদেশিক মুদ্রা আনে, বাঁচার মত মজুরি পায় না। গরীব মানুষের ট্যাক্সে ও শ্রমে স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল গড়ে ওঠে, অথচ তাদের শিক্ষা-চিকিৎসার সুযোগ নেই। নিজেদের এই দুর্গতিকে কি আমরা নিয়তি বলে মানব? না, এটা নিয়তি নয়, এটা হল একটা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ফলাফল। এ ব্যবস্থার নাম পুঁজিবাদ। এখানে শ্রমজীবী মানুষের তৈরি সম্পদ মালিকানার জোরে হস্তগত করে কিছু ধনীরা। এদের হাতেই থাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ। বিপ্লবী শক্তির উত্থান ছাড়া পুঁজিবাদের বদল করা যাবে না। জনগণের দাবিতে লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই কেবল এর উত্থান হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দেশের সচেতন মানুষ, বুদ্ধিজীবীসহ সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে গণআন্দোলনের পথে এগিয়ে আসার আবেদন জানাচ্ছি। এই লক্ষ্যে, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ও জনজীবনের আশু সংকট নিরসনে নিম্নোক্ত দাবিনামার ভিত্তিতে জনমত গড়ে তুলতে আমাদের কর্মসূচিতে আপনার সমর্থন ও অংশগ্রহণ চাই।
দাবিনামা
১. জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ কর, জামানত কমাও, দল নিবন্ধন সহজ কর। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু কর।
২. রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম-ক্রসফায়ার বন্ধ কর। মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা চলবে না।
৩. দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ কর। কালো টাকার মালিক-অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপী-ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেপ্তার কর, আয়ের সাথে সঙ্গতিবিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত কর।
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে দোষীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। মাদক, পর্ণোগ্রাফী ও জুয়ার বিস্তার রোধ কর। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কর।
৫. চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ঞঈই কে সক্রিয় কর, রেশন ব্যবস্থা চালু কর। ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর। গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার কর। রেলসহ সরকারি গণপরিবহন বিস্তৃত কর। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে অল্প ভাড়ায় বহুতলবিশিষ্ট আবাসন প্রকল্প বা কলোনী নির্মাণ কর। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর কর।
৬. শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরী ১৬০০০ টাকা নির্ধারণ, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত কর।
৭. কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হাটে হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চাই। খাদ্যশস্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু কর। স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ কর। ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজ ও রেশন চাই।
৮. ‘ঘরে ঘরে চাকুরী’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা কর। বেকারদের নাম তালিকাভুক্ত করে কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে বেকার ভাতা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় শূণ্যপদে নিয়োগ দাও। সরকারি চাকুরীতে কোটা কমাও।
৯. শিক্ষা বাণিজ্য ও প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ কর। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল কর। চিকিৎসা খাতে ব্যবসা বন্ধ কর। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অধীনে প্রত্যেক নাগরিকের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ভারতের কাছ থেকে তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় কর। রামপালে সুন্দরবন ধ্বংসকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প বন্ধ কর। ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল বৃহদাকৃতির রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎপ্রকল্পের পরিবর্তে পরীক্ষামূলক ছোট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কর।
কর্মসূচি
২৫ জুন-২৪ জুলাই ২০১৮ : এলাকায় এলাকায় প্রচার-গণসংযোগ, মিছিল, হাটসভা, পথসভা, পদযাত্রা, সমাবেশ
২৫ জুলাই : ১০ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ও জেলায় ডিসি অফিসে স্মারকলিপি পেশ
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)
কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটি
২২/১ তোপখানা রোড(৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা।
ফোন: ৯৫৭৬৩৭৩,০১৭১১৮৯৫৮৪৫।
www.spbm.org
প্রকাশকাল : ২৮ জুন ২০১৮