বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সময় সীমা বেঁধে দেয়ার প্রতিবাদে আজ বৈশাখের প্রথম দিন বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় ইনচার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমার সভাপতিত্বে ও সংগঠক গোবিন্দ দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চারণের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, প্রগতি বর্মণ তমা, তিথি চক্রবর্তী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব। সমস্ত ধর্ম বর্ণ গোত্রের মানুষ এদিন মিলিত হয় বাঙালির এ প্রাণের উৎসবে। অথচ সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বাঙালির সার্বজনীন এ উৎসবকে বিজাতীয় আখ্যায়িত করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরি করছে। পহেলা বৈশাখ এবং একে কেন্দ্র করে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিয়েছে। শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, সুপ্রীম কোর্ট চত্ত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যও তারা ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এধরনের বক্তব্য তাদের থাকলেও এবছরের মতো এত জোরে আগে উচ্চারণ করার সাহস তারা পায়নি। পাকিস্তান আমলে তাদের এই তথাকথিত ‘হিন্দুয়ানি’ সংস্কৃতিকে মুসলমানীকরণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দাড়িয়েই এদেশের মানুষ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করেছিল। সেদিন তারা পরাস্ত হলেও স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও আপসকামিতায় এই মৌলবাদী চিন্তা পরিপুষ্ট হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ভোটের রাজনীতিতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হেফাজতীদের সাথে আপসকামিতার পথ বেছে নিয়েছে। তাদের সুপারিশ অনুসারে এবছর মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের সময় সীমা সংকুচিত করে বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে আদেশ জারি করা হয়েছে। শাসকশ্রেণীর এই আপসকামিতার ফলেই তারা আজ বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতি ও চেতনায় আঘাত হানার সাহস পাচ্ছে।
বক্তার আরো বলেন, এঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রকৃত চেহারা উদঘাটিত হয়েছে। ফলে যারা আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মনে করে তাদের যাবতীয় স্বৈরাচারী কর্মকা-কে দিনের পর দিন অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তাদের চোখ খুলবে আশা করি । আর এর বিপরীতে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য জনগণের ব্যাপক ঐক্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের দাবি।