চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনায় কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়িক সংস্থা এস আলম গ্রুপ। এটি বেসরকারি খাতে অনুমোদন পাওয়া সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প। ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটির ৭০ শতাংশ এস আলম গ্রুপ এবং বাকী ৩০ শতাংশ মালিক চীনের সেপকো থ্রি ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ। বিনিয়োগ করা ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার মালিকানা ও ঋণ দেবে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান। জাহাজ থেকে কয়লা নামানোরজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে তৈরি করা হবে বেসরকারি বন্দরের মতো একটি জেটি। প্রকল্প চলাকালীন এখানে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ, প্রকোশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কর্মসংস্থান হবে ৬০০ জনের। এই প্রকল্পটি এখনও পরিবেশ ছাড়পত্রই পায়নি। পাবে সেই আশায় তারা আগেই কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার আগে তারা যে কাজ শুরু করেছে সেটা বেআইনি।
বাঁশখালি গন্ডামারার অধিবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ১/ জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় ২/ ভিটা-মাটি হারানোর আশঙ্কায় ৩/ পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। গন্ডামারা ইউনিয়নের বেশীরভাগ শ্রমজীবী। কিছু জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। তবে বেশিরভাগের আয় বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি আহরণ এবং বছরের বাকি সময়ে লবণ চাষ। এখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে প্রথমত তারা ভূমিহীন হবেন, দ্বিতীয়ত তারা তাদের কর্মসংস্থান হারাবেন। তাদের পক্ষে বাপ-দাদার ভিটা-মাটি-কবর ছেড়ে উপজেলা শহরে কিংবা আরো দূরে গিয়ে বাড়ি, জমি ক্রয় করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির বাইরেও সরকার এলাকার দরিদ্র মানুষের ভোগ-দখলে থাকা খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে দিচ্ছেন এস আলম গ্রুপকে। এস আলম গ্রুপ কিছুদিন আগে প্রকল্প এলাকায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উঠানো শুরু করেছে। যার প্রভাবে ইতিমধ্যে সারা গন্ডামারা ইউনিয়নে টিউবওয়েলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যদি এস আলম গ্রুপ এখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করে এবং প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার পানি উঠায় তাহলে এলাকাবাসীর বেঁচে থাকাটাই কঠিন হবে। চিংড়ি চাষী ও মৎম্যজীবীরাও শংকিত তাদের জীবিকা নিয়ে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে একই ধরণের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব সম্পর্কে জাইকার একটি রিপোর্টে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে কথা বলা হলেও, স্বীকার করা হয়েছে, সমুদ্রের যে স্থানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি নির্গত হবে, সে স্থানের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি হবে, এমনকি ১.৩ কিমি দূরে পর্যন্ত ২ ডিগ্রী ও ১.৮ কিমি পর্যন্ত তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী বেশি হবে, ফলে উক্ত স্থানের মাছের ক্ষতি হবে।
এস আলম গ্রুপ বাঁশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের সাথে অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের (জেনেসিস টেক্সটাইল ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল) বিষয়টি জুড়ে দিয়ে ৫০০০ একর জমি সরাসরি ভূমি মালিকদের নিকট থেকে কেনার আবেদন করেছিল সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে ! এই জমির ৩৩০৩.১৭ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং বাকী ১৭২৮.৯৭ একর খাস জমি। এই জমি সমান ক্ষমতাসম্পন্ন রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত জমির প্রায় তিন গুণ। এস আলম গ্রুপের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং কানুনগো সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে ৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন জমা দেয় যাতে তারা বলে, “এমতাবস্থায় দেশের চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে আবেদনকৃত জমি ক্রয়ের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সদয় বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে আবেদনের বিষয়টি নিস্পত্তির আগেই ৬৬০.৪০ একর জমি জেনেসিস টেক্সটাইল ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের নামে ‘ক্রয়’ করে ফেলেছে এস আলম গ্রুপ! এটুকু বাদ দিলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের নামে থাকে ৪,৪০০ একরের মত! প্রতিবেদনটিতে গন্ডামারা, পশ্চিম বড়ঘোনা ও পূর্ব বড়ঘোনা মৌজায় প্রকল্পের স্থানে মাত্র ১৫০টি বসত বাড়ি দেখানো হয়েছে। অথচ স্থানীয় জনগণের ভাষ্যমতে ৭ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, বহু মসজিদ-মাদ্রাসা-বিদ্যালয়-কবরস্থান-বাজার-আশ্রয়কেন্দ্র-স্বাস্থ্যকেন্দ্র-বাজার ইত্যাদি রয়েছে। ৩ হাজার একর জমিকে নাল শ্রেণীর ‘খালি জমি’ দেখানো হয়েছে যদিও ক্রয় করা জমিগুলো স্পষ্টতই ধানের জমি, লবণ ও চিংড়ি চাষের জমি। ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩৩০৩ একর জমি ছাড়াও এস আলম গ্রুপের নজরে উক্ত অঞ্চলের খাস জমিও রয়েছে যার পরিমাণ ১৭২৮.৯৭ একর। এই খাস জমি স্থানীয় ভূমিহীনরা নানান ভাবে ভোগদখল করে আসছে। এই খাসজমি দখলের খায়েসও স্থানীয় জনগণের ক্ষোভের একটি কারণ।
এস আলম গ্রুপ শিপইয়ার্ড, গার্মেন্টস বা অন্যান্য শিল্প করার কথা বলে বছর দেড়েক আগে থেকে জমি কেনা শুরু করে। পরবর্তীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দুই-আড়াই মাস আগে থেকে এলাকাবাসী আন্দোলন শুরু করে। গঠিত হয় ‘বসতভিটা ও গোরস্তান রক্ষা সংগ্রাম কমিটি, যার আহ্বায়ক সাবেক ইউ পি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। গণমাধ্যমের অবস্থান এক্ষেত্রে বিস্ময়কর। হত্যাকাণ্ডের আগে গত দুই মাস ধরে পঁচিশ-ত্রিশ হাজার গ্রামবাসীর মিছিল-আন্দোলন স্থান পায়নি গণমাধ্যমে। আর ৪ এপ্রিলের ঘটনা সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিরোনাম করা হয়েছে তিন পক্ষের সংঘর্ষ হিসেবে। বাস্তবে পক্ষ ২টি — এস আলম গ্রুপ, তার মাস্তান বাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ সবাই মিলে একটি গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপ জমির মালিক ও সাধারণ দরিদ্র গ্রামবাসী। এই সম্মিলিত গ্রুপ গুলি করে দরিদ্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে। যাদের স্বজনদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তাদের নামেই মামলা দিয়ে ছয়-সাত হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের মামলার বাইরেও নিহতের স্বজনকে দিয়ে লিয়াকত আলীসহ আন্দোলনকারীদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গুলিতে আহতদের হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, চিকিৎসাধীনদের হাতকড়া পরিয়ে রাখার ছবি পত্রিকায় এসেছে। পুলিশ এখন বলছে, তাদের গুলিতে নিহতরা মরেনি। তাহলে পুলিশের উপস্থিতিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করল কে? এস আলম গ্রুপ, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দরিদ্র গ্রামবাসী গোলাগুলি করে নিজেদের হত্যা করেছে এ কথা কি বিশ্বাসযোগ্য?
বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উদ্ভট কথা বলে অযথা কতগুলো মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হলো, এটা দুঃখজনক। যেন বাঁশখালীর মানুষের জীবন প্রতিবাদকারীদের কথাতেই গেছে, মাস্তান আর পুলিশের গুলিতে নয়! কয়লাবাহী কার্গো ডুবে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন — একদল বলল, পানি নাকি দূষিত হয়ে গেছে। এটা কতটা বিজ্ঞানসম্মত জানি না। কারণ, ছোটবেলা থেকে দেখেছি, বাসার পানির ফিল্টারে কয়লা দেওয়া পাত্র ছিল। সেখান থেকে কয়েক স্তরে গিয়ে পানি বিশুদ্ধ হতো। গ্রামেও এ ধরনের ফিল্টার আমরা দিয়ে থাকি। কয়লা পানিকে বিশুদ্ধ করে। কাঠ কয়লা আর খনিজ কয়লার মধ্যে পার্থক্য তিনি বোধহয় বুঝতে পারেননি। কয়লা পোড়ালে যে ছাই হয়, যে বিষাক্ত গ্যাস উৎপাদিত হয়, যে তরল বর্জ্য পানিতে মেশে সেগুলো দিয়েও কি পানি বিশুদ্ধ হয়? দিনাজপুরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছোট আকারের (২২০ মেগাওয়াট) যার মধ্যে মাত্র ৮০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট কার্যত উৎপাদন হয়। তাতেই এলাকায় ছাই দূষণ-পানি দূষণ হচ্ছে, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন ঐ এলাকায় নাকি কোন ক্ষতি হয়নি!
এস আলম গ্রুপ কর্তৃক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে চীন, ভারত ইত্যাদি দেশে কয়লা বিদ্যুতের বহুল প্রচলনের কথা উল্লেখ করে একে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। কিন্তু কয়লা বিদ্যুতের ফল কি? ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু ২০১৩ সালের ১১ মার্চ ‘এমিশন ফ্রম কোল পাওয়ার প্ল্যান্টস কজিং হাই মরটালিটি, ডিজিজ’ নামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে — ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে প্রতি বছর গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু এবং গড়ে ২ কোটি মানুষ অ্যাজমা আক্রান্ত হচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। অকাল মৃত্যুর পাশাপাশি হৃদরোগ , ব্রংকাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ অন্যরা। এর মূল কারণ ভারতের ১১১টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র; যা থেকে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ভারতের রাজ্যসহ কেন্দ্রীয় সরকার; যা তাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬৬ শতাংশ।
চীনে বেইজিং শহরের বড় ৪টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৩টি ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে, অবশিষ্টটি আগামী বছর বন্ধ করে দেয়া হবে।(‘Beijing to Shut All Major Coal Power Plants to Cut Pollution’, Bloomberg, March 24, 2015). পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে চীনের বিখ্যাত শহর সাংহাইয়ে কয়লা পোড়ানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবর, ২০১৩ সাংহাই পরিবেশ রক্ষা ব্যুরো ভয়াবহ দূষণ ঠেকাতে চার বছরের জন্য কয়লা পোড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্লিন এয়ার অ্যাকশন প্ল্যান কর্মসূচির খবরটি চায়না ডেইলি প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি কয়লার ভেতর লুকিয়ে থাকা উপাদানই ফুসফুসের ক্যান্সার ও বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাত্র ৩০ বছরে চীনে অতিমাত্রায় কয়লা পোড়ানোয় দেশটির উত্তরাঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৫ দশমিক ৫ বছর। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স অব ইউএসএ পরিচালিত গবেষণাটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে।
বলা হচ্ছে, উন্নয়নের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দরকার। প্রথমতঃ কয়লা ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্য বিকল্প আছে, যা কয়লার মত পরিবেশবিধ্বংসী নয়। দ্বিতীয়তঃ যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তা আসলে একজন ব্যক্তির উন্নয়ন, জমি হারানো গ্রামবাসীর উন্নয়ন নয়। তাদের জন্য বিপর্যয়। হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই উন্নয়ন হয়ে যায় – এই ধারণা যে সঠিক নয়, তা বিবেচনায় নিতে হবে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে ১০০ মেগাওয়াট মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার এলাকার জনগণের সম্মতি ও পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ না নিয়েই এই কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছিল। কয়েক হাজার একর আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। লক্ষাধিক পাহাড়ি পরিবার উদ্বাস্তু হয়। ৪০ হাজার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়। পাহাড়িদের বিদ্রোহের সূচনা এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করেই। স্বাধীন বাংলাদেশকে এর জন্যে কতটা মূল্য দিতে হয়েছে, তা আমাদের সবারই কম-বেশি জানা আছে। হিসেব করে দেখা যায়, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আসে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে তার যা মূল্য আর আবাদি জমি-মানুষের দুর্ভোগের মূল্য বহুগুণ বেশি।
ফুলবাড়ির কয়লা প্রকল্প এশিয়া এনার্জিকে দেওয়ার জন্যে অনেক ‘উন্নয়ন’র গল্প শোনানো হয়েছে। ‘উন্নয়ন’র গল্প বলে, দালাল-টাউট তৈরি করে বাঁশখালির মতোই গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের ঘটানো সেই হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে ফুলবাড়ির মানুষের পক্ষে সেদিন বক্তব্য দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও ক্ষমতায় এসে তা ভুলে গেছেন। শুধু তাই নয়, একই পদ্ধতিতে বাঁশাখালিতে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটলো শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে, লুটেরা শ্রেণির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আর যাই হোক উন্নয়ন হতে পারে না।
চীন, ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে ওইসব দেশের মত মেগা প্রকল্প যাতে অনেক জমি লাগে এবং বহু মানুষের ক্ষতি হয় এমন প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে বিষাক্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারে বাদ দিতে পারলেই ভালো। তারপরও সাময়িকভাবে করতে হলে ১০০-২০০ মেগাওয়াটের ছোট প্রকল্প করা যেতে পারে যাতে জমি কম লাগবে, পরিবেশের ক্ষতিও কম হবে। এতে হয়তো খরচ কিছুটা বাড়বে, মুনাফা কিছু কম হবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃতি ও মানুষ বাঁচবে।