Wednesday, November 20, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদবাংলাদেশের জনগণের সকল দাবি ও ন্যায্য পাওনা বিসর্জন দেয়া হয়েছে ভারত সফরে

বাংলাদেশের জনগণের সকল দাবি ও ন্যায্য পাওনা বিসর্জন দেয়া হয়েছে ভারত সফরে

কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সরকার মৌলবাদ তোষণের রাজনীতি অব্যাহত রেখেছে

Sambad sammelon Bammorcha copy

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সংবাদ সম্মেলন ১৭ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১১.৩০ মিনিটে নির্মল সেন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কিভাবে জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করবে এবং দেশের অভ্যন্তরে মৌলবাদী শক্তিকে তুষ্ট করতে কওমী মাদ্রাসার সনদকে সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করা হলো, সেই বিষয়ে নেতৃবৃন্দ মতামত তুলে ধরেন। শুরুতেই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্তিক বাম মোর্চার বর্তমান সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বহ্নিশিখা জামালীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ।

গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফরে ভারতের আগ্রহের বিষয়গুলোই আলোচনার বিষয় ছিল, বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয় সেখানে আলোচনা হয়নি। তারা বলেন, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি, বাণিজ্য ঘাটতি ইত্যাদি বিষয় বাদ রেখে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে রাজি হন, নাগরিকরা সেই প্রশ্নই তুলেছেন। তারা আরও বলেন, অন্যদিকে অস্ত্র ক্রয়, প্রতিরক্ষা সমঝোতা, ঋণ চুক্তি ইত্যাদি সবই ভারতের আগ্রহের বিষয়।
তিস্তা প্রসঙ্গে ভারতের আশ্বাস প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, এর আগেও মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরের সময় এবং শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী যৌথ ইশতেহারে এই আশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু তার কোন বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, ফারাক্কা নিয়ে চুক্তি থাকলেও আদৌ সেখানে পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। ফলে ভারতের আশ্বাসের ওপর ভরসা বাংলাদেশের জনগণ রাখতে পারছেন না। বরং একদিকে চীন থেকে ডুবোজাহাজ কিনে জনগণের অর্থের অপচয় আমরা দেখতে পেয়েছি, তার ভারসাম্য করার জন্য দেখতে পাচ্ছি ভারত থেকে অস্ত্র ক্রয় চুক্তি, একই সাথে দেখছি মায়ানমারের কাছে ভারতের ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী টর্পেডো বিক্রি। এভাবে শুধু বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তিই সম্পাদন করা হয়নি, গোটা দক্ষিন এশীয়াতে অস্ত্র প্রতিযোগিতারও নতুন বিস্তার ঘটানো হয়েছে।

কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী এতগুলো চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী দেশের ডানপন্থী শক্তিগুলোকেও হাত করতে চাইছেন এই স্বীকৃতির মাধ্যমে। যেখানে প্রয়োজন ছিল সব শিশুর জন্য অভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার বন্দোবস্ত করে শিক্ষার বৈষম্য দূর করা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরং সেই বৈষম্যকে পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা একদিকে করলেন, অন্যদিকে মৌলবাদতোষণের রাজনীতিকে আরেকধাপ এগিয়ে নিলেন।

কর্মসূচি
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল ঢাকা সহ সারা দেশে তিস্তা সহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ও্ই দিন ঢাকাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যের পূর্ণ বিবরণ:

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্য আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। দুটো জাতীয় গুরুত্ব সম্পন্ন বিষয়ে কথা বলবার জন্যই আপনাদের আমরা আহবান করেছি।

আপনারা অবগত আছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে ৪টি চুক্তি ও ১৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু এতে বাংলাদেশের অর্জন কী হয়েছে, এই প্রশ্নটির উত্তর কোথাও মিলছে না। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অর্ভথ্যনা জানিয়েছেন, এটিকেই একমাত্র বলার মত অর্জন হিসেবে আমরা দেখতে পেয়েছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, সেই তিস্তার পানিচুক্তি বিষয়ে কোন আলাপ এই সফরে হয়নি। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে বাংলাদেশ কী ভাবে বিপদাপন্ন হবে, সেই আলাপ হয়নি। আলাপ হয়নি চুক্তি সত্ত্বেও পদ্মায় পানির প্রবাহ ক্রমাগত কমে আসার বিষয়ে। আলাপ হয়নি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে। সীমান্তে বিএসএফের একের পর এক হত্যাকান্ড পরিচালিত করার মত বিষয়েও কোন আলাপ হয়নি। উল্লেখ যে, গত বিশ বছরে বিএসএফের হাতে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, সেই আলাপগুলোই পরিত্যক্ত হয়েছে, কিন্তু ভারতের স্বার্থে যা যা প্রয়োজন তা সবই দিয়ে দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদী আশ্বাস দিয়েছেন তার মেয়াদকালেই তিস্তার চুক্তি হবে। কিন্তু আমরা জানি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগেরবারের ভারত সফরের সময় এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দুইবার দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ইশতেহারে অবিলম্বে তিস্তা সমস্যার সমাধান করার কথা বলা হয়েছিল। সেই কাজটি করা হয়নি। ফলে এবারের আশ্বাসেও ভরসা রাখার কোন কারণ বাংলাদেশের জনগণ খুঁজে পায়নি।

এছাড়া অস্ত্র ক্রয় চুক্তি নিয়েও বাংলাদেশের জনগণের আপত্তি আছে। নানান পত্রপত্রিকায় খোলাখুলিভাবেই বলা হয়েছে, চীনের সাথে ডুবোজাহজ কেনার জন্যই ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় চুক্তি করতে হয়েছে। আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র নিন্দা জানাই, বাংলাদেশের সার্বভৌমভাবে অস্ত্রক্রয় কিংবা আর যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা যে কত কম তা এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্কার বোঝা যায়। আমরা চীন থেকে মান্ধাতাপ্রায় আমলের ডুবোজাহাজ কেনার বিরোধিতা করেছিলাম, কেননা এটা আমাদের প্রতিরক্ষা বা উপকূল রক্ষায় তেমন কোন কাজে আসবে না। কিন্তু কৌতুহলউদ্দীপকভাবে এর কিছুদিন পরই আমরা দেখেছি ভারত মায়ানমারের কাছে ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী টর্পেডো বিক্রি করছে। এভাবে দক্ষিণ এশীয়া জুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ছড়িয় আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি যেমন ঘটছে, তেমনি ঘটছে জনগনের অর্থের অপচয়। এছাড়া, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের ভূ-রাজনৈতিক-সামরিক স্বার্থ ও পরিকল্পনার সাথে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।

উন্নয়ন সহযোগিতার নামে ভারত বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ দেয়া ও তাদের পণ্য-সরঞ্জাম কেনার শর্তে তুলনামূলক বেশি সুদে এই ঋণ কার আগ্রহে, কার স্বার্থে, জনগণতা জানতে চায়।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনাদের মাধ্যমে আমরা পরিস্কার বার্তা দিতে চাই, প্রথমত আমরা ভারত-চীন সহ সকল রাষ্ট্রের সাথেই মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক চাই। কিন্তু বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থকে লঙ্ঘন করেই এই চুক্তিগুলো সম্পাদন করছেন্ আপনারা দেখতে পেয়েছেন, ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তিগুলো বিষয়ে খোলাখুলি কোন আলাপ সংসদে বা গণমাধ্যমে তোলা হচ্ছে না। আমরা দাবি করছি, এই চুক্তি ও সমঝোতাগুলো জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা হোক এবং দেশবিরোধী প্রতিই ধারা বাতিল করা হোক এবং তিস্তা-পদ্মার পানি, বাণিজ্যঘাটতি হ্রাস, সীমান্তহত্যা বন্ধ সহ বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় আসুক।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আমরা আরও দেখলাম সরকার সকলকে খুশী করার রাজনীতি অব্যাহত রেখেছে। একদিকে ভারতের সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করে অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে মৌলবাদী শক্তিকে তুষ্ট করার ও হাতে রাখার কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির মত ঘটনায়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সরকার সকল শিশুর জন্য অভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার দায়টি এড়াবার ফলেই বিপুল পরিমান কওমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হযেছে। এদের শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। এদের জন্য যথাযথ শিক্ষার বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব ছিল সরকারের। কিন্তু সেই দায়টি এড়িয়ে উপরন্তু শিক্ষার মান উন্নয়ন না করেই তাকে সমমান দেয়ার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন একটা বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। কিন্তু সরকারের আসল লক্ষ্য হলো যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাবান সবগুলো মহলকে তুষ্ট করা, সেই কারণেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুতর সঙ্কটের মুখে ফেলে দিয়েও সরকার হেফাজতের সাথে এই রকম চুক্তি সম্পাদন করছে।

গনতান্ত্রিক বাম মোর্চা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিতে চায় যে, হেফাজতের সাথে এই রকম চুক্তি করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সরকার আসলে একদিকে তার ক্ষমতার গতি পাকাপোক্ত করতে চায়, আরেকদিকে সকল শিশুর শিক্ষার দায় এড়িয়ে এই শিশুদের সামাজিক দাননির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষার হাতে ছেড়ে দিতে চায়। এর মধ্য দিয়ে সমাজে বিভাজনকেই আরও তীব্র করাই তার লক্ষ্য। সরকার এমনকি একদিকে মৌলবাদীদের ক্রমাগত নানান সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাজনীতির মাঠে হাজির রেখে জনগণের প্রধান প্রশ্নগুলোকে আড়াল করছে, আরেকদিকে অসাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদী বিরোধী লড়াইয়ের নামে আরেকদলকে নামিয়ে দিচ্ছে প্রতিরোধ করার জন্য। এর মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনীতিকে আড়াল করার একটা দুরভিসন্ধিই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এরই উদাহরণ হলো প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থ ভারত সফরের বিষয়টি গণমাধ্যম থেকে অদৃশ্য হযে যাওয়া, অপ্রয়োজনীয় সব প্রসঙ্গ সামনে চলে আসা।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এই অবস্থায় আমরা দেশপ্রেমিক জনসাধারণের প্রতি আহবান জানাতে চাই, জাতীয় স্বার্থ এবং এদেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে এই অনির্বাচিত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার সংকোচনের বিরুদ্ধে এবং জনজীবনের জ্বলন্ত সংকট নিরসনের দাবিতে আন্দোলনের পথেই জনগণের ঐক্য গড়ে উঠবে এবং এ পথেই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

কর্মসূচি: ২৫ এপ্রিল বিকাল ৫টায় ঢাকাসহ সারা দেশে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বিক্ষোভ সমাবেশ। ঢাকাতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments