Wednesday, November 20, 2024
Homeফিচারবাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের স্বরূপ

বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের স্বরূপ

বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সমাজ জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ভারতীয় আগ্রাসনের কালো থাবা পড়েনি। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনসাধারণ আর ভারতের শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা একইরকম ছিল না। ভারতের জনগণ সহযোগিতা করেছে মানবিক কারণে, আর ভারতের পুঁজিপতিদের মুখপাত্র তার শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হয়েছে এদেশে তাদের সাম্রাজ্যবাদী বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে বাংলাদেশের জনগণ পিষ্ট। বর্তমানে এই আগ্রাসন অত্যন্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারতের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, ভারতও তাকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবরকম সুরক্ষা দিচ্ছে। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে নিষ্পেষিত এ দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তাই রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের চরিত্র কী, কোন অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রয়োজনে এই আগ্রাসনÑ এ প্রশ্নে মীমাংসা অত্যন্ত জরুরি।

ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র
আওয়ামী সরকার প্রতিনিয়ত প্রচার করছে ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আবার বহু প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক মানুষ মনে করেন ভারত একটি আধা উপনিবেশিক, আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশ। ভারতে বৃহৎ পুঁজিপতি শ্রেণি নেই, যা আছে সব সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার দালাল বুর্জোয়া। বাস্তবে ভারত বহু পূর্বেই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অর্জন করেছে। ভারত একই সময়ে চীনের নেতৃত্বাধীন ‘সাংহাই সামরিক জোট’ এবং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ‘কোয়াড’-এ যুক্ত- যা প্রমাণ করে ভারত এখন আর সাম্রাজ্যবাদের ‘জুনিয়র পার্টনার’ নয় বরং তার নিজস্ব সাম্রাজ্যবাদী অভিলিপ্সা আছে এবং সে নিজের মতো করে এগোচ্ছে। ভারতের এই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অনুধাবনে ব্যর্থ হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার সকল সাধারণ মানুষই ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হবেন।

সরকারি হিসাবে ভারতের বর্তমান অর্থনীতির আকার ৩.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তারা তাদের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে রূপান্তর করতে চায়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে আইএমএফ তাদের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, জিডিপির বিচারে বিশ্বে ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থান ৫ম। এ দেখে এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, ভারতের সাধারণ জনগণ খুব ভাল আছেন। বরং লক্ষ কোটি মানুষকে পথে বসিয়েই এই ‘ম্যামথাকৃতির’ অর্থনীতির জন্ম হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্সফামের তথ্য বলছে, ভারতের ধনী মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের মোট ৬০ শতাংশ সম্পদ। আর নিচের তলার দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। মানুষকে নিঃস্ব করেই গড়ে উঠেছে সম্পদের এই বিপুল কেন্দ্রীকরণ। অক্সফামই জানাচ্ছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে শতকোটি টাকার মালিকের সংখ্যা ১০২ জন থেকে বেড়ে ১৬৬ জন হয়েছে। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই ভারতে একটি শক্তিশালী একচেটিয়া পুঁজির জন্ম হয়েছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, হাজার হাজার নিরন্ন কৃষক বা কৃষিক্ষেত্রে অনেকটা সামন্তীয় ধাঁচা বহাল থাকার পরও কী করে ভারত একচেটিয়া পুঁজির জন্ম দিতে পারে? তারা ভুলে যান যে, অসম বিকাশই পুঁজিবাদের ধর্ম। পরিকল্পিত অর্থনীতি ছাড়া আজকের বিশ্বে কোন দেশই কৃষি ও শিল্পে সুষম বিকাশ ঘটাতে পারবে না। এ আলাপও আছে যে, ভারতে তো প্রচুর বিদেশী পুঁজি খাটছে। সেই ভারত কি করে বাইরে পুঁজি লগ্নি করবে। বর্তমান সময়ে কোন পুঁজিপতিরাই জাতীয় উন্নতির ধার ধারে না। তার নিজের দেশকে ক্ষেত্রসাপেক্ষে যেমন অন্যদেশের পুঁজির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, আবার একইভাবে সে যদি দেখে নিজের দেশের চেয়ে বাইরে পুঁজি বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি- তাহলে সে তাই করে। চীন ও আমেরিকা পরস্পর পরস্পরের বিরোধী হলেও উভয় রাষ্ট্রেই উভয়ের পুঁজি খাটছে।

সত্য হলো, ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজি ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ৫০০টি ‘সুপার মনোপলি’ গোষ্ঠির মধ্যে ভারতের সংখ্যা ৯টি। ‘ফোর্বস ২০০০’ এর করা বিশ্বের বৃহৎ একচেটিয়া গোষ্ঠির তালিকায় ভারতের ৫৫টি একচেটিয়া গোষ্ঠির নাম আছে, যেখানে জার্মানির সংখ্যা ৫২টি। শুধুমাত্র টাটা গ্রুপই ৬টি মহাদেশের একশটিরও বেশি দেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। ভারতীয় কোম্পানি ‘আর্সেলর মিত্তাল’ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ‘স্টিল’ উৎপাদক। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ‘ট্রাক্টর’ বিক্রি করে ‘মাহিন্দ্রা’। আফ্রিকাতে ভূমি দখলের শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় কর্পোরেশনগুলি। অর্থাৎ ভারতীয় পুঁজিপতিরা ট্রাস্ট, কার্টেল, সিন্ডিকেটের জন্ম দিয়ে গোটা পৃথিবীতেই তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করছে। শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০০৮ সালেই ভারত ১২২ টির অধিক দেশে পুঁজি লগ্নি করতো। শুধু পুঁজি বিনিয়োগ নয়; নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, কেনিয়া, জাম্বিয়ার মতো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও তারা নানান মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অধিপত্য ধরে রাখতে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে।
এ দিকগুলি বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি ভারত শুধু সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রই অর্জন করেনি, উপরন্তু পৃথিবীর দেশে দেশে তার আক্রমণের থাবা প্রসারিত করেছে।

ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বাংলাদেশ
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যেখান থেকে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ অঞ্চলের দেশসমূহে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ফলে বঙ্গোপসাগরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ (ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে যে দেশগুলি রয়েছে) অঞ্চলে প্রায় তিনশ কোটি মানুষের বাজার। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ চায় আমেরিকা, চীন, ভারতের মতো শক্তিগুলি। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে ভারত-আমেরিকা-চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ এই ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নে ভারত ও চীন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। সময়ে সময়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। আবার দীর্ঘদিন থেকে ভারত ও আমেরিকা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। এ সত্ত্বেও ভারত এবং চীন উভয়েই এক মেরু বিশ্ব থেকে বহু মেরু বিশ্বের দিকে যেতে চায়, এ জন্যই দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্যের প্রশ্নে ভারত আমেরিকার মুখোমুখিও দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকা, চীন ও ভারতের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব, আমেরিকা-ভারত বিরোধের মধ্যে দিয়েই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

এটি অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশে চীন বা আমেরিকার চেয়েও ভারতীয় হস্তক্ষেপের মাত্রা তীব্র ও প্রকট। ২০১৪ সালের জাতীয় সংষদ নির্বাচনের পূর্বে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মুহম্মদ এরশাদকে একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পরবর্তীতে এরশাদ প্রেসের সামনে সেটি প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালে ভারতের ভূমিকা আরও দৃঢ়, অথচ আওয়ামী লীগ ততদিনে জনগণ কর্তৃক পুরোপুরি প্রত্যাখ্যাত।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি ভারতের কাছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সংহতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের তিন দিকই ভারতীয় সীমান্ত দ্বারা বেষ্টিত। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটা ভারতের বুকের ভেতর। ভারত মনে করে বাংলাদেশে অন্য কোন শক্তির অবস্থান তাদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। আবার ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খাত ৭টি রাজ্যের সাথে সংযোগ ও সংহতি ধরে রাখতে হলেও এ নিয়ন্ত্রণ তাদের চাই। ‘চিকেন নেক করিডোর’ দিয়ে ‘সেভেন-সিস্টার্সে’ যাতায়াত, নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করতে পারলে তাদের সময় ও খরচ দুটোই বাঁচে। সাত বোন খ্যাত রাজ্যগুলিতেও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তাই যেকোন মূল্যে বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন : বিপন্ন হবে দেশের স্বার্বভৌমত্ব
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে ইতিমধ্যেই একটি জটিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ গড়ে উঠেছে। আপাত অর্থে মনে হতে পারে আমেরিকা, চীন এবং ভারতের মধ্যে এই ত্রিমুখী দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু না, এই দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করার মতো স্বাধীন ও স্বনির্ভর পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর নেই। উল্টো আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতার স্বার্থে বাংলাদেশকে ক্রমেই এ সংঘাতে জড়িয়ে ফেলছে। এ সময় আওয়ামী লীগ আমেরিকার বিরাগভাজন হলেও সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়নি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ চীনের। বাংলাদেশে যে ১০০টি ‘ইকোনোমিক জোন’ ও ২৭টি ‘হাইটেক পার্ক’ নির্মাণ হচ্ছে সেখানে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ আছে। আবার চীন বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের প্রধানতম যোগানদাতা। এ স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্ধারক ভূমিকা নিচ্ছে ভারত। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থির করছে তা নয়, বরং সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশকে বিপন্ন করে তুলছে। আমরা পূর্বেই দেখিয়েছি, ভূ-রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই ভারত তার নিরাপত্তার স্বার্থে সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অথচ বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলিতে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই ট্রানজিটের নামে ভারত করিডোর সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। পণ্য পরিবহণের নামে পাওয়া করিডোর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক সংকট ও বিদ্রোহ দমনের জন্য ভারতীয় সেনা বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে পারে- এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে স্থলপথ ও রেলপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, আবার মংলা ও চট্রগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতিও পেয়েছে ভারত। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ‘কোস্টাল সার্ভিল্যান্স’ বা উপকূলীয় নজরদারির জন্য ভারত স্যাটেলাইট চালু করেছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ সকল ক্ষেত্রে ভারতের অবাধ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদী অন্তর্দ্বন্দ্ব যত তীব্র হবে, ভারত-চীন দ্বন্দ্বও তত প্রকট হবে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারতের জন্য ভূ-সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করবে। আবার একইভাবে চীনও তার অর্থনৈতিক প্রভাব খাটাবে। ফলে বাংলাদেশের মানুষ যুক্ত হয়ে পড়বে একটি অযাচিত সংকটে।

বাড়বে অর্থনৈতিক সংকট
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ডলার সংকটে আছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। ডলারের বিপরীতে টাকার মান গত এক বছরে কমেছে প্রায় ৩৫টাকা। এদিকে এ বছর থেকেই শোধ করতে হবে মেগা প্রকল্পগুলোতে নেয়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ। কিন্তু বাংলাদেশের হাতে ডলার নেই। এই ঋণ পরিশোধের জন্যও তাকে ঋণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ভারতের সাথে টাকা ও রুপিতে লেনদেন শুরু করেছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে প্রায় ১৬০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ভারত ১৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করে মাত্র ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ প্রতি বছর বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১২০০ কোটি ডলারের। আর এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশ যে পণ্য ভারতে রপ্তানি করে সেটি রুপিতে বিনিময় শুরু হয়েছে। ভারতকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। এই রুপি-টাকায় একবার লেনদেন শুরু হলে তা বিভিন্ন সেবামূলক বাণিজ্যে ছড়িয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে পারে।

বাস্তবে রুপিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রুপান্তরের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী অভিলিপ্সা। এখনও গোটা বিশ্বে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারই প্রধান বিনিময় মাধ্যম। তবে ইতিমধ্যেই ‘ডি-ডলারাইজেশন’ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২২টি দেশ রুপিতে লেনদেন শুরু করেছে। রুপিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রূপান্তরের চেষ্টা মূলত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। ফলে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটবে না, তারা নির্ভরশীল হবে আর ভারতীয় মুদ্রা শক্তিশালী হবে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য জ্বালানিখাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জ¦ালানীর ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভর নীতি নিয়ে চলছে। ফলে গোটা এনার্জি সেক্টরকে সে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে। ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন, পেট্রোনেট এলএনজিসহ ভারতীয় কোম্পানিগুলি জ্বালানি খাতকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। চুক্তি হয়েছে ভারতের কাছ থেকে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। শিল্প উৎপাদনের জন্য আবশ্যক জ্বালানিখাতকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে ভারতের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলা হলো। অথচ উচিত ছিল এরকম একটি আগ্রাসী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর যতটা সম্ভব কম নির্ভরশীল হওয়া।

ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
বাংলাদেশে ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রবল। বাংলাদেশে বিদেশী টিভি চ্যানেলের শতকরা ৯০ শতাংশই হলো ভারতীয়। বাংলাদেশে ভারতের এত বিশাল সংখ্যক টিভি চ্যানেল দেখানোর অনুমতি থাকলেও ভারতে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল দেখানোর অনুমতি নেই। ব্লিৎসের এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি মাসে ভারতীয় চ্যানেল স্টার প্লাস ১৯৫ হাজার ডলার, স্টার মুভিজ ১১৮ হাজার ডলার, সনি ১২৩ হাজার ডলার, স্টার গ্লোল্ড ৬১ হাজার ডলার, জি সিনেমা ৯৫ হাজার ডলার আয় করে। এ তালিকা আরো দীর্ঘ করা যাবে। শুধু আর্থিকভাবে নয়; এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠান ও বিষয়বস্তু সমাজ মননে গভীর প্রভাব ফেলছে। ছোট ছোট শিশুরা পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। ‘মটু-পাতলু’, ‘শিবা’, ‘ছোটা ভিম’ ইত্যাদি কার্টুন চরিত্রগুলির প্রভাবে এক ধরণের কাল্পনিক ‘হিরো’ বা ‘সংকটমোচন’ চরিত্র হিসাবে তারা নিজেদের ভাবতে থাকে। টিভি সিরিয়ালে দেখানো বিলাসী জীবন, সন্দেহ, পারিবারিক কলহ পরিবারগুলিতে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছে। অথচ নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মানসম্মত নাটক তৈরি হতো বাংলাদেশে। বাস্তবে এই একে ধ্বংস করতে না পারলে ভারতীয় নাটকের বাজার তৈরি হতো না। একে অনেকে ‘সফ্ট পাওয়ার’ বলেন। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন- অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন টিকিয়ে রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ধ্বংস করছে নদী-প্রাণ-প্রকৃতি
আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভারত একতরফাভাবে নদীশাসন করছে। ফারাক্কার ভয়াবহ প্রভাবের কথা আমরা জানি। তিস্তা বা ফেনী নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের মানুষ এখনও পাননি। বরাক নদী উজানে টিপাই বাঁধ সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনার প্রবাহকে শুকিয়ে দিচ্ছে। ভারত থেকে প্রায় ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ সকল নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট করে ভারত বাংলাদেশের সমূহ ক্ষতি করছে। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীতে সাগর থেকে নোনা পানি প্রবেশ করছে। স্বাভাবিকভাবেই নোনা পানিতে স্বাদু পানির মাছ, জলজ উদ্ভিদ কিছুই বাঁচতে পারে না। ফলে কমছে কৃষিজমির উর্বরতা। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গোটা সুন্দরবনকেই বিপন্ন করছে। আর এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ভারত।

বন্ধুত্বের উপহার- ফেলানির ক্ষত-বিক্ষত লাশ!
ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে, অথচ সীমান্তে বিএসএফের দ্বারা বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার মিছিল থামছে না। ২০১৮ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। সে প্রতিশ্রুতি তারা রাখেনি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৩Ñ এই নয় বছরে বিএসএফের হাতে ২৪৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এর কোন একটিরও বিচার হয়নি। সাম্রাজ্যবাদ জনগণের বন্ধু নয়, রক্তখেকো জানোয়ার।

সাম্রাজ্যবাদকে রক্ষার প্রয়োজনেই হিন্দুত্ববাদ এসেছে
অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের উপর ভারতের আগ্রাসনের কারণ বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। বাংলাদেশ একটি মুসলমান রাষ্ট্রÑ এ কারণে ভারত বাংলাদেশের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াচ্ছে। এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ভারতের মুসলিম ধর্মাবলম্বী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হিংস্র আক্রমণ নামিয়ে আনছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশেও একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রদায়িক জিগিরে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আওয়ামী লীগও এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের উপর ভারতীয় শাসকদের আগ্রাসনকে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করলে এর মূল দিকটি আড়াল হয়ে যায়। আক্রমণের গভীরতা সঠিকভাবে চিহ্নিত হয় না। এতে মনে হতে পারে, ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বিজেপি অপসারিত হয়ে তথাকথিত কোন গণতান্ত্রিক শক্তি (!) ক্ষমতায় আসীন হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। ভারতের এ আগ্রাসন যদি শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদী অর্থাৎ মুসলিমবিরোধী চরিত্রের হয়ে থাকে, তাহলে নেপাল বা শ্রীলংকায় ভারতীয় আগ্রাসন থাকার কথা নয়। অথচ বিশে^র দুটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের একটি ভারত, অন্যটি নেপাল হওয়ার পরও নেপালের জনগণের মধ্যে প্রবল মাত্রায় ভারতবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান। এই মনোভাব ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের কারণে। শুধু নেপাল নয়; শ্রীলংকা, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মালেশিয়ায়ও ভারত আগ্রাসন চালেচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের মতো নেপাল, শ্রীলংকার মানুষও বিক্ষুব্ধ। এ ভারতীয় আগ্রাসনের কারণ শুধু ধর্মীয় বিদ্বেষ হলে, ভারত সৌদি আরব, আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতো না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিও ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখতো না। ভারত শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে। আফ্রিকার তামা সমৃদ্ধ জাম্বিয়াকে লুট করে নিচ্ছে। শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদ বা ধর্মীয় বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে ভারত এ তাণ্ডব চালাচ্ছে- এ অত্যন্ত খোঁড়া যুক্তি, যা মূল সমস্যার সঠিক উত্তর দিতে অপারগ।

ভারত ও বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সংযোগ অতি পুরাতন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ কালপর্বে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঘটনা পরম্পরা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও জাতিগত বোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। অতীতে এ অঞ্চলে (বাংলাদেশ) মূলত কৃষিজীবী মানুষেরা বসবাস করতেন। তাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা ছিলো জমিদার-জোতদারদের দ্বারা। এই জমিদাররা মূলতঃ ছিলেন উচ্চবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত এবং থাকতেন কলকাতায়। সাধারণ কৃষকরা ছিলেন তাদের রায়ত বা প্রজা। জমিদাররা শুধু অত্যাচার-জুলুম নয়, প্রজাদের মধ্যে হীনমন্যতা-অবমাননার মধ্যে রাখতেন। ফলে প্রজাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জমিদারদের অত্যাচারে ক্ষোভ তৈরি হয়। যার সাথে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে ছিল সামাজিক অবমাননা থেকে মুক্তির আকুতি। বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন জনগণের মনকে এই ক্ষোভ ও অবমাননা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। পারেনি ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নিচু, জাতভেদ মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজের জন্ম দিতে। উল্টো অর্থনৈতিক জীবন থেকে উদ্ভূত অবমাননা এবং ক্ষোভকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণায় রূপান্তরিত করেছে। আপোষকামী কংগ্রেসের হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী জাতীয়তাবাদ, কার্যত মুসলিম ধর্মাবলম্বী ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অনাস্থা ও সন্দেহের ফলাফলে রাজনীতিতে মুসলিম লীগের আবির্ভাব ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় আসে দ্বি-জাতি তত্ত্ব, ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারত ও পাকিস্তান দুইদেশের শাসকরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই এই বিভেদকে উস্কে দিয়েছে, জিইয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ ও ধর্মনিরপেক্ষ ধারার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, কিন্তু এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মতো পুঁজিপতি শ্রেণির দল থাকায় সেটি এগোতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে আওয়ামী লীগই এর গলা টিপে ধরে, গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার দ্বার রুদ্ধ করে। এরপর দেশের শাসনক্ষমতায় যারাই এসেছে, নিজেদের ক্ষমতা সুরক্ষিত করতে সমাজে অগণতান্ত্রিক চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছে।

‘আচ্ছে দিন’-এর স্লোগানকে সামনে এনে মুদি সরকার ‘অখণ্ড ভারত’, ‘হিন্দু ভারত’ গড়ার কথা বলছে। ইতিহাসের অনৈতিহাসিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে। গোটা মুসলিম শাসনকালকে অন্ধকার যুগ বলে আখ্যায়িত করছে। মুসলমান শাসকদের কপট, ঠগ এবং আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই ভারত সরকারই আবার যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, তখন জনমনে তীব্র ঘৃণার সঞ্চার না করে পারে না। এই ঘৃণাকে সঠিক দিশা দেয়ার মতো গণতান্ত্রিক চর্চা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিনির্ভর গণআন্দোলন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অত্যন্ত দুর্বল। ফলে সঠিক দিশা না পেয়ে এই ঘৃণা সুপ্ত জাতিগত অবমাননাবোধ, হীনমন্যতা এবং এ থেকে উদ্ভূত ক্ষোভকে উস্কে দেয়, যা দেশে একটি সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করে। ভারতীয় আগ্রাসনকে ধর্মীয় আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এতে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের শাসকদেরই লাভ, মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভেদ তৈরি করা তাদের জন্য সহজ হয়।

ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন
শুধু বাংলাদেশ নয়, দুনিয়ার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ নগ্নভাবে তার থাবা বিস্তার করছে। গোটা বিশ^কে অগ্রাহ্য করে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল, আমেরিকা তাকে সমর্থন করছে। পশ্চিমের দেশগুলোতে মুসলিমবিরোধী মানসিকতা তৈরির চেষ্টা করছে এই হামলাকে যুক্তিসঙ্গত করার জন্য। এর বিপরীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামছেন ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। খোদ আমেরিকায় বিমান বাহিনীর একজন সদস্য ফিলিস্তিনিদের মুক্তির স্লোগান গায়ে আগুন জ¦ালিয়ে আত্মহুতি দিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে তাই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তব্যকে বুঝতে হবে। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে ভারতীয় কর্পোরেটদের নেতৃত্বে চলা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শোষণকে বুঝতে হবে। ভারতে হিন্দুত্ববাদের জিগির তোলা হয়েছে সে দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থেই। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ভারতের জনগণ আমাদের দেশের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের মিত্র। এই সত্য না বুঝে হিন্দুত্ববাদকে আলাদা করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করাই হউক, সেটা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালীই করবে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments