Monday, December 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদবাসদ নেতৃবৃন্দের সরেজমিনে অভয়নগরের মালোপাড়া পরিদর্শন

বাসদ নেতৃবৃন্দের সরেজমিনে অভয়নগরের মালোপাড়া পরিদর্শন

বাসদ নেতা হাসিনুর রহমান
বাসদ নেতা হাসিনুর রহমান

ক্ষমতাকেন্দ্রিক নোংরা রাজনীতির নিষ্ঠুরতার বিষবাষ্পে সাধারণ জণগন আজ বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছে। মসনদ দখলের লড়াইয়ে জোট-মহাজোটের সংঘাত ও সহিংসতায় দেশ আজ টালমাটাল। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন একদল বোমাবাজি, ককটেলবাজি, বাসে-ট্রাকে পেট্র্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে নিরীহি মানুষকে পোড়াচ্ছে। আর জনবিচ্ছন্ন ক্ষমতাসীন সরকার পুলিস-আরএবি-বিজিবি দিয়ে গণতন্ত্রের গলায় টুঁটি চেপে ধরে নগ্ন ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন নিপীড়নকেই একমাত্র হাতিয়ার করেছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে একটু একটু করে এগিয়ে আসছিল ভোটের দিন। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই শুরু হল নতুন এক আক্রমণ।দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসে সহিংস আক্রমণ।

কক্সবাজারের রামু-উখিয়া, পাবনার সাথিয়া, বরিশালের চরকাউয়ার মতোই এমনি একটি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কবলিত এলাকা যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়া। এখানে সাম্প্রদায়িকতার নোংরা  রাজনীতি প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে শঙ্কিত করে তুলেছে। গত ৮ জানুয়ারি বাসদ যশোর জেলার সমন্বয়ক কমরেড হাসিনুর রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক প্রতিনিধী দল অভনগরের পরিদর্শন করে। এ দলে আরো ছিলেন শ্রমিকনেতা কিশোর অধীকারী, লিপন আহমেদ, মাস্টার জাকির হোসেন , ছাত্র ফ্রন্ট নেতা উৎপল কুমার ঘোষ।

ভৈরব নদের তীরে চাপাতলার মালোপাড়ায়।ছোট ছোট মাটির দেয়াল দাড়িয়ে আছে অথচ চালগুলো নেই, সেগুলো সব আগুনে পুড়ে ছাই করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখানে সেখানে কালো ছাই পড়ে আছে, চারিদিকে উৎকট পোড়া গন্ধ। ছোট ছোট ছেলেমেয়রা ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল আগন্তুকদের দিকে। ওরা যেনো সত্যিই বোবা হয়ে গেছে।ওদের জামা কাপড়,বই-পত্র সব কিছুই চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছে। দুই জন পয়ত্রিশ উর্দ্ধ নারী এগিয়ে এলেন বাসদ প্রতিনিধি দলের দিকে। ওদের একজন সাধনা সরকার,আর অন্যজন টুম্পা মালো। সাধনা সরকার তার বাড়ি দেখিয়ে বললেন, তার বাড়িতে যা ছিল সবই লুটপাট হয়ে গেছে,বাড়ির দরজা জানলা সবই কুপিয়ে ছিন্ন-বিছিন্ন করেছ ফেলেছে। কমরেড হাসিনুর রহমান বললেন, বোন, তোমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই।  আমরা তোমাদের পাশে আছি।এই দেশ হিন্দু মুসলমান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন করেছি, এই দেশ তোমার আমার সকলেরই।

অভয়নগর ১আর অল্প একটু পরেই যে বাড়িটি ওটি টুম্পা মালোর।বাড়িটির দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করছিল আর আহাজারির করুন মাতম তুলছিলেন তিনি। তার জীবিকার একেমাত্র অবলম্বন সেলাই মেশিনটি লুটপাট হয়ে গেছে। সাধনা সরকার, টুম্পা মালোদের মতো অসংখ্য নারীর আহাজারিতে এই জেলে পল্লীর আকাশ আজ  ভারী হয়ে উঠেছে। ১২০টি পরিবারের ২০০০ জনেরও বেশি নারী পুরুষ আজ সর্বস্বান্ত। ওদের থাকবার ঘরবাড়ি নেই,পরবার জন্য পোশাক পরিচ্ছদ নেই,খাওয়ার জন্য খাবার নেই।সারাবছর ভৈরব নদীতে মাছ ধরে যেটুকু সম্পদ তৈরী করেছিলতা সবই লুটপাট করে নিয়ে গেছে,যেটুকু অবশিষ্ট ছিল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার পথে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে গেছে। ভৈরব নদের তীরে চাপাতলার মালোপাড়ার জেলে পল্লীর এই মানুষগুলো আজ  সহায়-সম্বলহীন সম্পূর্ণ নিঃস্ব।

কেন এই লুটপাট-অগ্নি সংযোগ? ওদের অপরাধ ওরা হিন্দু। এই অপরাধে সকালে একবার দুপুরে একবার ঠেঙিছে জামাত-শিবিরের কর্মীরা এবং সন্ধ্যায় আবার আক্রমণ চালিয়েছে। প্র‌ত্যক্ষ্ দর্শীদের ভাষ্যনুযায়ী, এ পাড়ার সমস্ত মানুষ এই প্রবল শীতে ভৈরব নদ সাঁতরে পার হয়ে নদীর ওপারে আশ্রয় নিয়েছিল । জামায়ত শিবিরের কর্মীদের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচতে ১৩ দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল পরাণ মণ্ডলের স্ত্রী।ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ৮৫ বছরের বৃদ্ধাও।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জামায়ত নেতারা গুজব ছড়ায় যে মালো পাড়ার ‘মালাউনরা’ ৪ জন জামাত-শিবির কর্মীকে মেরে ফেলেছে। এরপর স্থানীয় জামাতের আমীর আজিজ মাওলানা ও স্থানীয় এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল জামাত-শিবিরের কর্মী এই বর্বরোচিত হামলা ঘটায়। হামলার সম্ভাব্যতা অনুধাবন করে স্থানীয় সাংসদ, ওসি, এসপিকে বারবার ফোন করেও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করানো যায়নি। ঘটনার পরদিন সকালে পুলিস ঘটনাস্থলে এসে পৌছাঁয়। অথচ ঘটনাস্থল থেকে ২০ মিনিট দূরে অভয়নগর থানা অবস্থিত।অভয়নগর ২

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments