Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদবিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

Basod Sylhet Michil Photo 05-03-14

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি সিলেট জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ৫ মার্চ ২০১৪ বুধবার বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বাসদ সিলেট জেলা আহবায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সুশান্ত সিনহার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ সিলেট জেলা কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট হুমায়ূন রশীদ সোয়েব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর কমিটির সভাপতি রেজাউর রহমান রানা প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তাগন বলেন, আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট তাদের বিগত মেয়াদে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল ৬ বারে মোট ৪৭%। ভোটার ও প্রাথীবিহীন একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসতে না বসতেই আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে মহাজোট সরকার। বিদ্যুতের দাম এখন প্রতি বছরই, এমনকি কখনো কখনো একই বছরে দুই বার করে বাড়ানো হচ্ছে। কখনো অর্থনীতির লোকসান কমানোর কথা বলে, কখনো আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য গত ২০ বছরের নির্বাচিত সরকারের আমলে বাড়ানো হয়েছে ১৯ বার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দাম বাড়িয়েছে ১৩ বার। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সাতবার ও ২০১০-২০১২ মেয়াদে মহাজোট সরকারের আমলে ৬ বার দাম বাড়িয়েছে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় বিদ্যুতের দাম ছিল প্রতি ইউনিট ২ টাকা ২৬ পয়সা। ২০১২ সালের ১ সেপেম্বর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছিল পিডিবির জন্য প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ৮৬ পয়সা, ডিপিডিসি ৬ টাকা ৩৫ পয়সা, ডেসকো ৬ টাকা ৪৫ পয়সা, ওজোপাডিকো ৫ টাকা ৮২ পয়সা এবং আরইবির জন্য প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সা। অর্থাৎ মেয়াদ শেষে বিদ্যুতের দাম দাঁড়ালো প্রতি ইউনিট গড়ে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে পিডিবি গ্রাহকদের বিল প্রতি ইউনিটে ৭৯ পয়সা বাড়বে। ডিপিডিসি গ্রাহকদের বাড়বে ইউনিট প্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা। ডেসকো গ্রাহকদের ৮৪ পয়সা, ওজোপাডিকো গ্রাহকদের ৭৭ পয়সা আর গ্রামের মানুষ অর্থাৎ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের দাম বাড়বে ইউনিট প্রতি ৬৯ পয়সা। আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের সাফল্যের কথা বেশ জোরেশোরেই প্রচার করে। অথচ এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে না। আজকের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সবচেয়ে গরিব আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট ( এক কিলোওয়াট ঘন্ট) বিদ্যুতের দাম এক টাকা ৩৭ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর সবচেয়ে ধনী আবাসিক গ্রাহকের প্রতি ইউনিটের দাম বাড়াতে বলেছে মাত্র দুই পয়সা। কৃষি জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু পিডিবির প্রস্তাবে সেচপাম্পের জন্য প্রতি ইউনিটের মূল্যবৃদ্ধিও প্রস্তাব করা হয়েছে এক টাকা ৪৯ পয়সা। সেচপাম্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট এখন আছে দুই টাকা ৫১ পয়সা। পিডিবি করতে চাইছে চার টাকা। অবশ্যই সুলভে, অল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ আছে। আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎপ্লাটগুলো থেকেই আমরা সুলভে বিদ্যুৎ পেতে পারি। কিন্তু সরকার সে পথে চলছে না। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছরে মেরামত না করার কারণে ১৪টি বিদ্যুৎপ্লান্টের ২৫টি গ্যাস চালিত ইউনিট বন্ধ হয়েছে। এছাড়া বড়পুকুরিয়াসহ অনেকগুলো প্লান্ট নানা কারিগরি ত্রুটির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। গ্যাস দিতে না পারায় অনেক প্ল্যান্ট বন্ধ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে ১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জ্বালিয়ে গড়ে ৫ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যন্ত্রপাতির সংস্কার করে ৮ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে একই পরিমাণ গ্যাসে অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। (প্রথম আলো, ১৬.১.১২) তিতাসের জরিপ অনুযায়ী, অধিকাংশ শিল্পকারখানার বয়লার পুরনো ও জ্বালানি ব্যবহারে অদক্ষ হবার কারণে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। তিতাসের আওতাধীন আবাসিক গ্রাহকদের ব্যবহৃত চুলা জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষ হলে প্রতিদিন আরও ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্তমান চাহিদার তুলনায় ঘাটতি মাত্র ২০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি ব্যবহারে গড় দক্ষতা ৬০ শতাংশের মতো। একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে শতকরা ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এসব দিকে মনোযোগ দেয়া বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কোনো উদ্যোগ লক্ষিত হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের প্রধান অংশই সাধারণ মানুষ Ñ শহরের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত, গ্রামের ছোট ও মাঝারি কৃষক, ছোট ছোট উৎপাদক, দোকানদার। এরা খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও মূল্যবৃদ্ধির ফলে এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ বড় বড় শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক যারা বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তাদের জন্যে সরকার নানা রকম ভর্তুকি, কর ছাড়, আমদানি-রফতানি সহায়তা ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। তারওপর এই বড় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল বকেয়া রাখে। এরাই রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মালিক হয়ে লক্ষ কোটি টাকা লুট করছে। আমাদের সরকার, আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি-জামাত হোক, সবাই এদেরই স্বার্থ রক্ষা করে চলছে। এ অবস্থার অবসান চাইলে আসুন সম্মিলিতভাবে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা মিলে, জনগণের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো মিলে গণআন্দোলন গড়ে তুলি। বিদ্যুৎখাতে সীমাহীন লুটপাট ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি রুখে দাঁড়াই।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments