Monday, December 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - মার্চ ২০১৪বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল কর

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল কর

গণদুর্ভোগ বাড়িয়ে লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের পকেট ভারী করার সরকারি নীতি রুখে দাঁড়ান

SPB-14.03.14জনগণের অব্যাহত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে লুটেরা বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে ১৬ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশি বাধার মুখে সচিবালয়ের প্রবেশমুখে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম মোর্চার সমন্বয়কারী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, সাইফুল হক, ফিরোজ আহমেদ, ইয়াসিন মিয়া, হামিদুল হক, জোনায়েদ সাকী প্রমুখ। সমাবেশের পূর্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব, পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ১৪ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসকাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তোপখানা রোডে বাসদ মহানগর শাখার নেতা ফখ্রুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বেলাল চৌধুরী, মর্জিনা খাতুন, উপস্থিত ছিলেন মনজুরা হক, সীমা দত্ত প্রমুখ। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন-বায়তুল মোকাররম-গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি পরিকল্পনা বাতিল, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে লুটপাট বন্ধ ও রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত-নতুন প্ল্যান্ট নির্মাণ করে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বিদেশি কোম্পানির সাথে অসম গ্যাস উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি বাতিল করার দাবিতে বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ৩ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন-বায়তুল মোকাররম-গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসা এ সরকার অতীতের ধারাবাহিকতায় আগামীতেও যে গণবিরোধী শাসন চালাবে তার লক্ষণ ফুটে উঠেছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে। বিদ্যুৎখাতে বিপুল লোকসানের জন্য দায়ী বেসরকারি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বন্ধ করার পরিবর্তে এদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্ল্যান্টগুলোর মালিক বিদ্যুৎব্যবসায়ীদের মুনাফা যোগাতে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন Ñ বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ায় দাম বাড়াতে হচ্ছে, অথচ কেন উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে তা বললেন না। বরং তিনি জনগণের সাথে নিষ্ঠুর বিদ্রুপ করে উপদেশ দিয়েছেন যে – বিদ্যুৎ অপচয় কমালে দাম বাড়লেও তাদের খরচ বাড়বে না। অন্যদিকে, গ্যাসখাতে লোকসান হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তির শর্তমতে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কেনার কারণে। এসব অসম চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্যাস উত্তোলনের পরিবর্তে শেখ হাসিনা সরকার নতুন করে আরো কঠিন শর্তে ভারতীয় কোম্পানিকে বঙ্গোপসাগরে দুটি গ্যাসব্লক বরাদ্দ দিয়েছেন। ফলে বিদ্যুৎ-গ্যাসখাতে দুর্নীতি-লুটপাট ও বেসরকারিকরণ নীতির কারণেই এসব অত্যাবশ্যকীয় গণপণ্যের দাম বাড়ছে।
SPB_Ctg_03.03.14-1নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার অস্ত্র ক্রয়-৫০০০০ নতুন পুলিশ নিয়োগ-গাড়ী কেনা ইত্যাদি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করছে, মন্ত্রী-এমপিদের হলফনামায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, অথচ জনস্বার্থে বিদ্যুৎ-গ্যাসে ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে ‘টাকা নেই’। সমাবেশ থেকে দাবি জানানো হয়, দ্রুত পুরনো রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেরামত ও নবায়ন এবং সরকারিখাতে নতুন বৃহদাকার কম্বাই- সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। একইসাথে বিদেশি কোম্পানিগলোর সাথে অসম চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ও উদ্যোগে গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে হবে। মধ্যবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসখাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। বক্তারা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ও এইসকল দাবিতে শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দেশবাসী ও বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
সিলেট : বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাসদ সিলেট জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ৫ মার্চ বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে এবং সুশান্ত সিনহার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এড. হুমায়ূন রশীদ সোয়েব, রহমান রানা।

ওএনজিসি ও কনোকো-ফিলিপসের সাথে চুক্তি বাতিল কর

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ১৩ মার্চ সংবাদপত্রে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার সংশোধিত ‘পিএসসি ২০১২’ অনুযায়ি ভারতের ওএনজিসির সাথে বঙ্গোপসাগরের ২টি গ্যাসব্লক চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ১২ মার্চ ২০১৪ অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের দুই কোম্পানির সাথে আরও একটি ব্লক নিয়ে চুক্তি সই করলো। সরকার থেকে আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কনকো-ফিলিপসের সাথে আরও গ্যাসব্লক চুক্তি করারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের গ্যাসসম্পদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার প্রধান অবলম্বন। অথচ একের পর এক এসব চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীন করে, বিদেশি কোম্পানিকে এত বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যে, নিজ দেশের গ্যাস সম্পদ বাংলাদেশের জন্য কোনো কাজে লাগানো যাবে না, বরং অর্থনীতিতে বোঝা হয়ে অভিশাপে পরিণত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংশোধিত পিএসসি ২০১২-তে বিদেশি কোম্পানির অধিকতর মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের ক্রয়মূল্য আগের চুক্তির তুলনায় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, ব্যয় পরিশোধ পর্বে গভীর সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৭০ ভাগ করা হয়েছে। চতুর্থত, ইচ্ছামতো দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, পুঁজির অভাবের কথা বলে এরকম চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ৫ বছরে মাত্র ২৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে অস্ট্রেলীয় সান্টোস এবং সিঙ্গাপুরের কৃশ এনার্জি বঙ্গোপসাগরের ১১ নম্বর ব্লকের ১০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চলের সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করলো। এইরকম মডেলে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ যে শুধু বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগানোর ভবিষ্যৎ সুযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি ও জাতীয় নিরাপত্তা দুটোই হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।
জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা বারবার সরকারকে এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত হয়ে পরিবর্তে জাতীয় সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে প্রয়োজনে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় এসেই আরও দ্রুত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরের সর্বনাশা কাজে লিপ্ত হয়েছে। এই ধরনের চুক্তি কমিশনভোগী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তি ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। জনগণকে বঞ্চিত করে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেশের সম্পদ উজাড় করে দেওয়ার এইসব দুর্নীতিমূলক চুক্তির বিরুদ্ধে আমরা বিশেষজ্ঞসহ সকল পর্যায়ের মানুষকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাচ্ছি।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments