বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য গত ২০ বছরের নির্বাচিত সরকারের আমলে বাড়ানো হয়েছে ১৯ বার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দাম বাড়িয়েছে ১৩ বার। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সাতবার ও ২০১০-২০১২ মেয়াদে মহাজোট সরকারের আমলে ৬ বার দাম বাড়িয়েছে। এই যে বছর বছর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, তার কারণ কি? কারণ, বিদ্যুৎ-ব্যবসায়ীদের মুনাফা নিশ্চিত করতেই রেন্টাল-কুইকরেন্টালের নামে ডাকাতি চলছে। সেই ডাকাতির খেসারত দিচ্ছে জনগণ। এই লুটেরাদের পকেট ভারী করতে জনগণের পকেট কাটার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার নিজে, একই সাথে রেন্টাল-কুইকরেন্টালকে আইন করে বিচারের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির কাছে সাগরের গ্যাসব্লক ইজারা ইত্যাদি জনবিরোধী কর্মকা- এবং সর্বোপরি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যাতে প্রকাশিত হতে না পারে সেজন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। এই সরকারই একদিকে টুয়েন্টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনের নামে হিন্দি গান আর নাচের জলসা বসাচ্ছে, অন্যদিকে লক্ষ কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রেকর্ড করার আয়োজন করেছে। আসলে বিদ্যুৎ নিয়ে এ ধরনের নগ্ন-নির্লজ্জ লুটপাটকারী নীতি শুধু আওয়ামী লীগ একা অনুসরণ করছে তা নয়, বিগত বিএনপি-জামাতও একই নীতি অনুসরণ করেছে। এখন সময় এসেছে সরকার ও শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনগণের সমস্ত অংশের মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলা, বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি তৈরি করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বাসদ ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ঢাকার সূত্রাপুর, শাহবাগ-নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর-আগারগাঁও, লালবাগ-আজিমপুর, সেগুনবাগিচা এবং মিরপুর-পল্লবী অঞ্চলে পৃথক পৃথক মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
১৮ মার্চ সূত্রাপুর থানা শাখার উদ্যোগে বিকাল ৫টায় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে সমাবেশ শেষে লোহারপুল ও কাঠেরপুল এলাকায় দুটি পৃথক পথসভা করা হয়। ২১ মার্চ বাসদ শাহবাগ থানার উদ্যোগে বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে একটি মিছিল কাঁটাবন, এলিফেন্ট রোড, নীলক্ষেত হয়ে নিউমার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পথে বিভিন্ন পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২১ মার্চ বিকালে মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিক্ষোভ মিছিল মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, কৃষিমার্কেট, লিংকরোড প্রভৃতি এলাকা প্রদক্ষিণ করে। পথে বিভিন্ন স্থানে সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
২৮ মার্চ সেগুনবাগিচা আঞ্চলিক শাখা, লালবাগ-আজিমপুর থানা শাখা, মিরপুর-পল্লবী থানা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের সামনে থেকে মিছিলসহ সেগুনবাগিচা বাজার, শিল্পকলা একাডেমি, বারডেম-২, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এলাকা প্রদক্ষিণ করে। সেগুনবাগিচা বাজার ও শিল্পকলা একাডেমির সামনে দুটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মার্চ লালবাগ-আজিমপুর শাখার উদ্যোগে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড ও আজিমপুর সুপারমার্কেটের সামনে পথসভা ও এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মার্চ বিকালে মিরপুর-পল্লবী শাখার উদ্যোগে পল্লবী বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ শেষে মিছিলসহ মিরপুর ১১ নাম্বার ঘুরে পূরবী সিনেমা হলের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসব মিছিল ও সমাবেশে নেতৃত্ব দেন নগর বাসদ নেতা ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন, বেলাল চৌধুরী, কল্যাণ দত্ত, মর্জিনা খাতুন, স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু, মলয় সরকার, তাসলিমা নাজনীন সুরভি, নাঈমা খালেদ মনিকা, শরীফুল চৌধুরী, রাশেদ শাহরিয়ার, মাসুদ রানা, সাইফুল হাসান মুনাকাত প্রমুখ।
সিলেট : ২২ মার্চ বিকাল ৫ টায় দক্ষিণ সুরমা শাখার উদ্যোগে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাবনা পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিন সুরমা শাখার সংগঠক মুখলেছুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সঞ্জয় কান্ত দাস। বক্তব্য রাখেন সুশান্ত সিনহা, রেজাউর রহমান রানা, অনিক ধর, রুবেল মিয়া, জয়ন্ত দাস প্রমুখ।
টিলাগড় শাখার উদ্যোগে ২৩ মার্চ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি টিলাগড় পেট্রল পাম্প থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিলাগড় পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহিতোষ দেব মলয় এবং পরিচালনা করেন সাজু সরকার। বক্তব্য রাখেন এড. হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, সাজিদুর রহমান, লিপন আহমেদ প্রমুখ।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) : ২৩ মার্চ দুপুরে স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ফরিদগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বাসদ নেতা আজিজুর রহমান, জিএম বাদশা, ফারুক আহমেদ পাটওয়ারী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মনির হোসেন প্রমুখ।