Saturday, November 23, 2024
Homeফিচারবিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা বনাম আওয়ামী সরকারের দায়িত্বহীনতা

বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা বনাম আওয়ামী সরকারের দায়িত্বহীনতা

কোভিড-১৯-এর কারণে বিপর্যস্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। অর্থাৎ ভয়ানক সংকটের সম্মুখীন শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের সামাজিক জীবন ও শিক্ষকদের জীবন-জীবিকা। এখন প্রশ্ন, এই যে সংকট তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার কতটুকু প্রস্তুত ছিল? সংকটের পুরো চিত্র আলোচনা না করেও বলা যায়; ন্যূনতম প্রস্তুতিও ছিলো না। গতবছর মার্চ মাসে সরকারের তরফে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরইমধ্যে একবছরের অধিক সময় করোনা অতিমারী মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু সরকার শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে বা দিচ্ছে?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সংকটে পড়েছে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর একাডেমিক-সামাজিক জীবন। এরমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় পোনে দুই কোটি, মাধ্যমিক পর্যায়ে সোয়া কোটির কিছু বেশি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ১২ লাখের কাছাকাছি। এছাড়া আলিয়া মাদ্রাসা, কারিগরি, ইংরেজি মাধ্যমসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে ৫০ লাখের কাছাকাছি শিক্ষার্থী।

শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজন ছিলো একটি সামগ্রিক প্রস্তাবনার। প্রয়োজন ছিলো শিক্ষাবিদ-জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক-সমাজবিজ্ঞানীদের যুক্ত করে একটি পরিকল্পনা হাজির করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো দ্রুত ঝুঁকি নির্ণয়, মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা। এছাড়াও প্রয়োজন ছিলো নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে গাইডলাইন প্রদান, হাইজিন উপকরণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত, সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার নিশ্চিত করা। আমরা জানি, করোনা অতিমারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের  মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে; তাই প্রয়োজন ছিলো মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এক্ষেত্রে কার্যকরী কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।

শিক্ষা গ্রহনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। করোনায় থমকে গেছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রদান কার্যক্রম। এ পরিস্থিতিতে একটি বড় অংশের শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ পর্ব বাঁধাগ্রস্ত হবে – একথা বলাই যায়। প্রাথমিক শিক্ষার চিত্রও ভয়াবহ। গত বছরের তুলনায় এ বছর এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। (দৈনিক কালের কন্ঠ ২৩ জানুয়ারি’২১) এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে এবং ঝরে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শিক্ষা-গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে ঝরে পড়বে। বিশেষ করে শহরের বস্তিবাসী এবং হাওর অঞ্চলের শিশুরাই বেশি ঝরে পড়বে। কেননা করোনার কারণে এসব পরিবারে দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেড়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও একটা বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারবে না।

সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর গবেষণা অনুযায়ী – এসময় শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৯ শতাংশ। পরিস্থিতির শিকার হয়ে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশকে বিভিন্ন আয়মূলক কাজের সাথে যুক্ত হতে হয়েছে। তাই বলা যায়, সাধারণ মানুষের সংকট থেকে শিক্ষার্থীদের সংকট বিচ্ছিন্ন নয় বরং গভীরভাবে সম্পর্কিত। কারণ এই শিক্ষার্থীরা পরিবারে বাস করে। কৃষক কিংবা শ্রমিক বাবা তার কাজ হারালে, আর্থিক অনিরাপত্তা তৈরি হলে একজন শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? এ ভাবনা কি সরকারের আছে? করোনাকালে আর্থিক-সামাজিক অনিরাপত্তা তৈরি হওয়ায় বাল্য বিবাহের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের বই-খাতা ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবেই শিক্ষাব্যবস্থার সংকটের মধ্যে পড়ে শিক্ষার্থীরা বহুমাত্রিক সামাজিক সহিংসতা-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

করোনার শুরুর দিকে সরকার সংসদ টেলিভিশন এর প্রোগ্রাম ‘আমার ঘর, আমার স্কুল’ এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সামগ্রিক পরিকল্পনার অভাব ছিলো সুস্পষ্ট।  প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন সেট এবং মোবাইল ডিভাইস-ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এতে উপস্থিত থাকতে পেরেছে। (দৈনিক সমকাল , ২৬ জুন ’২০)

পরিবারগুলোর আয় কমলেও স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে বেতন-ফি আদায় থেমে নেই। শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস করিয়েই আদায় করা হচ্ছে পুরো বেতন। অভিভাবকদের ফোন করে টাকা আদায় চলছে। এমনকি বেতন না দেয়ায় অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দেয়া এবং শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে নাম কেটে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। এই যখন অবস্থা তখন, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, “আর বেতন নিয়ে যে সমস্যা তা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা মিলে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ।… এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর বাইরে কোনো ভূমিকা নেবে না।” (ডয়েচে ভেলে বাংলা, ২১ সেপ্টেম্বর’২০) এ মন্তব্য থেকেই শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকার এবং এর কর্তাব্যক্তিদের মনোভাব বোঝা যায়।

করোনার প্রভাবে উচ্চ শিক্ষায় কিছু মাত্রায় স্থবিরতা, কিছু মাত্রায় বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। প্রাথমিকভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস চালুর মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু এ নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা না থাকায় গ্রামে, পাহাড়ি অঞ্চলে বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। বাস্তবে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এতে অনুপস্থিত ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাদের ডিভাইস নেই তাদের ঋণ দেয়ার কথা বলে। অবস্থা দেখে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মহাজনী প্রতিষ্ঠান আর প্রশাসন সুদখোর মহাজন। শুরুতে বলা হয়, অনলাইন ক্লাসের ভিত্তিতে কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না। শুধুমাত্র ছাত্রদের শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত রাখা এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত রাখার জন্যই অনলাইন ক্লাস নেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম, মিডটার্ম-ইনকোর্স এমনকি বহু বিভাগে ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। যদিও এসব পরীক্ষায় বহু শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানসিক কারণে অংশ নিতে পারেনি। এরা মূলত গ্রামাঞ্চলের এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের। এসব শিক্ষার্থী একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। এতে শিক্ষা বৈষম্য বাড়বে; একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ দূর্যোগ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিলো শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক-মানসিক-একাডেমিকভাবে সহযোগিতা করা।  শিক্ষার্থীরা কতটা সংকটে আছে তা বোঝাতে একটা উদাহরণই যথেষ্ট; করোনাকালে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর দায় কি প্রশাসন কিংবা সরকার এড়াতে পারেন?

এত সংকটের মধ্যেও বিভাগগুলো থেকে ফোন করে, শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরবর্তী বর্ষে ভর্তি করানো হচ্ছে। চলছে ফরম ফিলাপ, বেতন-ফি আদায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিন্তু থেমে নেই টাকা আদায়। করোনার মধ্যেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন বিভাগগুলোতে সেমিস্টার-ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। অথচ আবাসিক হলগুলো খোলা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবারের জন্যও ভাবা হয়নি, এসব শিক্ষার্থী কোথায় অবস্থান করবে কীভাবে পরীক্ষা দেবে? উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও একই রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু থেমে নেই ভর্তি কিংবা পরীক্ষা। পেছনের উদ্দেশ্য মোটেও শিক্ষা নয়, উদ্দেশ্য ব্যবসা। একথা খুব সহজেই বোঝা যায়। এসময় অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির অনিশ্চিত যাত্রা থেকে রক্ষা পেতে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। অনেকে সেমিস্টার ফি দিতে না পারায় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে অনলাইন শিক্ষার বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। আপাত সংকট মোকাবেলায় অনলাইন শিক্ষা চালু হলেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শিক্ষাক্ষেত্রে ভয়ানক সংকট তৈরি করবে। এ সংকট শুধু ব্যবহারিক নয়, দর্শনগতও। একজন শিক্ষার্থী সরাসরি শিক্ষার মাধ্যমে নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক-বেঠিক, ন্যায়- অন্যায়ের ধারণা লাভ করে। অনলাইন শিক্ষায় তা অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক সময় ও পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনলাইন শিক্ষাকে ‘কনটেন্ট নিভর্র’ পড়াশোনা হিসেবে পরিচিত করানো হচ্ছে এবং এর পক্ষে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে। কম বিনিয়োগ, কম শিক্ষক নিয়োগ করে বেশি মুনাফার ধারণা- এটাকেই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী নাম দিয়েছে ‘ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি ’।

পুঁজিবাদের দুনিয়াব্যাপী বাজার সংকট। তাই এরা রাষ্ট্রীয় খাত বা মৌলিক অধিকারসমূহকেও ব্যবসার আওতায় এনে কিছুটা রিলিফ পেতে চায়। এই উদ্দেশ্যেই অনলাইন শিক্ষাকেও প্রয়োজনীয় করে তুলে ধরা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীব্যপী শুধু অনলাইন শিক্ষাব্যবসা থেকে মুনাফা হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এভাবেই দূর্যোগের সুযোগ নিয়ে পুঁজিপতি গোষ্ঠী মুনাফার ফাঁদ পেতে বসে আছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে ভালো নেই শিক্ষকরাও। ভয়ানক সংকটে পড়েছে নন-এমপিওভূক্ত ১০ লাখ শিক্ষকের জীবন-জীবিকা। কিন্ডারগার্টেনের প্রায় ৬ লাখ এবং বেসরকারি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২.৫০ লাখ শিক্ষকও ভালো নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত অনেক সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কোন প্রনোদনা বা সহায়তার ব্যবস্থাই করা হয়নি।

করোনাকালে শিক্ষাক্ষেত্রের এই যে সংকট তা ছিলো অবশ্যম্ভাবী । এর কারণ কাঠামোগত সংকট। কাঠামোগত সংকটের ফলাফল কাঠামোর মধ্যেই নিহিত থাকে। এর পুরো প্রক্রিয়া চলে দীর্ঘমেয়াদে। তাই অনেক সময় একে স্বাভাবিক মনে হয়, মানুষ মেনে নেয়। তাই জনগনের অসচেতন অংশ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে না। এখন একথা স্পষ্ট করে বলা চলে; এই কাঠামোগত সংকট  নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় গড়ে ওঠে। এবং শিক্ষার বর্তমান যে সংকট তাও একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ফলাফল। আর তা হলো পুঁজিবাদী অর্থনীতি।

পুঁজিবাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মুনাফাকেন্দ্রিক। উপরন্তু তা আমলাতান্ত্রিক ও পুঁজিপতিশ্রেণীর স্বার্থকেন্দ্রিক হওয়ায় তা গণসম্পৃক্ত নয়। তাই করোনার মত হঠাৎ ধেয়ে আসা সংকট সে মোকাবেলা করতে পারে না। আবার মোকাবেলা সে ততটুকুই করতে চায় যতটুকু তার ব্যবস্থার স্বার্থে প্রয়োজন। তাই দেখা যায় করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রগুলো একের পর এক গণবিরোধী নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।

এ সম্পর্কে কানাডিয়ান লেখিকা ও আন্দোলনকর্মী নাওমি ক্লেইন তার The shock doctrine:the rise of disasterÕ গ্রন্থে বলছেন, “মনুষ্যসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দূর্যোগকে হাতিয়ার করে রাষ্ট্র অনেক পলিসি গ্রহণ করে যা পাবলিক খাতগুলোকে বেসরকারিকরণ- বাণিজ্যিকীকরণ এর পথে নিয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে জনস্বার্থ বিঘিœত হয় ও মুনাফালোভী গোষ্ঠীর মুনাফা লাভের পথ প্রসারিত হয়। ”

অন্যান্য জনসংশ্লিষ্ট খাতের সাথে শিক্ষাক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। সামনের দিনে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণে সরকার-রাষ্ট্র অনেক বেশি তৎপর হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তীব্র হবে। তাই এ সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার যেন কোন গণবিরোধী নীতির বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকা জরুরী। একই সাথে জরুরী দৃঢ় লড়াই গড়ে তোলার অঙ্গীকার। কারণ ইতিহাস থেকে আমরা শিখি, শাসকশ্রেণি কোন অধিকার এমনি এমনি ছেড়ে দেয় না, লড়াই করে পেতে হয়।

(উৎস: সাম্যবাদ, এপ্রিল-মে ২০২১)

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments