Wednesday, December 25, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদবিশেষ কেন্দ্রীয় কনভেনশন ২০-২৩ নভেম্বর ২০১৪

বিশেষ কেন্দ্রীয় কনভেনশন ২০-২৩ নভেম্বর ২০১৪

poster convention finialআগামী ২০-২৩ নভেম্বর ২০১৪ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের ‘বিশেষ কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংশোধনবাদ-সংস্কারবাদের বিরুদ্ধে আদর্শগত-সাংগঠনিক সংহতির মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দানে সক্ষম নীতিনিষ্ঠ ও লড়াকু বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার সংগ্রাম জোরদার করতেই এই কনভেনশন আহ্বান করা হয়েছে।

এমন এক সময়ে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আমাদের দেশে ও সারা দুনিয়ায় জনজীবন সমস্ত দিক থেকেই চূড়ান্ত সংকটগ্রস্ত। গত ৪৩ বছরের শোষণে এদেশের শ্রমিক-কৃষক গরিব-মধ্যবিত্ত বিপুল জনসাধারণ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অভাব-অনটনে হাঁসফাঁস করছে। অথচ দেশের অর্থনীতির তথাকথিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ধনকুবের শিল্পপতি-ব্যবসায়ী, বুর্জোয়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অসৎ সামরিক-বেসামরিক আমলা ও তাদের সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত ধনিকগোষ্ঠীর সম্পদ বাড়ছে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা বাজার সংকটের ফলে সৃষ্ট মন্দা ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে সামরিক অর্থনীতির মুনাফা ঠিক রাখতে দেশে দেশে যুদ্ধ, আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে। এজন্য তারা গণতন্ত্রকে পদদলিত করছে, সাম্প্রদায়িক হানাহানিকে উস্কে দিচ্ছে।

আমাদের দেশেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যতটুকু অবশেষ দেশে ছিল তা-ও ধ্বংস করে চলেছে। পুনরায় ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রহসনমূলক একটি নির্বাচন করে জনগণের ন্যূনতম ভোটাধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের বিপক্ষে যাচ্ছে দেখে ভোট ডাকাতি চালিয়েছে। এখন সম্প্রচার নীতি, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার নামে প্রচারমাধ্যম ও বিচারবিভাগের ওপর খবরদারি বাড়াতে চাইছে। বিরোধীদের দমনের জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে হত্যা-গুম-ক্রসফায়ারের লাইসেন্স তুলে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি, লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজি, প্রশাসনের দলীয়করণ সীমা ছাড়িয়েছে। সরকারি দলের আশ্রিত গডফাদার ও সন্ত্রাসীদের দাপটে জননিরাপত্তা বিপন্ন। ‘উন্নয়নের জোয়ার’-এর কথা বলা হচ্ছে, অথচ এবারও বন্যায় বিপর্যস্ত লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে ত্রাণের জন্য আহাজারি করতে দেখা গেল।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর নামে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল নামের লুণ্ঠনকারী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংসদে ‘দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিশেষ বিধান’ নামক আইনের মেয়াদ আরো ৪ বছর বাড়িয়ে অর্থলোপাটকারী ও সহযোগিদের যাতে বিচার করা না যায় তার জন্য দায়মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমুদ্রের গ্যাস-তেলসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা না করে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিতে বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়া হচ্ছে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও মানুষের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প এবং উন্মুক্ত কয়লাখনি বাস্তবায়নে তৎপর সরকার কোনো প্রতিবাদ-ভিন্নমতে কান দিতে রাজি নয়। মহাজোট সরকার চটকদার নানা উন্ন্য়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ‘মধ্য আয়ের দেশ’ বানাতে চায়। অথচ এদেশে শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, যুবকদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, ছিন্নমূল বস্তিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যয়বহুল শিক্ষা-চিকিৎসা, ক্রমবর্ধমান বাড়ি ভাড়া-গাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার অসহনীয় ব্যয়বৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের মানুষ বিপর্যস্ত।
সমাজে সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা, মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন, নীতিহীন ভোগসর্বস্বতা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দিনদিন বাড়ছে যা চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের সাথেই সম্পর্কিত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এসব বুর্জোয়া দলগুলো আজ আর ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চেতনা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বা নীতি-নৈতিকতা ধারণ করে না। এই প্রেক্ষাপটে দেশে জামাত-হেফাজতসহ মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান গণতান্ত্রিক অধিকার ও চেতনাকে আরেকদিক থেকে বিপন্ন করছে। গত ৪৩ বছরে যারা দেশ শাসন করেছে তাদের গণবিরোধী শাসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করার কৌশলই এজন্য দায়ী। একই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনগোষ্ঠী ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি দখল ও তাদের ওপর জাতিগত নিপীড়নে মদদ দেয়। এর পাশাপাশি তথাকথিত উন্নয়ন সহযোগিতার নামে সরকার দেশে ভারত, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জাপানসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অবাধ পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্রের সমর্থন পেতে সরকার তাদের নানা ছাড় দিচ্ছে যা জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করছে, দেশের অভ্যন্তরে ভারতের হস্তক্ষেপ বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ আন্তঃনদীসংযোগ প্রকল্প, তিস্তার পানি প্রত্যাহার এবং টিপাইবাঁধের বিরুদ্ধে এই সরকার জোরালো কোনো প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। নিজেদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ এবং বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামাত মুষ্টিমেয় ধনকুবের গোষ্ঠীর স্বার্থে বর্তমান শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখতে চায়। এই ব্যবস্থায় গরিবের দুর্দশা কাটে না, অন্যদিকে মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে। এই শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক ও নিপীড়িত জনসাধারণের জাগরণ ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা সংগ্রাম করছি। নীতিনিষ্ঠ বামপন্থীদের নেতৃত্বে জনস্বার্থ ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পথে সংগঠিত ও সচেতন জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলেই কেবল সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। যারা অন্য পথে জোড়াতালি দিয়ে প্রচারসর্বস্ব বিকল্প শক্তি দাঁড় করাতে চান তারা বাস্তবে বুর্জোয়া সংসদীয় বিকল্পের বাইরে যেতে পারবেন না। বাসদ অপরাপর বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে যুক্তভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এদেশে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, কিন্তু সঠিক আদর্শ ও নেতৃত্বের অভাবে তা কাঙ্খিত পরিণতি পায়নি। তাই বাম আন্দোলনে সুবিধাবাদ-ব্যক্তিবাদ ও গণবিচ্ছিন্ন হঠকারিতা মোকাবেলা করে মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সে তুঙ ও শিবদাস ঘোষের শিক্ষার ভিত্তিতে সঠিক ও উপযুক্ত বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার সংগ্রাম জরুরি। সেই লক্ষ্যে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে আহুত ‘বিশেষ কনভেনশন’ সফল করতে দেশবাসীর প্রতি এতে অংশগ্রহণ এবং নৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতার প্রদানের আবেদন জানানো হয়েছে।

বিশেষ কেন্দ্রীয় কনভেনশন
উদ্বোধন ও র‌্যালি : ২০ নভেম্বর সকাল ১১টা
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টা
মহানগর নাট্যমঞ্চ, গুলিস্তান
প্রতিনিধি সভা : ২১-২৩ নভেম্বর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন সেমিনার হল (দোতলা)
সভাপতিত্ব করবেন : কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments