নারী পুরুষ উভয়ের জন্য বিশেষ বিধান ‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে‘ প্রযোজ্য করে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ শীর্ষক বিলটি সংসদে পাশ হয়েছে। অবিলম্বে এই বিধান বাতিলের দাবি জানিয়ে ১লা মার্চ ২০১৭ বিকাল ৪.৩০টায় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত’র সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক তাসলীমা নাজনীন’র পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা নগর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবি, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য।
নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে বিদ্যাসাগর নারীর প্রগতির পথকে সুগম করার জন্য পিছিয়ে পড়া সমাজের জড়তা ভেঙ্গে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করিয়েছিলেন। তখন সমাজের কর্তাব্যক্তিরা বাল্যবিবাহ বন্ধে আইন মেনে নিতে পারেনি, কিন্তু যারা এদেশ শাসন শোষণ করতে এসেছিল সেই ইংরেজ সরকার ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯‘ প্রণয়ন করেছিল। আর আজ নারী যখন নিজে তার পথের বাধা অতিক্রম করছে প্রবল প্রত্যয়ে, যখন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরে এই অভিশাপ থেকে নিজেদের সন্তানদেরর রক্ষা করতে চাইছে তখন সরকার নারী প্রগতির কথা বলে তাকে আরও পিছিয়ে রাখার জন্য কূপমন্ডুক চিন্তা সমাজে প্রতিষ্ঠা করছে। সরকার একদিকে উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশনের শ্লোগান দিচ্ছে, আর অন্যদিকে নারীদের পশ্চাৎপদ সামাজিক অবস্থানকে পরিবর্তনের উদ্যোগ না নিয়ে আরো পশ্চাতে ঠেলে দিচ্ছে। যে দেশে আইন অনুযায়ি ১৮ বছরের নিচে সকল মানব সন্তানকে শিশু বিবেচনা করা হয়, সে দেশে ১৮ বছরের নিচে বিয়ের বিধান রাখা মানেই শিশু বিবাহকে বৈধতা দেয়া।
নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সমস্ত কিছুকে হুমকীর মধ্যে রেখে সরকার সংসদে দাঁড়িয়ে জনগণের মতকে তোয়াক্কা না করে শুধু নারী বিরোধী নয় জন বিরোধী বিশেষ বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করেছে। এদেশের সকল নারী সমাজ ও গণতন্ত্রমনা সকল মানুষ এই বিধানকে প্রত্যাখান করেছে। এবং এই সরকার নারী প্রগতি বিরোধী সরকার হিসাবে আখ্যা পেয়েছে। কারন যেখানে সরকার নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য আইন করবে সেখানে নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা যাতে আইনী বৈধতা পায় এই বিধানের মাধ্যমে তার আয়োজন করেছে।
সমাবেশে বক্তরা সমস্ত বিবেকবান ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই আইন বাতিলের দাবিতে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, এটি কেবল নারীর অধিকার রক্ষার প্রশ্ন নয়, মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনাকে রক্ষার প্রশ্নও বটে।