সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করা হবে। উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে তুলতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন সরকার উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বহুমাত্রিক ধারায় বিকশিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।’
ইউজিসি’কে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা কেন তৈরি হলো – সেটা প্রধানমন্ত্রী বলেন নি। কিন্তু তিনি না বললেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে নানা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে- তা আমরা বলতে পারি। আমরা জানি, ইউজিসি গড়ে উঠেছিল সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন করবে কিন্তু একাডেমিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভূমিকা রাখবে।
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে সমুন্নত রাখা এবং নিজেদের একটি স্বাধীন অবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে ইউজিসি ব্যর্থ হয়েছে। যে সরকারই এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউজিসি-কে নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে আরও বেশি সঙ্কুচিত করা হয়েছে। বস্তুত সরকার তাদের পরিকল্পনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের (Higher Education Commission) সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা কমিশন সম্পর্কে বিগত সময়ে যতটুকু জানা গেছে তা হলো – দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা, যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যেকোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নজরদারি চালানো, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা, সরকারি-বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা ইত্যাদির ক্ষমতা থাকবে উচ্চশিক্ষা কমিশনের হাতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে এই কমিশনের হাতে। আবার উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তাদের পেশাগত জবাবদিহিতা বজায় রাখবেন। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতেই সরকার ইউজিসি-কে পাল্টে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত করছে।
সরকার একদিকে লাগামহীনভাবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ খুলে দিয়েছে, চাকুরি উপযোগী শিক্ষার কথা বলে কোর্স-কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে, বিশ্বমানের শিক্ষার কথা বলে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করছে অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা-স্বায়ত্তশাসনকে ভূলুণ্ঠিত করে প্রশাসনিক সমস্ত পদে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যেন কোনো সমাজ সচেতন-বিবেকবান মানুষ বের না হয়, যেন একদল শিক্ষিত কেরানি তৈরি করা যায় সেই মতো করে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা কমিশন সেই লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা-স্বায়ত্তশাসন হরণের এই অপকৌশল বাতিলের আহ্বান জানান।