বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কল্যাণে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বাংলাদেশের জনগণ বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যে দুজন রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছেন, সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ক্ষমতা দখলের উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় বিরাজ করছে বৈরিতা, বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা। তারা তাদের পারস্পরিক বৈরিতা চাপিয়ে দিচ্ছে সংকটে আকণ্ঠ ডুবে থাকা জনসাধারণের উপর।
আগামী ২৫ অক্টোবর সরকার তার ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করছে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের মধ্যেকার সমঝোতার বিষয়টি এখনও অমীমাংসীত থেকে গেছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় জোটসমূহ অনঢ় ভঙ্গিতে বক্তব্য দিচ্ছেন আবার দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী জনসভা করে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের তৎপরতায় কোনো আড়াল নেই। সকল ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহকে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রীতিনীতি বিষয়ক জ্ঞান প্রদান করে চলেছেন। নেতানেত্রীরা আবার পরস্পরের সাথে বিরোধের ক্ষেত্রে বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যস্থতা মানবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘ আজ বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদ তোষণনীতির সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিসমূহ তাদের নিজেদের ভেতরকার বিরোধ মেটাতে এহেন জাতিসংঘের মধ্যস্থতা মানতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এ দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক জোটের বাইরে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিসমূহ যে সকল চিন্তা ও পরিকল্পনা হাজির করছে তা জনগণকে স্বেচ্ছাচারিতা আর জবরদখলের চোরাবালি থেকে উদ্ধার করার বিপরীতে আরও বেশি করে অগণতান্ত্রিক নিয়মতান্ত্রিক বুর্জোয়া নাগপাশে আবদ্ধ করবে।
বিগত ৪২ বছরে এদেশের বুর্জোয়া ব্যবস্থার শাসনতান্ত্রিক সংকট বারে বারে একই চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসছে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ- পরামর্শদাতারা তাদের সংকটের চোরাবালিতে নিমজ্জিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যত সংস্কার সাধনের চেষ্টা করছেন তা বাস্তবে লোক দেখানো সাধু কথার ফুলঝুরিতে পর্যবসিত হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনা ও রাজনৈতিক শক্তির বিকাশই বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে, সংকটের লেশমাত্র সমাধান করতে পারেনি। সামরিক শাসন, একদলীয় শাসন, বহুদলীয় সংসদীয় শাসন – যাই খাড়া করার চেষ্টা করা হোক না কেন তা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের হাতিয়ারে রূপ নিয়েছে। এবারো সমাধানের নামে সে দিকেই শাসকগোষ্ঠী ধাবিত হবে – এমনটাই আশঙ্কা।
মেহনতি জনগণের শ্রমে ঘামে গড়া এ বাংলাদেশে পরজীবী বুর্জোয়াগোষ্ঠী ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তি প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের নির্মমভাবে শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অথচ মেহনতি জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি থেকে যাচ্ছে নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। তাজরীন গার্মেন্টসসহ নানা গার্মেন্টসে শত শত শ্রমিক যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে, পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করল তাদের সামান্য ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে মালিকদের টালবাহানা সত্যিই অভাবিত। নানা কথার ফুলঝুরি দিয়েও সরকার মালিকের পক্ষাবলম্বিতা ঢেকে রাখতে পারেনি। এ সকল ঘটনায় দেশের বেশিরভাগ মানুষের বিবেক পীড়িত হয়েছে। আর এদিকে দেশের বেশিরভাগ মানুষের পক্ষাবলম্বিতা সৃষ্টি হয়েছে শ্রমিকের পক্ষে। সম্প্রতি গাজীপুরে শ্রীপুরে পলমল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজিট গার্মেন্টেসে আগুনে পুড়ে ৯ জন শ্রমিকের মৃত্যুতে সরকার, পুলিশ প্রশাসন একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মালিকের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের পেটোয়া বাহিনী আজও দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করছে, টিয়ার শেল আর বুলেট বিদ্ধ করছে। শ্রমিকরা দাবি করছে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা অর্থাৎ মাত্র একশত ডলার। যে শ্রমিকরা তাদের জীবনীশক্তি নিংড়ে মালিক ও তার সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিলাস-ব্যসনের যোগান দিচ্ছে প্রতিদিন, তারা যখন জীবন বাঁচানোর ন্যূনতম যোগানের জন্য মাত্র একশত ডলার মজুরি দাবি করছে তখন তাকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। অথচ এ সকল শ্রমিকের রক্ত নিংড়ানো শ্রমে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উপচে পড়ছে।
অতি সম্প্রতি শরৎকালের আকস্মিক বর্ষণে রবিশস্যের ফলন মারত্মক হুমকির সম্মুখীন। এ শস্যহানির ফলে ঋণগ্রস্থ কৃষক ঋণের টাকা ফেরত দিতে না পেরে জমি বসতবাটি হারাবে। বেঁচে থাকার এ সামান্য জীবিকার নিরাপত্তা দিতে সরকার কোনো ভূমিকা রাখে না। বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সৃষ্ট গ্রামীণ ধনিকগোষ্ঠীর কাছে জিম্মি করে তুলে তাদের সর্বস্বান্ত করার প্রক্রিয়া দিন দিন জোরদার হচ্ছে। ক্ষেতমজুররা বিকল্প কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের বেতন কাঠামো বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছে। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার কাজের সন্ধানে কচুরিপানার মত ভেসে বেড়াচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতিতে প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মাদকাসক্তি তরুণদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এক একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে। আজ এদেশের তরুণ প্রজন্ম নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর কৃষ্টিকে ভুলে সাংস্কৃতিকভাবে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে।
এরই মধ্যে বাঙালি সম্প্রদায়ের দুই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব এবং ঈদ-উল-আযহা এগিয়ে আসছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে এখন এ সকল উৎসব যেন আর কোনো বিশেষত্ব নিয়ে আসেনা। এ দুটি উৎসবের দিনেই কি বিপুলসংখ্যক মানুষ যে এদেশে অভুক্ত, জীর্ণ পোশাক, পঙ্কিল বাসগৃহ আর পীড়িত থাকবে, ন্যূনতম মৌলিক অধিকার বঞ্চিত মানুষগুলো নিজেদের ও আপনজনের নানাবিধ দুঃখকষ্টে কতখানি নিরানন্দে উৎসবমুখর দিনগুলো অতিবাহিত করবে তা সকলের জানা। দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা কিন্তু এ নিয়ে মোটেই পীড়িত নন। তারা ব্যস্ত কীভাবে তারা ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করবেন। সেক্ষেত্রে কোনো অনিশ্চয়তা উপস্থিত হলে তারা মারাত্মকভাবে পীড়িত হন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা যে কোনো বক্তব্য দিয়ে ফেলতে পারেন। আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বসেই গণমাধ্যমে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিকভাবে বলেছেন, সরকারী কর্মচারীরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। আবার যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুবউদ্দিন বলেন, বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে এ মামলা বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিচার করা হবে। দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের এ দুই নেতার অমৃত বচনে দেশের জনগণ সত্যিই বিমোহিত হয়েছে।
একটি সরকার কতখানি অগণতান্ত্রিক হলে জাতিয় কমিটির লংমার্চ যা জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছিল তাকে চ্যালেঞ্জ করে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে যে ক্রমাগত পদক্ষেপ নিতে পারে! যদিও লংমার্চ কর্মসূচির পরপর বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদসহ প্রায় সকল বিরোধী দলসমূহ লংমার্চ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে। অথচ এসকল দলগুলো যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ বিদেশী বহুজাতিক সংস্থাসমূহকে এদেশে ডেকে এনে অত্যন্ত সহজ শর্ত এবং অসম শর্তের বিনিময়ে দিয়ে দিয়েছে। সে সময়ে জাতীয় কমিটি যে লংমার্চগুলো করেছিল তাতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল। আর আজ আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির লংমার্চ কর্মসূচির বিরোধীতা করছে। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলসমূহের রাজনৈতিক দ্বিচারিতা সত্যিই অভাবিত।
আজ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের জোয়ার ছাড়া আর কোনো জোয়ারই দেখতে পাচ্ছেন না। গরীব-মধ্যবিত্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর অসন্তোষের জোয়ার, মানুষের বিক্ষুব্ধতার জোয়ার, শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের জোয়ার সবকিছুকেই তারা উপেক্ষা করতে চাইছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যখন গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি অর্থাৎ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান পরিবর্তন করে নিজেদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চাইল, তখন দেশের জনগণ নতুন করে পরিমাপ করতে পারল যে বৃহৎ রাজনৈতিক দলসমূহ কীভাবে ক্ষমতার জন্য লালায়িত এবং খোদ সংসদ আর সংবিধানকে পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে কীভাবে তারা ব্যবহার করতে পারে। সরকারের এধরনের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ আর ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে অত্যন্ত অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সামনে ক্ষমতার মসনদ খুব নিকটবর্তী মনে হওয়ায় তারাও বেপরোয়া। ফলে আপাত অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা বিএনপি’র জন্য মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এর জন্য কখনো আন্তর্জাতিক শক্তিবর্গের প্রভাব কখনো জোটগত শক্তির মহড়ার মাধ্যমে এটা করার ক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সরকার নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলবাদ ও যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ইস্যুটিকে সামনে এনে ভাবমূর্তির সংকট থেকে উদ্ধার পেতে চাইছে। এ বিচারকে বিলম্বিত করে সাধারণ মানুষের মাঝে আগামী নির্বাচনে ভোট টানার শর্ত সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মাধ্যমে মহাজোট সরকার যে কতখানি বিপজ্জনক খেলায় নেমেছে তা পরিমাপ করতে পারছে না। ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি প্রহসনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বৃত্তে যে সকল শক্তি বা অপশক্তি আবর্তিত হচ্ছে তাদের দিকে তাকিয়েও জনগণ অত্যন্ত অস্বস্তিতে দিন অতিবাহিত করছে। জামাত, হেফাজতসহ মৌলবাদী দলসমূহের প্রগতিবিরোধী, নারীর স্বার্থবিরোধী আস্ফালন বিএনপি আমলে নিচ্ছে না। এ ধরনের অপশক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তা যে একদিন বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে, ক্ষমতার মসনদের প্রতি অন্ধ মোহ না থাকলে আর অপরাজনীতির ধারক বাহক না হলে তারা তা দেখতে পেতেন।
নির্বাচন অর্থাৎ বুর্জোয়াদের মধ্যে ক্ষমতার হাতবদল কেমন করে হবে, মানুষ শান্তিতে নিরাপদে ভোট দিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, ভোটের পর সংঘাত-সহিংসতা থামবে কিনা – এ আশঙ্কাই এখন দেশের সব মানুষের। এর মধ্যে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন – জনগণকে জিম্মি করে বুর্জোয়াদের ষড়যন্ত্র আর ভোটের রাজনীতির নির্মম শিকার হতে হয় তো সংখ্যালঘুদেরই।
এধরনের নিরাশার মাঝে দেশের বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি সাধারণ মানুষের স্বার্থের সপক্ষে সত্যিকারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারত। এ দেশের বামপন্থী শক্তিগুলোর একদিকে রয়েছে মারাত্মক সাংগঠনিক দুর্বলতা অন্যদিকে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা। কিছু কিছু বাম শক্তি এখনও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর দিয়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করতে স্বৈরাচারী শাসক হোসেইন মোহাম্মাদ এরশাদকে সাথে নিয়েছে। মৌলবাদের সাথে আপোষ করেছে। এমনকি চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সমঝোতা করেছে। ফলে বিপুল গণপ্রত্যাশার বিপরীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আজ এসব দলের কাছে মানবিক বা নৈতিক দায় নয়, ভোটভিত্তিক স্বার্থ সুবিধার হাতিয়ার মাত্র। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাকেন্দ্রীক প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাজনীতির বিপরীতে জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-সাম্প্রদায়িকতা-নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ ও সম্পদের উপর লুণ্ঠন-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এর মধ্য দিয়েই শোষণ-বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে এ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রাম জোরদার হতে পারে। বাসদ-সহ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা পরিচালিত এ আন্দোলনে এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।
সাম্যবাদ অক্টোবর ২০১৩