Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন

anu sir copy

ভারত কর্তৃক তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রসহ অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশের উপর তার প্রভাব ও আমাদের করণীয় শীর্ষক কনভেনশন ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রংপুর টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উদ্যোগে দিনব্যাপী কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী) গাইবান্ধা জেলা আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ। আলোচনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জল পরিবেশ ইন্সটিটিউট এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব উদ্দিন সিদ্দিকী, কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. রেজাউল হক, সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণ রাজনৈতিক কমরেড শাহাদৎ হোসেন, সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাহার আলী, অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান, এ্যাড. মনির চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু, সহ বিভিন্ন বাম-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু ।

কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও ন্যায্য হিস্যা আদায় হয়নি বরং সকল সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী চুক্তি করেছে। শুধু তিস্তা নদী দু’দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫১ টি নদীতে আন্তর্জাতিক নদী আইন অম্যান্য করে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ দিয়েছে এবং ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের কারনে মরুকরণের দিকে গোটা বাংলাদেশ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ভারত কতৃক নদীর পানি প্রত্যাহার ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন। যেসব নদী দুই বা ততোধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের ৫৪টি নদী ভারত থেকে এবং ৩টি এসেছে মায়ানমার থেকে। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের হেলসিংকি নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় নেবে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী প্রণিত আইনে বলা হয়েছে, নদীকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না, যাতে অন্য দেশ মারাত্মক ক্ষতি বা বিপদের মুখে পড়বে। এসব আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের তোয়াক্কা না করে ভারত একতরফাভাবে নদীসংযোগ পরিকল্পনা অগ্রসর করছে। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রগুলোতে ভারত আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অথচ পানি সম্পদের ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার যথার্থ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেনি। তা না হলে এতদিনেও আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট, জোরালো কোনও প্রতিবাদ দৃশ্যমান হলো না কেন? খোদ ভারতেই বড় বড় পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা প্রকল্পটির বিরোধিতা করছেন। আর আমরা যেন ‘দেখা যাক’ এই ভেবে বসে অপেক্ষা করছি। নদীবাহিত পলি দিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। শরীরে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে যেমন মানুষের মৃত্যু ঘটে, তেমনি নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বা বাঁধাগ্রস্ত হলে ভূ-খন্ডের অস্তিস্ত বিপন্ন হবে। ধীরে ধীরে সেটাই হচ্ছে। সে কারণে একসময়ে ১২০০ নদীর দেশে এখন মাত্র ২৩০টি নদী। এক ফারাক্কা বাঁধই দেশের মানচিত্র থেকে মুঁছে দিয়েছে ২০টি নদী।

প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে তিস্তায় একসময় শুল্ক মৌসুমে ১৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো। ভারতের (গজলডোবা ব্যারেজ) পানি প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ অংশে তা কম ৪ হাজার কিউসেকে দাঁড়িয়েছে। খরা মৌসুমে তা ২৫০-৩০০ কিউসেকে নেমে আসবে। বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বগুড়া জেলার সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয়। যার সেচ লক্ষ্যমাত্রা ৭,৫০,০০০ হেক্টর হলেও সেচ সুবিধা দেওয়া যেত ১,১১,৪৬০ হেক্টর জমিতে। ভারতের কাছে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থতার এমন ভয়াবহ পরিণতি যে, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

কনভেনশন থেকে আগামী ৬ এপ্রিল জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাক দেওয়া হয়। কনভেনশনের মাঝে একটি বিশাল র‍্যালী নগরী প্রদক্ষিণ করে।

nodi convetion photo-1 copy

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments