“ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহার ও বাংলাদেশের কৃষির উপর প্রভাব শীর্ষক” মতবিনিময় সভা বাসদ(মার্কসবাদী) ও তিস্তা ও কৃষি বাঁচাও আন্দোলন নীলফামারী জেলার উদ্যোগে গতকাল সকাল ১১ টায় টাউন ক্লাব হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন তিস্তা ও কৃষি বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম। আলোচনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, নদী বিশেষজ্ঞ ম. এনামুল হক, রিভারাইন পিপপলের চেয়ারম্যান শেখ রোকন, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম, উদীচী জেলা সভাপতি মনসুর ফকির, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আতিয়ার রহমান, বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলার সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু প্রমুখ।
আলোচকবৃন্দ বলেন, সকল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি লংঘন করে ভারত কর্তৃক উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তাকে শুকিয়ে মারছে। গত ৪ বছরে ৩ জেলার ১২ উপজেলার কৃষক-ক্ষেতমজুর ও কৃষি জমি চরম বিপর্যয়ের মুখে। হাজার হাজার মৎস্যজীবী ও মাঝি পরিবার আজ বেকার। কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হাহাকার।
বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে তিস্তায় একসময় শুল্ক মৌসুমে ১৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো। ভারতের (গজলডোবা ব্যারেজ) পানি প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ অংশে তা কম ৪ হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। খরা মৌসুমে তা ২৫০-৩০০ কিউসেকে নেমে এসেছে। বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বগুড়া জেলার সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয়। যার সেচ লক্ষ্যমাত্রা ৭,৫০,০০০ হেক্টর হলেও সেচ সুবিধা দেওয়া যেত ১,১১,৪৬০ হেক্টর জমিতে। ভারতের কাছে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যর্থতার এমন ভয়াবহ পরিণতি যে, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
তিস্তার পানি না পাওয়ায় প্রতিবছর ফসলহানীর কারণে সর্বশান্ত হচ্ছে কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেয়ে মহাজনী ও এনজিও ঋণের দারস্থ হয়। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে মধ্যচাষী জমিজমা বিক্রি করে গরীব ক্ষেতমজুর, দিনমজুরে পরিণত হয়। তিস্তার গজলডোবা বাঁধ একদিকে শুল্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারে আবার বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারে। ফসলী জমি বালু চরে পরিণত হয়। নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হয় মানুষ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় হয়নি বরং সকল সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী চুক্তি করেছে। শুধু তিস্তা নয় দু’’দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫১ টি নদীতে আন্তর্জাতিক নদী আইন অম্যান্য করে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ দিয়ে এবং ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের কারনে মরুকরণের দিকে গোটা বাংলাদেশ।
ভারতের পানি আগ্রাসন ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরণের দাবিতে নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।