প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের সরকারি তৎপরতার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে ১ এপ্রিল ২০১৭ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “প্রস্তাবিত নিরাপত্তা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের অস্ত্র বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক-সামরিক পরিকল্পনার সাথে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। এদেশের সাধারণ মানুষের কোন স্বার্থ এতে নেই, ভারতের স্বার্থে তাদের প্রস্তাবে এ চুক্তি হতে যাচ্ছে। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার স্বার্থে দেশের জন্য এহেন দীর্ঘস্থায়ী বিপদ ডেকে আনছে।”
তাঁরা বলেন, “দেশের মধ্যে কোন আলোচনা না করে, অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তার মধ্যে তড়িঘড়ি করে যেভাবে এ সামরিক সহযোগিতা স্মারক হতে যাচ্ছে, তা জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কারো ওপর নির্ভরশীলতা বা কারো সাথে বিরোধ চায় না, তারা সকলের সাথে সমমর্যাদা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ-সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চায়। ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া এসব সাম্রাজ্যবাদী দেশের আধিপত্য বিস্তার বা স্বার্থের সংঘাতে কোন পক্ষ নেয়া বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত হস্তক্ষেপ, এমনকি সামরিক আগ্রাসন পর্যন্ত করেছে। ভারতের জনগণ আমাদের বন্ধু, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর সামরিক পরিকল্পনার সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করা জনগণের আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র নয়, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়। তিস্তার পানিবন্টনে কোন অগ্রগতি নেই, পদ্মায় ধূ-ধূ বালুচর, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের মানুষের এ জীবন-মরণ সমস্যায় ভারত কোন ছাড় দিচ্ছে না। অথচ, আওয়ামী মহাজোট সরকার ভারতের সমর্থন পেতে স্বল্প শুল্কে ট্রানজিট, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ নানা একতরফা সুবিধা তাদের দিয়ে চলেছে।”
নেতৃবৃন্দ এধরনের জনস্বার্থবিরোধী চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তাঁরা সরকারের এই পাঁয়তারার বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার থাকার আহবান জানান।