মহান মে দিবসের ডাক
মজুরি দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙো ।। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোল
লড়াইয়ের আহ্বান নিয়ে আবার এলো মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা কাজের সময় নির্দিষ্ট করা, মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশ উন্নত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। সেদিন পুলিশ ও মালিকের গুন্ডাবাহিনীর গুলিতে ১০ জন শ্রমিক শহীদ হয়। পরবর্তীতে মিথ্যা অভিযোগে শ্রমিক নেতা পার্সনস, স্পাইজ, ফিশার, এন্জেলকে ফাঁসির দণ্ডে হত্যা করা হয়। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের ১৮৮৯ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা দুনিয়ায় এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মে দিবস নিছক আনন্দ-উদযাপন করার দিন নয়। সকল ধরণের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন।
সংগ্রামী বন্ধুগণ
বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের অবদানে। কিন্তু অভাব, বেকারত্ব, নিম্ন মজুরি, ছাঁটাই, নির্যাতন তাদের নিত্যসঙ্গী। এবারের মে দিবসের কয়েকদিন আগেই ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে ১২ শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হল। এখনো নিহত সব শ্রমিকের পরিবার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি, আহত সবার সুচিকিৎসা ও যথাযথ পুনর্বাসন হয়নি। যারা ফাটল ধরা ভবনে কাজ করতে শ্রমিকদের বাধ্য করেছিল সেই ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকদের বিচার-শাস্তি এখনো অনিশ্চিত। এর আগে তাজরিন গার্মেন্টসে ১১১ শ্রমিক পুড়ে মরলেও তার বিচার হয়নি, শ্রমিকরা এখনো ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ পায়নি। এসব ঘটনা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে — মালিকদের কাছে শ্রমিকের জীবনের চাইতে মুনাফা বড়, আর রাষ্ট্র-সরকার-আইন সবকিছু মালিকের পক্ষে।
বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়, অথচ এদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা খেটেও মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপনের মত মজুরি পায় না। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নেই। গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবি আজো অপূরিত। সর্বাধিক দুর্দশার শিকার অসংগঠিত বা ইনফরমাল সেক্টরের শ্রমিকরা। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রিকশা উচ্ছেদ চলছে। হোটেল-নির্মাণ-গৃহশ্রমিক-ভাসমান শ্রমিকরা শ্রম আইনের কোনো সুবিধাই পায় না। গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন ও সারাবছর কাজের নিশ্চয়তা নেই। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৯ টাকা মাত্র। শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে যেটুকু মজুরি বাড়ে, জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা তার চাইতে বেশি নিয়ে যায় শ্রমিকদের পকেট কেটে। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধির চাপে শ্রমিক-কর্মচারীরা দিশেহারা। এই অবস্থা পাল্টাতে হলে চাই মজুরি দাসত্ব উচ্ছেদের লক্ষ্যে শ্রমিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই — এটাই মে দিবসের শিক্ষা।
বন্ধুগণ,
মে দিবসের চেতনা শোষণমুক্তির চেতনা। মে দিবস ও তার পরবর্তী সময় আমাদের শিক্ষা দেয় — যতদিন রাষ্ট্র মালিকশ্রেণীর হাতে থাকবে ততদিন শ্রমিকশ্রেণীর দুর্দশা কাটবে না। তাই অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে মে দিবসে আমাদের আহ্বান — কাজের নিশ্চয়তা, ন্যায্য মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমাদের সংগঠনের মে দিবসের কর্মসূচিতে আপনাদের অংশগ্রহণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
আওয়াজ তুলুন :
জাতীয় ন্যূনতম মূল মজুরি ৮০০০ টাকা ঘোষণা কর। রানা প্লাজা-তাজরিন ফ্যাশন্সে নিহত-আহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চাই। মালিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের কর। কর্মস্থলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর। গার্মেন্টস-ইপিজেডসহ সর্বত্র অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চাই। শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন কর। শ্রমিকদের আর্মি রেটে রেশন দাও, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কর। পুনর্বাসন ছাড়া রিকশা ও হকার উচ্ছেদ বন্ধ কর।কর্মসূচি
শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল ১ মে, সকাল ৯টা,জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেপ্রধান বক্তা
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী সদস্য, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটিবাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন