Saturday, December 21, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদমূল সংকটের সমাধান না করে শিক্ষার্থীদের আবারো ‘গিনিপিগ’ বানানো হচ্ছে

মূল সংকটের সমাধান না করে শিক্ষার্থীদের আবারো ‘গিনিপিগ’ বানানো হচ্ছে

48556সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারন সম্পাদক স্নেহাদ্রি  চক্রবর্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণার বাস্তবায়নস্বরূপ ঢাকার ৭টি কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কলেজসমূহের প্রকৃত সমস্যার কোন সমাধান তৈরি করবে না। ১৯৯২ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে সরকারি কলেজসমূহ পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পরিচালিত হতো। ভয়াবহ সেশনজট, আমলাতান্ত্রিকতাসহ নানাবিধ সংকটের কারণে তা বহাল রাখা সম্ভব হয়নি। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বাস্তবে বানানো হয়েছে একটি শিক্ষাবোর্ড। অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী সমস্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজসমূহ এমনকি সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডিগ্রী (পাশ) পাঠদানকারী হাজার হাজার কলেজের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবোর্ডের মতো শুধুমাত্র সিলেবাস তৈরি করা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, খাতা মূল্যায়ণ করা আর ফলাফল প্রকাশ করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানকার শিক্ষকরা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পান। তাদের নিয়োগ-বদলি, বেতন-ভাতা পরিচালিত হয় সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে। অবকাঠামোসহ বাকি পরিচালন ব্যয় বরাদ্দ হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কোন বালাই নেই। নেই কোন গবেষণার আয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিলেই এইসব কলেজের বিদ্যমান সমস্যা-সংকটের মৌলিক পরিবর্তন হবে কি? কলেজসমূহের অবকাঠামো অর্থ্যাৎ একাডেমিক ভবন-হল-হোস্টেল নির্মাণ; শিক্ষক নিয়োগ-লাইব্রেরি-সেমিনারে বই সরবরাহ, গবেষণার দায়িত্ব কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কি এই সব কলেজে গিয়ে ক্লাস নেবেন? কলেজের ছাত্রদের কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে গিয়ে গবেষণার সুযোগ ঘটবে? লাইব্রেরী-সেমিনারে গিয়ে বই সংগ্রহ করতে পারবে? কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো আয়োজন কি কলেজসমূহে নিশ্চিত করা হবে? এই সব প্রশ্নের মিমাংসা না করে কিভাবে কলেজসমূহের শিক্ষামানের উন্নতি ঘটাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনার মধ্য দিয়ে এরকম জগাখিচুরি মাথাভারি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হবে কি? নাকি আরো মাথাভারি আমলাতান্ত্রিকতা তৈরি করবে? ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস তৈরি করা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, খাতা মূল্যায়ণ করা আর ফলাফল প্রকাশ করার দায়িত্বটুকু নেবে মাত্র। কলেজসমূহের শিক্ষকরা আগের মতোই ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করবে। ঢাবি উপাচার্য বলেছেন- ‘অধিভূক্ত হওয়া মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে যাওয়া নয়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুকৃত নির্দিস্ট কলেজের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।’ বাস্তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্তির কথা বলে শিক্ষার্থীদের ধোকা দেয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আরেকবার ‘গিনিপিগ’ বানানো হচ্ছে। নানা কথার আড়ালে বৃদ্ধি করা হবে বেতন-ফি।

আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বর্তমানে নিজস্ব শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৫৫ জন। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তার নিজস্ব জনবল বা অবকাঠামোগত আয়োজন আছে কি? এর বাইরে অধিভূক্ত আরো ১০৪ টি কলেজ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৮ জন। আর এখন এর সাথে যুক্ত হবে সাতটি কলেজের আরো এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী!

আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বহু পূর্বেই বলেছিলাম প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রধান কলেজসমূহকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে করে বাকি কলেজসমূহকে অধিভুক্ত করা। রাজধানী ঢাকার ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন এই সিদ্ধান্ত মূল সমস্যার প্রকৃত সমাধান দেবে না। তারা অবিলম্বে সকল জেলার প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী কলেজসমূহকে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করে অন্যান্য কলেজসমূহকে অধিভূক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments