Sunday, November 24, 2024
Homeফিচারমেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস : নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস : নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা

Medical_Onimesh_267_nমেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষার দিন র‌্যাব ঢাকার আগারগাঁয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কার্যালয় থেকে এক কর্মকর্তাসহ তিন জন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ৩ চিকিৎসকসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। পরীক্ষার আগের দিন মহাখালী থেকেও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবর দেশবাসী জানেন। পরীক্ষার দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছিল যে, ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়েছে। এবং আগের রাত থেকে ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের কপি ছড়িয়ে পড়েছে। খুব ন্যায়সঙ্গত কারণেই তখন থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। প্রশ্নফাঁসের সত্যতা আবারও প্রমাণিত হল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। কিন্তু সরকার শুরু থেকেই এ বিষয়টি অস্বীকার করে চলেছে।

পাবলিক পরীক্ষাগুলিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন মহামারী আকার নিয়েছে। একেবারে প্রাইমারি স্কুলের পিইসি পরীক্ষা থেকে শুরু করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনÑপিএসসি বা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা কোনোটাই বাদ যাচ্ছে না। এর ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে চলে গেছে। সমজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বহুদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে এবং পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে প্রথম দিন থেকেই পুলিশ অত্যন্ত মারমুখী অবস্থান গ্রহণ করে। ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ তাদের উপর হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নেয় এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের লাঞ্ছিত করে। কয়েকজনকে আটকও করা হয়। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হতে চাইলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়। এ আন্দোলন চলতে চলতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের মিছিল শাহবাগ মোড়ে গেলে সেখানে তাদের উপর পুলিশ হামলা চালায় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট পুলিশি হামলার প্রতিবাদ এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিচারের দাবিতে মিছিল নিয়ে শাহবাগ অভিমুখে যাওয়ার পথে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ বর্বরভাবে সে মিছিলে হামলা চালায়। গ্রেফতার করা হয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু, নগর শাখার সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাসুদ রেজা, শফিকুল ইসলাম, মুক্তা ভট্টাচার্য, সেঁজুতি চৌধুরী, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সালমান সিদ্দিকী, ভজন বিশ্বাস, প্রগতি বর্মন তমা, রফিকুজ্জামান ফরিদ, কৃষ্ণ বর্মন, নিখিল, অনিমেষ রায়, বিকাশ, লাভা, খোকন, আন্নি, রাব্বি-সহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এমনকি থানায় ঢুকিয়ে দরজা জানালা লাগিয়ে লাইট বন্ধ করে দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হামলায় আহত অনিমেষ, বিকাশ, খোকন ও নিখিলকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া শেষে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই নির্যাতনের ঘটনায় দেশের বিবেকবান মানুষ ধিক্কারে ফেটে পড়ে।

বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ৩০ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মিছিলে বর্বরোচিত পুলিশি হামলা, গ্রেফতার ও থানায় দরজা-জানালা বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত ছাত্র নেতৃবৃন্দের উপর শারিরিক নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদী মিছিলের উপর শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, গ্রেফতারকৃত ছাত্র নেতৃবৃন্দকে থানা হেফাজতে দরজা-জানালা বন্ধ করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পুলিশ যে সংঘবদ্ধ বর্বরোচিত হামলা পরিচালনা করেছে তা ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে পুলিশের ঘৃণ্য নির্যাতক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তি সহ সর্বস্তরের প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তলতে হবে। বিবৃতিতে তিনি হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন।

নোয়াখালি : সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের মিছিলে বর্বরোচিত পুলিশি হামলার বিচার, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করে পুনঃ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট : সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা ও ছাত্র ফ্রন্টের মিছিলে পুলিশি হামলা ও নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সিলেট নগর শাখার উদ্যোগে ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সাম্যবাদ অক্টোবর ২০১৫

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments