ধর্মের নামে মানুষ হত্যা রুখে দাঁড়ান — বাসদ (মার্কসবাদী)
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ‘হলি আর্টিজান’ রেস্তোঁরায় আইএস নামধারী মৌলবাদী জঙ্গীদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হারাল বিদেশিসহ ২২ জন নিরপরাধ মানুষ। এর এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতকে লক্ষ্য করে পরিচালিত সন্ত্রাসী আক্রমণে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর আগে ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি। ধর্মান্ধতা মানুষকে কতটা অমানুষ করে তুলতে পারে — এসব হত্যাকান্ড তারই সাক্ষ্য। ইসলাম রক্ষার নামে বিদেশি-অমুসলিম-ভিন্নমতালম্বীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর এ অপচেষ্টার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। সাথে সাথে দেশবাসীর কাছে এ আবেদনটুকুও রাখতে চাই — কেবলমাত্র আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-সংবেদন দিয়ে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো যাবে না। এজন্য নির্মোহভাবে এর কার্যকারণ অনুসন্ধান করি, বিকাশের প্রেক্ষাপটটিকে বুঝি, উত্তরণের লক্ষ্যে সচেতন ক্রিয়ায় যেন নিজেদের সামিল করি।
সরকার কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না
গত কয়েকমাসে একের পর এক খৃষ্টান-বৌদ্ধ-হিন্দু সম্প্রদায়ের যাজক-ভিক্ষু-পুরোহিত, শিয়া-আহমদিয়া-বাহাই-সূফী সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ধারাবহিকভাবে লেখক-প্রকাশক-ব্লগার, শিক্ষক হত্যা হয়েছে। সরকার এসবকে কখনো ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে লঘু করে দেখাতে চেয়েছে, কখনো সরকারবিরোধী চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপিয়েছে। কিংবা ‘অবিলম্বে খুনীদের খুঁজে বের করা হবে’ এ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে দায় সেরেছে। বেশীরভাগ ঘটনারই তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া তেমন অগ্রসর হয়নি। সর্বশেষ পুলিশী হেফাজতে থাকা কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গীকে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা ও ভূমিকা চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি মন্ত্রী-এমপিদের কথাবার্তায় উগ্রবাদী হামলাকারীরা উৎসাহিত হয়েছে। এই সবকিছুর সুযোগে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী বেপরোয়া ও শক্তিশালী হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিস্তার ঘটল কি করে?
বীজ থেকে গাছ যেমন আলো-বাতাসসহ উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে বড় হয়ে ওঠে; তেমনি কোন্ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক জমিনের উপর ধর্মীয় উন্মত্ততার প্রকাশ ঘটছে তা অনুধাবন করা জরুরী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র তথা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল। প্রত্যাশা ছিল, ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে একটি গণতান্ত্রিক, শোষণহীন রাষ্ট্র হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ আকাঙ্খার বিপরীতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। শোষণমূলক-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজে-বৈষম্যের তীব্রতা বাড়িয়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারত্ব-অনাহারে জর্জরিত মানুষকে চেতনার পশ্চাৎপদ অবস্থানে রেখে ভোটের স্বার্থে ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করা হয়েছে। একদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, অন্যদিকে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনাকে নষ্ট করেছে। আবার ক্ষমতা ও ভোটের স্বার্থে জামাত, হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ঐক্য-সমঝোতা রাজনীতিতে এদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করেছে। একধারার শিক্ষাব্যবস্থার বদলে কয়েক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা সমাজের বৈষম্যকে আরো প্রকট করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে বিরাট একটা জনগোষ্ঠীকে আধুনিক জগৎ-জীবনের অনুপযুক্ত করে পশ্চাৎপদতায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। আবার ইংলিশ মিডিয়ামসহ সাধারণ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষাদান রীতি ও উদ্দেশ্যে পাঠদান হয়, তাতে হয়তো ডিগ্রী মেলে কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা-বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবোধ গড়ে ওঠে না। এরকম পরিস্থিতিতে যদি অগণতান্ত্রিকতা ও অর্থনৈতিক শোষণ থাকে, যদি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ধারণ করার মত কার্যকর গণতান্ত্রিক শক্তি না থাকে, তাহলে পশ্চাৎপদতা-অন্ধতা-গোঁড়ামী এসবকে উপজীব্য করে নানা ধরণের ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশে এটাই ঘটেছে।
অতীত দিনে শাসক দলগুলো ক্ষমতার স্বার্থে জঙ্গী তৎপরতাকে মদদ জুগিয়েছে
১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলা শুরু হয়। যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে, পল্টনে সিপিবি’র জনসভায়, রমনার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, মাজার-সিনেমা হল-যাত্রা অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়। তৎকালীন সরকার এসব ঘটনা সমূহের সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার-হামলাকারীদের পরিচয় উদ্ঘাটন করেনি, বরং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের মদদে সর্বহারা দমনের নামে ‘বাংলা ভাই’-এর নেতৃত্বে জেএমবি-কে রাজশাহী অঞ্চলে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। তখন ‘দেশে কোন জঙ্গী নেই’, ‘সংবাদমাধ্যমের আবিষ্কার’ – এই কথা বলে বাংলা ভাই’র অস্তিত্ব¡ অস্বীকার করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হরকাত-উল-জিহাদের একটি গ্রুপকে সহযোগিতা করে প্রশাসন। ২০০৫ সালে জেএমবি ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। সারাদেশে সরকারি অফিস-কোর্ট, আহমদিয়া মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণে নামায় বাধ্য হয়ে তখনকার সরকার সেই জঙ্গীদের দমনে তৎপর হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ফলাফলে সৃষ্ট মুসলিম অবমাননাবোধ মৌলবাদকে শক্তি যুগিয়েছে
প্যালেস্টাইন-ইরাক-আফগানিস্তান-লিবিয়া-সিরিয়া প্রভৃতি মুসলিম দেশে সাম্রাজ্যবাদীরা যে ভয়াবহ নিপীড়ন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঠিক পথ না পেয়ে দিশেহারা মুসলিম যুবকরা সন্ত্রাসী বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যুক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে বড় ধরণের সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ এরই সাক্ষ্য বহন করে। পশ্চিমা মিডিয়ার পরিকল্পিত মুসলিমবিদ্বেষ প্রচারও ধর্মান্ধ-উগ্রবাদী তৎপরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। আবার এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ‘ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে’ — এরকম অভিযোগ তুলে দেশে দেশে হানা দেয়ার উপলক্ষ্য তৈরি করছে। আজ সারা বিশ্বে তালেবান, আল কায়েদা, আইএস সহ যেসব জঙ্গীগোষ্ঠীর নাম শোনা যায় আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তাদের আধিপত্য বিস্তারে স্বার্থে একসময় তাদের মদত দিয়েছে। আবার, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে সাম্রাজ্যবাদীরা আজ এসব দেশে হামলা-হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে। লক্ষ্য — মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও মধ্যপ্রাচ্যে পুনঃআধিপত্য বিস্তার করা। যারা ধর্মীয় বোধ থেকে পুরো বিষয়টি ক্রুসেড হিসেবে দেখছেন, তাদেরকে আমরা ভাবতে বলি — আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকায় যুগ যুগ ধরে আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো আগ্রাসন চালিয়েছে। সেখানে মুসলমানরা নেই, সেখানকার অনেক দেশের অধিবাসীরাই ধর্মমতে খ্রীস্টান। এখানেও আগ্রাসনের লক্ষ্য একই — হীরা, স্বর্ণসহ বিপুল খনিজসম্পদ। ঘটনাক্রমে পৃথিবীর তেল সম্পদের বড় অংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সে লক্ষ্যেই বিভিন্ন অজুহাতে আফগানিস্তানে আক্রমণ, ইরাক দখল, লিবিয়াকে ধ্বংস করা ইত্যাদি ঘটেছে।
নিরীহ মানুষ হত্যা করে ধর্ম রক্ষা হয় না
আজ যেসব তরুণ যুবক হতাশা-বিচ্ছিন্নতা কিংবা বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের আগ্রাসন দেখে ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে বেছে নিচ্ছেন, তারা জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। চাপাতি দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী মানুষকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে কোন্ ধর্মবাণী প্রচারিত হচ্ছে? দেশে মানুষের ওপর কত ধরণের নিপীড়ন চলছে — কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, শ্রমিক পাচ্ছে না বাঁচার মত মজুরি, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সমস্ত কিছু পণ্যে পরিণত, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এসব কিছুর বিরুদ্ধে উগ্র মৌলবাদীদের কোন লড়াই নেই। নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করে সারা বিশ্বে যে ভয়-ভীতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাকেই কাজে লাগাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীরা। দেশে দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করছে। নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করার দমনমূলক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। শরীরের কোথাও জখম হলে যেকোন পন্থায় তা সারে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের যথাযথ পথে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হয়। আজ দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট অধিকারহীনতা, বৈষম্য, জাতিগত-ধর্মীয় নিপীড়ন, সম্পদ লুন্ঠনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে দেশে দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শোষিত জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা জরুরী।
রাষ্ট্র-সমাজ-শিক্ষাব্যবস্থার অবক্ষয়ের দিকে তাকানো জরুরি
১৯৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া দেশে শোষণমূলক ব্যবস্থার অবসান হয়নি। বরং বৈষম্য বেড়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। রাষ্ট্র ও অর্থনীতি লুটপাট-দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে প্রায় সমস্ত সম্পদ কেন্দ্রীভূত। আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা গোটা সমাজমনন ছেয়ে ফেলেছে। পাড়া-মহল্লায় বৃহত্তর আত্মীয়তার গ-ি আজ আর নেই। বিচিছন্নতা এতটা মাত্রায় যে মা-বাবা আজ আর সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। আবার পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পেছনে ছুটতে গিয়ে যে অযাচিত প্রতিযোগিতার ভেতর শিশু-কিশোরদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে, তা মানবিক সত্তাকে বিনষ্ট করছে। মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ প্রয়োজনীয় সব আয়োজনই সংকুচিত। ফলে ছাত্ররা ডিগ্রীধারী হচ্ছে, দক্ষ হচ্ছে, কিন্তু মানবিকতা-মনুষ্যত্ব হারাচ্ছে। জঙ্গীবাদের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে আজকে যে প্রথিতযশা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আলোচনায় এসেছে, তা কি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না — বাণিজ্যীকীকরণের ঘূর্ণাবর্তে যে শিক্ষাকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, তার ফল আমাদের সমাজজীবনে কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্য জরুরী, কিন্তু কাদের নিয়ে ঐক্য হবে
গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর সরকারি দল, বিরোধী দল, বিভিন্ন বামপন্থী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক আসছে। ঐক্য জরুরী, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যাভিমুখী রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য কি পরিস্থিতির উত্তরণে পথ দেখাবে? কেবল রোগ দেখিয়ে রোগের কারণ না জেনে রোগ নির্মূল করা যাবে না। ফলে শাসন প্রক্রিয়ার যে ধারাবাহিকতায় ধর্মান্ধতা গোটা সমাজ জুড়ে আসন গেড়েছে, শিক্ষাসহ রাষ্ট্র-সমাজ ক্রমাগত জনস্বার্থবিমুখ অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, সবকিছুই সে একই প্রক্রিয়ায় চলবে আর জঙ্গীবাদ ইস্যুতে সবাই এক হয়ে দাঁড়ালেই সব মুশকিল আসান — এ ধারণা কেবল ভ্রান্তই নয়, পথানুসন্ধানী মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করা। আমরাও মনে করি, ঐক্য জরুরী এবং সে ঐক্য হবে সকল প্রকার শোষণ-বৈষম্য, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াকু শক্তির ঐক্য। সমস্ত গণতান্ত্রিক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ও এ চিন্তায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।
জঙ্গীবাদবিরোধী ঐক্যের ডাকের আড়ালে নেয়া হচ্ছে জনবিরোধী নানা পদক্ষেপ
গুলশান ও শোলাকিয়া ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে উত্তেজনার ফাঁকেই সুন্দরবনবিধ্বংসী রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি সম্পন্ন করেছে সরকার। আগামী মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকর হবে। নির্বাচনবিহীন এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার অগণতান্ত্রিক শাসনকে পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক নীতি-মূল্যবোধ-সংস্কৃতি বিবর্জিত দমনমূলক যে শাসনব্যবস্থা জারি রেখেছে তাতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের শক্তি যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি মৌলবাদী শক্তির তৎপরতার জমিন প্রশস্ত হচ্ছে। আমরা সমস্ত লড়াকু, গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শক্তিকে আহ্বান জানাই — আসুন, সম্মিলিত শক্তিতে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলা করি। জনগণের দাবিতে শক্তিশালী লড়াই গড়ে তুলতে না পারার যে শূন্যতায় দেশের যুবক-তরুণদের একাংশ ভুল আদর্শে দিকভ্রান্ত হচ্ছে তা অনুধাবন করে আত্মসমালোচনা নিয়ে মানুষের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরি।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), ২২/১ তোপখানা রোড (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১০০০
ফোন-ফ্যাক্স : ৯৫৭৬৩৭৩, ০১৭১১-৮৯৫৮৪৫
ওয়েবসাইট: www.spbm.org
প্রকাশকাল : ২২ জুলাই ২০১৬