বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রাঙামাটি জেলার পক্ষ থেকে ২২ জুন ২০১৭ বেলা ১১ টায় মানব বন্ধন, সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার নেতা কমরেড কলিন চাকমার সভাপতিত্বে ও মধুলাল চাকমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মুক্তা ভট্টার্চায, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক ফজলে রাব্বী ও রাঙ্গামাটি জেলার সদস্য সুনীল কান্তি চাকমা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় ধসে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতি ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করছে। পাহাড় ধসে মারা গেছে শতাধিক, এখনো উদ্ধার করা যায়নি অনেক লাশ। শত শত মানুষ আজ গৃহহীন অবস্থায় অমানবিক জীবনযাপন করছে। ফসল, ফলের বাগান ধ্বংসের সাথে সাথে শত শত মানুষের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসের এ ভয়াবহ ঘটনাকে নিছক প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। বিষয়টির সাথে রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে যুক্ত। ‘কেন বিপর্যয়’ ঘটলো তার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড় ব্যবস্খাপনা নিয়ে চলেছে অনিয়ম। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী জলবিদ্যুতের জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু করেছিল। সেসময় উপত্যকার মানুষ বাধ্য হয়ে উঠে এসেছে পাহাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভূতাত্ত্বিক ও প্রতিবেশগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে বারবার। ফলে বনভূমি ও পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অবহেলা এবং প্রশাসনিক দূর্বলতার সুযোগে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ এ পাহাড়কে নির্বিচারে ব্যবহার করেছে। পাহাড় কাটা ,দখল, মাটি বিক্রি, ইট ভাটা, বসতিসহ, হোটেল মোটেল ইত্যাদি স্থাপনা করেছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক বনায়ণ করা হয়েছে। ফলে এ সমস্ত কারণে পাহাড়ের সামগ্রীক ভারসাম্য হুমকিরমুখে পতিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা একাধারে মানবিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়। ফলশ্রুতিতে আমরা আজকে এতোবড় মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার গুলোকে ক্ষতি পূরণসহ সরকারি উদ্যোগে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পুর্নবাসন করার দাবি জানান।
দ্রুত নিরাপদ স্থানে পুর্নবাসন করাসহ তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসককে দেয়া বরাবর স্মারকলিপি –
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(মার্কসবাদী) রাঙামাটি জেলার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় ধসে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতি ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করছে। পাহাড় ধসে মারা গেছে শতাধিক, এখনো উদ্ধার করা যায়নি অনেক লাশ। শত শত মানুষ আজ গৃহহীন অবস্থায় অমানবিক জীবনযাপন করছে। ফসল, ফলের বাগান ধ্বংসের সাথে সাথে শত শত মানুষের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আমাদের সাধ্য অনুযায়ি খাদ্য, শিশু খাদ্য, নারীদের বস্ত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতাও পেয়েছি।
পাহাড় ধ্বসের এ ভয়াবহ ঘটনাকে নিছক প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে আমরা মনে করি না। বিষয়টির সাথে রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে যুক্ত। ‘কেন বিপর্যয়’ ঘটলো তার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড় ব্যবস্খাপনা নিয়ে চলেছে অনিয়ম। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী জলবিদ্যুতের জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু করেছিল। সেসময় উপত্যকার মানুষ বাধ্য হয়ে উঠে এসেছে পাহাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভূতাত্ত্বিক ও প্রতিবেশগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে বারবার। ফলে বনভূমি ও পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অবহেলা এবং প্রশাসনিক দূর্বলতার সুযোগে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ এ পাহাড়কে নির্বিচারে ব্যবহার করেছে। পাহাড় কাটা ,দখল, মাটি বিক্রি, ইট ভাটা, বসতিসহ, হোটেল মোটেল ইত্যাদি স্থাপনা করেছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক বনায়ণ করা হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ২৭.৫২শতাংশ প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়েছে। ৬১শতাংশ পাহাড়ি ঝরনা শুকিয়ে গেছে।প্রাকৃতিক গাছ কেটে সেগুন, গজারি, রাবার ও ফলেরবাগান তৈরি করাতে পাহাড়ের মাটি আলগা ও শুকিয়ে গেছে। ফলে এ সমস্ত কারণে পাহাড়ের সামগ্রীক ভারসাম্য হুমকিরমুখে পতিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা একাধারে মানবিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়। ২০০৭ সালের পাহাড় ধসের ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে একটি রাষ্ট্রীয় সুপারিশমালা তৈরী হয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, “ভূ-তাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে মাটির ধারণ ক্ষমতা এবং পাহাড়ের ঢালের কোণ ও শক্তি নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা করা। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অবশ্যই ভূ-তাত্ত্বিক সুপারিশ মেনে চলা।” ৩৬ টি সুপারিশমালায় আরো বলা হয়েছে, “ প্রাকৃতিক বন সংরক্ষনসহ পাহাড়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইট ভাটার অনুমোদন না দেয়া, ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন নিষিদ্ধ করা।” কিন্তু এসমস্ত সুপারিশ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান , বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি কেউই আমলে নেয়নি। ফলশ্রুতিতে আমরা আজকে এতোবড় মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি।
আজ রাঙামাটির প্রকৃতি ও প্রতিবেশ দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির মুখে। পত্রিকার সূত্রমতে (প্রথম আলো, ১৯জুন১৭’) সরকারি স্থাপনাগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রকৃতি ও জনজীবন বাচাঁতে ভূ-তত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষিতে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ভিত্তিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন না করলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে বলে আমরা মনে করি। আমরা প্রত্যাশা করি উল্লেখিত দাবি প্রেক্ষিতে পাহাড় ধস রোধ ও জনজীবন রক্ষার স্বার্থে আপনি যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।
আমাদের দাবি সমূহ:
১. ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার গুলোকে ক্ষতি পূরণসহ সরকারি উদ্যোগে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পুর্নবাসন কর।
২. পাহাড়ে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষন কর। ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ ছাড়া পার্বত্যস্থানে অবকাঠামো নির্মান বন্ধ কর। পাহাড় কাটা,দখল,অপরিকল্পত বসতিস্থাপন, ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ কর।
৩. পাহাড় ধসের চিহ্নিত কারণসমূহ রোধে ২০০৭ এ প্রণীত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূ-তত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরী ও বাস্তবায়ন কর।