রানা প্লাজা শ্রমিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় সাভারস্থ রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপের সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী হারুন আল রশীদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু প্রমুখ।
এছাড়া, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন্সে শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং অবাধ ট্রেডইউনিয়ন অধিকার, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের দাবিতে সংগঠনের উদ্যোগে এদিন সকাল ১০টায় গাজীপুর চৌরাস্তায় এবং বিকাল ৫টায় মীরপুর ১১নং পূরবী সিনেমা হলের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিরপুর-পল্লবী : বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন মিরপুর-পল্লবী আঞ্চলিক শাখা ২৪ এপ্রিল বিকালে রানাপ্লাজা শ্রমিক গণহত্যা দিবস স্মরণ বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিলের আয়োজন করে। বিকাল ৪টায় পল্লবীস্থ সংগঠনের কার্যালয়ে কালো ব্যাজ ধারণ এবং নিরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের (কেন্দ্রীয়) সংগঠক শ্রমিক নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক এবং মিরপুর পল্লবী আঞ্চলিক শাখার সংগঠক ডা. মুজিবুল হক আরজু। আলোচনা শেষে একটি মিছিল পূরবী হলের সামনে যায় এবং সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ডা. মুজিবুল হক আরজুর সভাপতিত্বে এবং সাইফুল হাসান মুনাকাতের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংগঠক ফখরুদ্দিন কবির আতিক, পরিবহন শ্রমিক নেতা মাহবুব হাসান এবং নির্মাণ শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম ।
ফখরুদ্দিন কবির আতিক রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে দায়ী মালিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেন। অবিলম্বে নিহত-আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কারখানায় শ্রম পরিবেশ নিশ্চিত করা, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দান এবং মাসিক নুন্যতম বেতন ১২০০০ টাকা দাবী করেন। তিনি গৃহ শ্রমিকদের (গৃহ পরিচারিকা) নিয়োগপত্র দান,সাপ্তাহিক ছুটি এবং নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা দাবি করেন। মালিকশ্রেণির বিরুদ্ধে সকল ধরনের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী সংগঠন এবং বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
পরিবহন শ্রমিক নেতা মাহবুব হাসান বাংলাদেশের শ্রম আইনকে পুরনো আখ্যায়িত করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়েনের আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান সবাইকে। নির্মাণ শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম বলেন, রানাপ্লাজার শ্রমিক গণহত্যার ঘটনা সকল সেক্টরে শ্রমিকদের আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করতে শিক্ষা রেখে গেছে।
সভাপতি ডা. মজিবুল হক আরজু বলেন, এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন এক সভাপতি এবং আর এক সভাপতির ছেলে শ্রমিকদের লুট করা টাকায় নির্বাচনের নাটক করছে, রানা প্লাজার শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলিয়ে দিচ্ছে। তাই শ্রমিকদেরই নিজেদের দাবি নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালি করার মাধ্যমে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশ শেষে মিছিল শুরু হয়ে মিরপুর ১২ নাম্বারের চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
গাজীপুর : বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সকাল ১০টায় গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে সমাবেশ চলাকালীন পুলিশী বাধার মুখে সমাপ্ত হয়। নারীনেত্রী এড. ফরিদা ইয়াছমিন ও গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী জনতা রানীর বক্তব্য শেষ করার পর পুলিশ বাধা প্রদান করে অনুমতির অজুহাতে। এ সময় শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ শ্লোগান দিলে পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নেয় এবং মাইক ছিনিয়ে নেয়ার জন্য টানাটানি করে। পরে সাম্যবাদ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা করেন বাসদ মার্কসবাদী গাজীপুর জেলা সমন্বয়ক তরুন কান্তি বর্মন ও ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি মসিউর রহমান খোকন।
তেজগাঁও : বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগারের পক্ষ থেকে রানাপ্লাজা শ্রমিক গণহত্যার বিচার, আহত-নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন স্থানে নারী লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে ২৪ এপ্রিল বিকাল ৫টায় নাবিস্কো মোড়ে মানববন্ধন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন নারীমুক্তি কেন্দ্রের তেজগাঁ আঞ্চলিক শাখার সংগঠক মাহফুজা খানম রিতা, পাঠাগারের সংগঠন রোকনুজ্জামান রনি।