বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জহিরুল ইসলাম ও উজ্জ্বল রায় এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ হতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল শ্রমিকদের গত কয়েক মাসের মজুরি পরিশোধের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েও আজ পর্যন্ত তা পরিশোধ না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার ও বিজেএমসি কর্তৃক শ্রমিকদের পাওনা মজুরি পরিশোধে গড়িমসি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ পাটকলশ্রমিকদের সাথে প্রতারণা ও অমানবিকতার সামিল।”
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের গত দশ সপ্তাহের মজুরি ও তিন মাসের বেতনবকেয়া পড়েছে। মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে বিগত এপ্রিলে সরকার-শ্রমিক সংগঠন ও বিজেএমসির মধ্যে ত্রিপক্ষীয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সরকারের পক্ষ হতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ২৫এপ্রিলের মধ্যে দশ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি ও তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে এ মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ২৫ এপ্রিলের পর প্রায় দু’সপ্তাহ পার হতে চললেও বকেয়া মজুরি পরিশোধে কোন উদ্যোগনেই। লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করা, উপরন্তু মজুরি পরিশোধে নানা তালবাহানা সরকারের শ্রমিকস্বার্থবিরোধী চেহারাকেই আবার উম্মোচিত করল। শ্রমিকরা যখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তখন পাটমন্ত্রী পাটমন্ত্রণালয়ের টাকায় পাটপণ্যের বাজার খুঁজতে দেশবিদেশ সফর করছেন। পাটশ্রমিক ন্যায্য পাওনা না পেয়ে ধুঁকে ধুকে মরবে, অথচ দেশের পাটশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে, এটি কি বিশ্বাসযোগ্য? এ প্রেক্ষিতে সংগ্রামী শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি আমরা আহবান জানাই, কোন ফাঁকাআশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি নয়, একমাত্র জোরদার আন্দোলনের উপরই বিশ্বাস রাখুন। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আপোষহীন আন্দোলনই একমাত্র গ্যারান্টি।”
লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) খাতে ছেড়ে দেয়া হবে বলেসম্প্রতি একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পাটমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ আরোবলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ সরকারের ভ্রান্ত নীতি, বিশ্বব্যাংকের পাটশিল্প ধ্বংসেরপরামর্শ বাস্তবায়ন, সরকারের উচ্চ মহলের যোগসাজশে বিজেএমসি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-লুটপাট, অব্যবস্থাপনাও মাথাভারী প্রশাসন। এ সমস্যাগুলো নিরসনের উদ্যোগ নিলে সহজেই পাটখাতকে লাভজনক করা সম্ভব।কিন্তু সে পদক্ষেপ না নিয়ে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট লোকসানের অজুহাতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোকে পিপিপি খাতে ছেড়েদেয়ার প্রস্তাব কার্যতঃ দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে পাটখাতকে পরিপূর্ণভাবে বেসরকারীকরণের গভীরষড়যন্ত্রেরই অংশ। তাই আজ পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও ন্যায্য পাওনা আদায়ের আন্দোলনেরপাশাপাশি পাটখাত লাভজনক করা ও বেসরকারীকরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও উত্থাপিত ৯ দফা মেনে নেওয়ার জন্যসরকারের কাছে জোর দাবি জানান ।