বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী আজ এক বিবৃতিতে দেশের সব জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল আরোপের সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে মহাজোট মন্ত্রিসভা কর্তৃক গৃহীত এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, যানবাহনের ওপর আরোপ করা হলেও টোলের বোঝা শেষপর্যন্ত জনসাধারণের ঘাড়েই চাপবে। নতুন করে এই বাড়তি টোল ধার্য্য করার ফলে বাস ভাড়া বাড়বে, পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ায় দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে ফলে নতুন আরোপিত টোল সেবার পরিবর্তে জনগনের উপর চাবুক হিসেবে পতিত হবে । কিছুদিন আগেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর সড়কে টোল আরোপের এই সিদ্ধান্তে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্দশাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সড়কে টোল আদায়ের ইজারা-নিলাম-ডাক ইত্যাদি দখলের মাধ্যমে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পকেট ভারী করার ব্যবস্থা করা হবে, এর ফলে চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বাড়বে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, টোল আদায় করে সেবার মান বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, অথচ জনগণ সরকারি কোষাগারে যে ট্যাক্স দেয় সেই অর্থ দিয়েই এতদিন সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। এখন জনগণের অর্থে নির্মিত সড়ক-সেতুসহ যোগাযোগ অবকাঠামোকে সরকার ধাপে ধাপে, খ- খ-ভাবে বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিতে চায়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই টোল আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে পুঁজিপতিরা সড়ক-সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিনিয়োগ করে বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে মুনাফা লুটতে পারে। এভাবে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যোগাযোগ-বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানিসহ যা কিছু অপরিহার্য সেবা জনগণের অধিকার হিসেবে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল তা থেকে সরে এসে এসব সেবাখাত বেসরকারি ও বাণিজ্যিকীকরণ করে ব্যবসায়ীদের মুনাফা লুন্ঠনের ক্ষেত্রে পরিণত করছে। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের অনুসৃত বেসরকারিকরন-উদারীকরণ-বিশ্বায়ন নীতিকেই বাংলাদেশের ধনিকশ্রেণীর স্বার্থক্ষাকারী শাসক দলগুলো এভাবে বাস্তবায়ন করছে। এইসব গণবিরোধী নীতি ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গণবিক্ষোভ বাড়ছে। কিছুদিন আগে ব্রাজিলে ভাড়াবৃদ্ধি ও সরকারি পরিবহন ব্যক্তিখাতে দেয়ার প্রতিবাদে বিরাট আন্দোলন হয়েছে। বাংলাদেশেও গায়ের জোরে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার কর্তৃক জনমতকে উপেক্ষা করে নেয়া এসব স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপকে প্রতিহত করতে হলে শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।