Sunday, November 24, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - আগষ্ট ২০১৬রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র — বিশাল ব্যয়ের বোঝা ও ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র — বিশাল ব্যয়ের বোঝা ও ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশ

image-27795পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষে গত ২৬ জুলাই রাশিয়ার সাথে ঋণচুক্তি করলো মহাজোট সরকার। সম্পূর্ণত রাশিয়ার ঋণ, প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার ওপর নির্ভর করে বিপুল ব্যয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে সচেতন মহলে বহুদিন ধরেই উদ্বেগ বিরাজ করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি মূলত ৪টি কারণে। প্রথমত, এর বিপুল ব্যয় ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বারবার ব্যয়বৃদ্ধি। ২০০৯ সালে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকার কথা বলা হলেও নির্মাণ শুরু হওয়ার আগেই কয়েক ধাপে ব্যয় বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার বা ১ লক্ষ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই ব্যয় আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দরকষাকষি করতে না পারাতেই এই অতিরিক্ত ব্যয়। এখানেই আসে দ্বিতীয় আপত্তির কথা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ-পরিচালনায় অভিজ্ঞতাসম্পনড়ব বিশেষজ্ঞ বা জনবল বাংলাদেশের নেই, তৃতীয় কোনো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও দেয়া হয়নি। ফলে, সবকিছুর জন্য রাশিয়ান কোম্পানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। তৃতীয়ত, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো দুর্ঘটনা হলে প্রলয়ংকরী ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয় মানুষ ও পরিবেশের। চেরোনবিল, থ্রি মাইল আইল্যান্ড কিংবা সাম্প্রতিক ফুকুশিমা এর মত বড় বড় দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রযুক্তির দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোতে, যারা নিজস্ব দক্ষতাকে কেন্দ্র করে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজষ্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকি থাকে। উচ্চ সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা অনুসরণ করা প্রয়োজন তা বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হবে কি না সে বিষয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। চতুর্থত, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কাঁচামাল ইউরেনিয়াম থেকে উৎপনড়ব তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ১০ হাজার বছর পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। বলা হচ্ছে রাশিয়া এই বর্জ্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণের কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি এখনও স্বাক্ষর হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে সুদূর রাশিয়ায় নিরাপদে এই বর্জ্য কিভাবে নিয়মিত পরিবহন করা হবে সে বিষয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও খুব কম হবে না। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল চুক্তি সইয়ের পর জানানো হয়েছিল যে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে পাঁচ টাকা। আবার বিদ্যুৎ উনড়বয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে রূপপুর কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সাড়ে সাত টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ফলে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ তো নয়ই, সস্তাও নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস-কয়লা-পানি-বায়ু প্রভৃতি বিপুল প্রাকৃতিক উৎস আমাদের দেশে আছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জটিল প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আয়ত্ত্ব করার আগে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যয়বহুল প্রকল্প কেন? এর পেছনে একদিকে আছে শাসকদলের বাহবা নেয়ার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে বিশাল বাজেটের এই প্রকল্প থেকে হয়তো অনেকের পকেটে মোটা অংকের কমিশন জমা হবে। কিন্তু হুমকির মুখে পড়বে জনগণ আর ঋণের বোঝা চাপবে দেশের ঘাড়ে।

সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৬

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments