রেডিমেড দর্জি শ্রমিকদের মজুরির হার বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ৬ মার্চ বিকাল সাড়ে ৩টায় সদরঘাটস্থ লেডিস মার্কেট মালিক সমিতি বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানের আগে বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে মিছিল শুরু হয়ে সদরঘাট, কোতোয়ালী থানার সামনে দিয়ে পাটুয়াটলি হয়ে সাইকেল মাঠে সমাবেশে মিলিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সংগঠক ফখ্রুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা কমরেড উজ্জল রায়, রাজীব চক্রবর্ত্তী, মাসুদ রানা, আবির মাহমুদ, আরিফ খান, মকবুল মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “দেশের মানুষের পোশাকের চাহিদা পূরণ করে যে রেডিমেড দর্জি শ্রমিকরা, তাদের জীবনের কাহিনী কেউ জানে না। পুরান ঢাকার সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজস্ব কারখানায় শ্রমিক খাটিয়ে পোশাক তৈরি করান। যে শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এইসব ছোট ছোট কারখানায় কাজ করে তারা একটি প্লেন ফুল শার্ট ১৩ টাকা, হাফ শার্ট ১১ টাকা হারে মজুরি পায়। ৮ ঘন্টা কাজে তাদের আয় হয় গড়ে ১৮০ টাকা। বাড়তি আয়ের জন্য শ্রমিকদের রাত পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয়। অবাক করার বিষয়, গত ১৫ বছরে ১ টাকাও বাড়েনি এই শ্রমিকদের মজুরি। কিন্তু বহুগুণ বেড়েছে দ্রব্যমূল্য-বাড়ী ভাড়া-গাড়ী ভাড়া-গ্যাস-বিদ্যুতের বিল। মালিকরাও বেশি দামে কিনছে কাপড়-সুতা-বকরমসহ সকল উপকরণ, কেবল ১৫ বছর আগের দামে কিনছে শ্রমিকের শ্রম। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। তাহলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে না কেন? এছাড়াও আছে হাজার সমস্যা। কাজ করে শ্রমিকদের যা পাওনা হয় তা তারা মাসিক ভিত্তিতে পায় না। মালিক তাদের দৈনিক ২০০ টাকা খরচ দেয়। এর বাইরে কাজের বাকী টাকা ঝুলে থাকে চাঁদ রাতের (ঈদের আগের রাত) জন্য। রেডিমেড দর্জি কারখানাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নেই পর্যাপ্ত টয়লেট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজ করলেও মালিকদের পক্ষ থেকে নেই কোন নাস্তার ব্যবস্থা, নেই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ। ঈদ বোনাস বা সিজন বেনিফিট কোনটাই পায় না শ্রমিকরা। আগুন বা ভূমিকম্পের মত দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ হলে বহুতল মার্কেট থেকে দ্রুত বের হওয়ার সিঁড়ি অপর্যাপ্ত। নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। নেই দুর্ঘটনা বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ। দর্জি শ্রমিকদের কোন নিয়োগপত্র নেই, ফলে নিয়োগ-ছাঁটাই-চাকুরির শর্তাবলী সবই মৌখিক ভিত্তিতে হয়। শ্রমিকরা কোন টার্মিনেশন বেনিফিট বা সার্ভিস বেনিফিট দাবি করতে পারে না। এদেশের শ্রম আইনে স্বীকৃত যে অধিকার তাও রেডিমেড দর্জি শ্রমিকরা পাচ্ছে না।”
সমাবেশ থেকে দাবি জানানো হয়, প্লেন ফুল শার্ট সেলাই মজুরি ৩০ টাকা, হাফ শার্টে ২৫ টাকা দিতে হবে। মাসিক মজুরি মাস শেষে পরিশোধ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতি বছর মজুরির হার বৃদ্ধি করতে হবে। কাজের মাঝে নাস্তার ব্যবস্থা কর, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। ঈদ বা উৎসব বোনাস, সিজন বেনিফিট দিতে হবে। কারখানার স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ-চিকিৎসা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা-প্রশস্ত সিঁড়ি নিশ্চিত কর। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয় পত্র দিতে হবে, বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা চলবে না। শ্রম আইন অনুসারে প্রাপ্য সকল অধিকার রেডিমেড দর্জি শ্রমিকদের দিতে হবে।
শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের আহ্বান জানান শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।