“দাতা সংস্থাসমূহের রেল বেসরকারিকরণের প্রেসক্রিপসান বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবেই সম্প্রতি রেলমন্ত্রী রেলভাড়া বৃদ্ধির ঘোষনা দিয়েছেন। যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও লোকসান কমানোর অজুহাতে ২০১২ সালেও রেলভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু যাত্রীসেবার মান বাড়ে নি, লোকসানও কমে নি। তাহলে আবারো ভাড়াবৃদ্ধি কি লোকসান কমাবে, নাকি সাবেক রেলমন্ত্রীর কথিত রেলে ‘দুর্নীতির কালো বিড়াল’ ধরা দরকার আগে? বলা হচ্ছে ভর্তুকি দেয়া সম্ভব নয় বলে ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে। অথচ নানা অপচয়মূলক খাতে, কইক রেন্টাল ব্যবসায়ীদেও সরকার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, সাংসদদেও শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানিতে ট্যাক্স ছাড় দেয়া হচ্ছে। তাহলে জনগণের প্রধান পরিবহন রেলে কেন জনগণের ট্যাক্সেও টাকায় ভর্তুকি দেয়া হবে না?”- ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে নগরীর সিআরবি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রেলভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ ঢাকায় রেল ভবনের সামনে, চট্টগ্রামে সিআরবি ভবনের সামনে এবং সারাদেশে রেলস্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। দলের চট্টগ্রাম জেলা সদস্য সচিব অপু দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে সকাল ১১ টায় সিআরবি ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের জেলা কমিটির সদস্য শফিউদ্দিন কবির আবিদ, রফিকুল হাসান প্রমুখ।
বক্তারা আরো বলেন, “ সারা বিশ্বে রেলখাতের বিস্তৃতি ঘটানো হলেও আমাদেও দেশে রেলখাতকে চরম অবহেলা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দাতা সংস্থাসমূহের পরামর্শে রেলকে ক্রমাগত সংকুচিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরও রেলখাত লাভজনক ছিল। অথচ দাতা সংস্থাসমূহের প্রেসক্রিপসান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রেল ক্রমাগত লোকসানী খাতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩৪ টি স্টেশন, ৯ টি শাখা লাইন বন্ধ, ৬৫ টি মেইল ও লোকাল ট্রেইন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রেলের আধুনিকায়নে দেয়া হয় নি পর্যাপ্ত বরাদ্দ। ইঞ্জিন, কোচ, রেল লাইনের জরাজীর্ণ অবস্থা, জনবল সংকটের কারণে বেড়েছে রেল দূর্ঘটনা, বাড়ছে সিডিউল বিপর্যয়। যাত্রীসেবার মান নি¤œমুখী। রেলের এই অবস্থা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যা চরম জনবিরোধী। অথচ ২৩ টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে রেলের পাওনা ১২,৬১০ কোটি টাকা। রেলের ১২,১০০ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে। এই বকেয়া পাওনা ও দখলকৃত জমি উদ্ধার করে রেলের উন্নয়নে ব্যয় করলে, লে কর্মকর্তা-মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতি-লুটপাট রোধ করতে পারলে দাতাসংস্থাদের কাছে হাত পাতার দরকার নেই, যাত্রীভাড়া বৃদ্ধিরও প্রয়োজন নেই।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রেলের ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে সরকারের কাছে জোর দাবি এবং সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।