নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের প্রতি দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করা ও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার দাবিতে ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, জঙ্গী দমনের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে নির্যাতন চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, তাদের ঘর-বাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে, এমনকি নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এর পরিণতিতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পলিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের এ আচরণ আইনের শাসন ও মানবিকতা পরিপন্থী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন নতুন নয়। সেখানে তাদের নাগরিকত্ব নেই, তারা ভোটাধিকার ও সরকারি চাকুরি-স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষাসহ নাগরিক অধিকারবঞ্চিত, এমনকি বিয়ে-সন্তান ধারণ-ভ্রমণের ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক অনুমতি নিতে হয়। ২০১২ সালের দাঙ্গার পর এখনো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের ঘরবাড়ী-সম্পত্তিতে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাঙ্গালী অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ, তাদের উৎস যাই হোক্, কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করার পর তাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা অযৌক্তিক ও আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির বিরোধী।
তাঁরা আরো বলেন, প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা মানুষকে আশ্রয় দেয়া মানবিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে যেখানে বাঙ্গালীদের ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়ার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। জীবন রক্ষার্থে প্রয়োজন হলে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়া হোক্, নিবন্ধন করে পৃথক আশ্রয়শিবিরে তাদের রাখা হোক্ এবং দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের ফেরত নিতে ও তাদের অধিকার-নিরাপত্তা দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হোক।
নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের দুর্দশাকে পুঁজি করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন Ñ কিছু জঙ্গীগোষ্ঠীর উগ্র কর্মকাÐের জন্য সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেমন দায়ী হতে পারে না, তেমনি মিয়ানমার সরকার-সেনাবাহিনী বা বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের অপরাধে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে দায়ী করা চলে না। নতুবা তা মিয়ানমারের সমতুল্য অপরাধ হবে।
নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে, পয়োজনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করে রোহিঙ্গা সমস্যার মানবিক সমাধানে তাদের বাধ্য করতে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।