একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। রাষ্ট্রপতিকে জাতির অভিভাবক উল্লেখ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক চলমান সঙ্কটের প্রতি দিক নির্দেশ করে বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আপনি আপনার দেশপ্রেম ও নৈতিক ক্ষমতা বলে এই গভীর সঙ্কট উত্তরণে অবিলম্বে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনার যুক্তিযুক্ত বলিষ্ঠ ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বয়ে আনতে পারে।’
জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে নমনীয় হতে হবে। সরকারকে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গণদাবি মেনে নিতে হবে। গণদাবি অগ্রাহ্য করা হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি সরকারি দলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন সংবিধানেই বলা আছে কিভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ এখনো কার্যকর রয়েছে। তিনি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করে অষ্টাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও তার কার্যক্রম সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান।
সভাপতির ভাষণে সাইফুল হক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিরোধী দলের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করে সংলাপে বসুন। সংসদ ভেঙে দিয়ে দল-নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করুন। তিনি বলেন আরেকটি একতরফা নির্বাচনের ভার জাতি বহন করতে পারবে না। দেশকে গভীর সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিবেন না। তিনি সরকারকে লোক দেখানো প্রচার সর্বস্ব সংলাপের পরিবর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কট উত্তরণে কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
প্রেসক্লাবের সামনের সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সার্ক ফোয়ারা হয়ে পল্টন দিয়ে দৈনিক বাংলার মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাঁধা প্রদান করে। সেখান থেকে সাইফুল হক, মো. শাহ আলম, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মানস নন্দী, হামিদুল হক, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাচ্চু ভূঁইয়া বঙ্গভবনে গিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবর বাম গণতান্ত্রিক জোটের স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।