বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে আজ সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, কমরেড মানস নন্দী, কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল ও কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক এর নেতৃত্বে দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্তে, ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়েম বাঙালী জাতি পাকিস্তানি প্রায় ঔপোনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশের শ্রমিক-কৃষক সহ সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জিত হলেও বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক সহ সাধারণ মেহনতী মানুষ যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তা আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বুর্জোয়া শ্রেণী বাঙালী জাতির এই বিজয়কে তাদের নিজেদের শ্রেণী স্বার্থে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানি প্রায় ঔপোনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষ যে শোষণ-বঞ্চণা-নির্যাতনের মধ্যে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে সে অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী শ্রমদাসত্বের জীবন যাপন করছে। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহযোগীতায় বাঙালী জাতিকে মেধা ও মননশূন্য করতে বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষত্রের অগ্রগণ্য মানুষদের বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্থান রাষ্ট্রের শোষণ বৈষ্যমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রমিক-কৃষক সহ সকল স্তরের মানুষের সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণের মধ্যে শোষণ-বৈষম্যহীন চেতনার বিকাশ ঘটে। বাংলার নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগন শোষণমুক্ত সমাজের আশায় সশস্ত্র সংগ্রামে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশের শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষের আকাঙ্খিত শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের যে মৌল চেতনা ছিল শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, পুঁজিবাদ বিরোধী ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম বেগবান করার মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।