সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৪র্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
৩০ মার্চ, বুধবার। সকাল ১০টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ধ্বনিত হচ্ছে ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠো রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত..’। জগতের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত সকল মানুষের প্রতি জাগরণের আহ্বান রেখে এবং শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শুরু হয়েছিলো সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৪র্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন। আগের রাতের ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে আসা চার সহাশ্রাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিলো- তারুণ্য কী? সারাদেশের শিক্ষার ব্যয়বৃদ্ধির প্রতিবাদে একত্রিত হওয়া ছাত্র ফ্রন্টের সম্মেলন ছিলো তারুণ্যের শক্তির এক উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ। বেলা ১১টায় সম্মেলনের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন উদ্বোধকসহ মঞ্চে উঠেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, ভারত থেকে আমন্ত্রিত ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস্ অর্গানাইজেশন (এআইডিএসও)-এর সর্বভারতীয় সভাপতি কমরেড কমল সাঁই, সাধারণ সম্পাদক অশোক মিশ্র, সহ-সভাপতি ভিএন রাজশেখর, দেশের বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ, প্রগতিশীল ছাত্র জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যের পর অজস্র ব্যানার প্ল্যাকার্ডে সুসজ্জিত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর দৃপ্ত মিছিল ঢাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের অগ্রভাগে সংগঠনের পতাকা, তারপর বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, সুভাষ বোস, মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিনসহ ২০ জন মনীষীর ছবি, তারপর ৫ সারিতে ২৫ জনের হাতে সংগঠনের পতাকা; এরপরই মূল মিছিল – এই সজ্জা মিছিলকে অনন্য এক রূপদান করেছিলো। মিছিলের শ্লোগানে প্রকম্পিত হলো ঢাকা শহরের রাজপথ। সবাইকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, রাষ্ট্রের শিক্ষার দায়িত্ব অস্বীকার ও সকল রকম দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা ছাত্রসমাজ সহজে মেনে নেবে না। পদাতিক বাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল মিছিল এগিয়ে চললো দৃপ্ত পদভারে।
দুপুরের খাবার গ্রহণের পর বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। শুরুতেই চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমার নেতৃত্বে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি দল প্রায় ঘন্টাব্যাপী গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন। দুপুরের তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে ছাত্ররা গানে গানে শুনলো ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ মাটির সকল বড় মানুষদের কথা। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, সুভাষ বোস, শামসুজ্জোহাসহ বড় মানুষদের পথনির্দেশনা উঠে আসলো চারণের গানে।
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। আরও আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, এআইডিএসও’র কেন্দ্রীয় সভাপতি কমল সাঁই। আলোচনায় ছাত্রজমায়েতের মনোযোগ ও শৃঙ্খলা মুগ্ধ করেছে অতিথি ও পথচারীদের।
আলোচনা সভার শেষে মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী শ্রী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। শুরুতেই মানবমুক্তির সংগ্রামে আত্মাহুতি দেয়া সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি দর্শকদের উঠে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন। গাইলেন ‘সব মরণ নয় সমান’। সংগ্রামী মানুষদের প্রতি শিল্পীর ভালোবাসা সবাইকে আলোড়িত করলো। গান শুরু হতেই শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে উপস্থিত ছাত্র-জনতা ঠাঁয় বসে। প্রতুল মুখার্জী গেয়ে চললেন একের পর এক গান। গানের সুর, ভাষা ও গল্প দিয়ে দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে প্রেরণা সঞ্চার করে তিনি বিদায় নিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সভাপতির দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষিত হলো ছাত্র ফ্রন্টের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। সম্মেলনে নাঈমা খালেদ মনিকাকে সভাপতি, সহ-সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস ও স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি পরিচয় করিয়ে দিলেন বিদায়ী সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন। কমিটির অন্যান্যরা হলেন- সাংগঠনিক সম্পাদক, মাসুদ রানা, দপ্তর সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইভা মজুমদার, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তা ভট্টাচার্য, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক তাজনাহার রিপন এবং সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু, জয়দীপ ভট্টাচার্য, কলিন চাকমা, মাসুদ রেজা, বিটুল তালুকদার, মনিরুজ্জামান মনির, তাজিউল ইসলাম, সেজুুঁতি চৌধুরী, রুহুল আমিন, অজিত দাস, রেজাউর রহমান রানা, রোকনুজ্জামান রোকন, আরিফ মঈনুদ্দীন, শীতল সাহা, সুস্মিতা রায় সুপ্তি ও আবু রায়হান বক্সি।