আজ ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস স্মরণে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ, পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে বাণিজ্য অনুষদ, কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ঘুরে কলাভবনের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু, অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী । সমাবেশ পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষা দিবস এদেশের ছাত্র সমাজের কাছে অত্যন্ত গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৬২ সালে আজকের এই দিনেই ছাত্ররা বুকের রক্ত ঢেলে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকারের নীল নকশায় প্রণীত শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতি সুপারিশ করেছিল ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া যাবে না’। শিক্ষার ব্যয়ের ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীদের বহন করতে হবে। এভাবে শিক্ষাকে সেদিন শাসক শ্রেণী সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রাখতে চেয়েছিল। সাধারণ মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকারে রেখে শোষণমূলক স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। আর প্রতিবাদের শক্তি যেখানে জেগে উঠতে পারে— যারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্বশাসন হরণ করে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও ছাত্রদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল। শাসকশ্রেণীর এই ষড়যন্ত্রকে সেদিন এদেশের ছাত্রসমাজ রুখে দিয়েছিল রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে, আত্মাহুতি দিয়ে।
বক্তারা আরো বলেন, সেদিন শাসকদের যেসব হীনচেষ্টার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ লড়াই করেছিল দেশ স্বাধীন হলেও ছাত্রদের সেই আকাক্সক্ষা আজও পূরণ হয়নি। বরং প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ত্বরান্বিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় শুধু ব্যয়ই বাড়ছে তা নয়, পরীক্ষার চাপে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পিষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকোচিত। ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ। অর্থাৎ পাকিস্তানি প্রায় ঔপনিবেশিক শাসকরা সেদিন যা করতে চেয়েছিল কিন্তু ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের মুখে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সেই একই উদ্দেশ্য অর্থাৎ শোষণমূলক পুঁজিবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ভিত পাকাপোক্ত করথে আজ স্বাধীন দেশের শাসকরা সেটাই করছে। দিনে দিনে শিক্ষা হয়ে উঠেছে দুর্মূল্য পণ্য। সাধারণ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জনসাধারণ ক্রমেই শিক্ষার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে সরকার শিক্ষা আইন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যা চূড়ান্তভাবে ছাত্রস্বার্থপরিপন্থী। এটা বাস্তবায়িত হলে এদেশের ছাত্রসমাজের শিক্ষার ন্যূনতম অধিকারটুকুও আর থাকবে না। তাই শাসকশ্রেণীর শিক্ষা সংকোচনবিরোধী সমস্ত নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।