(ছবি: ভোরের ডাক পত্রিকার সৌজন্যে)
১.
সকাল থেকে ঢাকার কালশী ফ্লাইওভারের নীচে টিসিবির দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন গৃহকর্মী লাইলী বেগম। তিন দিন ধরে তাঁর ঘরে রান্না করার মতো চাল নেই। যেসব বাসায় কাজ করেন, সেখান থেকে অল্প পরিমাণে চাল এনে তিন দিন রান্না করে খেয়েছেন তিনি। আজ তাও শেষ। তাই দাঁড়িয়েছেন লাইনে। টিসিবির ট্রাক থেকে চাল কিনতে পারলে, তবেই ঘরে রান্না হবে। বাসায় মা ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন। চারটি বাসায় কাজ করে পান মাসে আট হাজার টাকা। এ টাকাতেই তিনজন মানুষের পুরো মাস চলতে হয়। ফলে সব কিছুর দাম বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন। গত দেড় বছরে নিজের টাকায় কোনো মুরগি বা গরুর মাংস কিনতে পারেননি লাইলী বেগম। ফলে টিসিবি ও ওএমএসের ভর্তুকি মূল্যের পণ্য কিনতে পারলে কোনোমতে সংসার চালাতে পারেন। (সূত্র-৭ নভেম্বর, প্রথম আলো- টিসিবির ট্রাক থেকে চাল নিলে রান্না হবে লাইলী বেগমের ঘরে)।
২.
৭৫ বছরের গোলতাজ বেগম চট্টগ্রাম জামালখানে টিসিবির পন্য নেওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোয় ক্লান্ত। তাঁর স্বামী অসুস্থ। ছেলেও বেকার। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলছে। পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, স্বামী ঘর-বসা। বেশ কিছুদিন ধরে কাজে যেতে পারছেন না। আয় নেই। মেয়ের এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল বন্ধক রেখে কিছু টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বাজার খরচ চলছে। সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনলেন। (সূত্র- ৭ নভেম্বর, ২০২৪, প্রথম আলো, কানের দুল বন্ধক রেখে টিসিবির চাল-ডাল কিনলেন গোলতাজ বেগম)
৩.
আলু, পেঁয়াজ, চাল, সবজিসহ প্রায় সমস্ত খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে টিসিবির ট্রাকের লাইনে নিম্নবিত্তদের সাথে এখন মধ্যবিত্তদেরও দাঁড়াতে হচ্ছে।
“টিসিবির পণ্য কেনার সারিতে আগে একসময় কেবল স্বল্প আয়ের মানুষের দেখা মিলত। এখন আগের পরিস্থিতি নেই। নগরের বিভিন্ন ট্রাক সেল পয়েন্টে গিয়ে অটোরিকশাচালক থেকে শুরু করে গৃহিণী, ক্ষুদ্র দোকানি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্কুলশিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মিলছে। সারিতে থাকা ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের প্রত্যেকেরই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। আয়ের তুলনায় অন্তত পাঁচ হাজার টাকার ঘাটতি থাকে গড়ে। অধিকাংশই ঋণ করতে ও সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁদের আয় ১৫-২৫ হাজারের মধ্যে, তাঁরা যেমন দুশ্চিন্তায় আছেন, তেমনি যাঁদের আয় ৩০-৪০ হাজারের ঘরে, তাঁদেরও একই দুশ্চিন্তা।” (২৯ নভেম্বর, প্রথম আলো )
৪.
এই যখন বাজারের পরিস্থিতি, তখন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। রেস্তোরাঁ, মোবাইল বিল, ইন্টারনেট, রোগীর পথ্য নানারকম ফল (কমলা, আঙুর, আপেল, ডালিম, নাশপাতি) ও ফলের রস, বাদাম, চশমার ফ্রেম, চশমার গ্লাস, সান গ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক খুঁটি, রং, পোশাকের দোকানে, মিষ্টির দোকানে, বিস্কুট, জুস, ড্রিংক, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক, কেক, আচার, সস, সব ধরনের টিস্যু, ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে, আমদানি করা সাবানে, ডিটারজেন্টে- এ সবকিছুতে ভ্যাটে বেড়েছে।
যখন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ বাঁচার জন্য হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন সাধারণ মানুষের নিত্যব্যবহার্য সেবার, পণ্যের বা পণ্যবিক্রির দোকানের উপর করবৃদ্ধিতে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। আইএমএফের পরামর্শে এই পরোক্ষ কর বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা পালালেও, শেখ হাসিনার অর্থনীতি ঠিকই আছে।
৫.
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চারমাস পার হলো। সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিলো, এবার জিনিসপত্রের দাম কমবে, অন্ততঃ বাড়বেনা। শেখ হাসিনা নেই, তার শাসনামলের ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠা সিন্ডিকেট এখন কেন থাকবে? এ প্রত্যাশাটাই স্বাভাবিক। কারণ বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনে অর্থনীতিতে যে ভয়াবহ লুটপাটতন্ত্র তৈরি হয়েছিল, তার ফলে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। ভোগ্যপণ্যের আমদানি হতে শুরু করে পুরো বাজার ছিল তাদের হাতে। সিন্ডিকেটই সরকার হয়ে উঠেছিল। মানুষ দেখেছে, চাল-চিনি-সয়াবিন তেল-পেঁয়াজসহ খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কিভাবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট হতে লুটে নিয়েছে। আওয়ামীলীগ শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক শ্রমজীবী মানুষের অংশ নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এ অসহনীয় পরিস্থিতি। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করবে, এটাই ছিল সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু গত চার মাসেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এর জন্য কি চার মাস পর্যাপ্ত সময় ছিলোনা?
৬.
বাজারের চিত্র কী? বর্তমানে শীতের সব্জী বাজারে আসায় শাকসব্জীর দাম কমেছে। কিন্তু একমাস আগেও কেজিপ্রতি আলু ৭৫-৮০ টাকা, দেশী পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, ভারতের পেঁয়াজ ১০০ টাকা, চিনি ১৩৫-১৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। চালের দামও বেড়েছে। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশে ঠেকেছে।
সরকার বলছে, তারা দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে সরকার আলু আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। চালের দাম কমাতে গত অক্টোবরে দুই দফায় আমদানি শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে আনা হয়। এতে আমদানি খরচ কমেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও খুলে দেয়া হয় আমদানির দুয়ার। কিন্তু চালের দাম কমেনি। (১৭ নভেম্বর ২০২৪, সিন্ডিকেটে এখন কারা?)
পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এখন আর কোনো ধরনের শুল্ক-কর থাকবে না। চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি চিনিতে কমবেশি ১১ টাকা শুল্ক-কর কমেছে। আশা করা হয়েছিল, এর ফলে দেশের বাজারে পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমে আসবে। সরকারের এসব পদক্ষেপের পরও আলু, চাল, চিনি, পেঁয়াজের দাম ১ টাকাও কমেনি, বরং বেড়েছে।
তাহলে কি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম খুব বেড়েছে, যার কারণে শুল্ক কমালেও আমদানি ব্যয় কমছে না? অথচ বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে যেসব ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়, এর প্রায় সবকটির দামই আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম ১০০ থেকে ৭৮ ডলারে নেমে এসেছে। এতে জাহাজ ভাড়াসহ অন্য পরিবহণ খরচ কমেছে। দেশে ডলারের দামও কমেছে। আগে আমদানিতে প্রতি ডলার কিনতে হতো সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা করে। এখন তা কমে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। এসব কারণে আমদানি খরচ কমেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই আমদানি পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে দাম কমেনি। উলটো আরও বেড়ে যাচ্ছে। (ইত্তেফাক ডিজিটাল রিপোর্ট : ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪)
তাহলে সরকারের আমদানি শুল্ক কমানো, শুল্ক ছাড়ের পুরো সুবিধা গিয়েছে ব্যবসায়ীদের পকেটে, জনগণের কোন কাজে আসেনি। কারণ সরকার এত কিছু করলেও, আসল জায়গায় হাত দেয়নি। বাজারে সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে আছে।
অথচ পত্রপত্রিকায় দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট যুক্ত থাকার তথ্যগুলো স্পষ্ট উঠে এসেছে। যেমন- আলুর কেজি যখন ৮৫ টাকা ছিল, সেসময়ে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ১৯ টাকা ৪৮ পয়সায়। আর পাইকারিতে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। তাহলে আলুর এ বাড়তি দাম কাদের পকেটে যাচ্ছে? বাজারে নতুন আলু আসার আগে সাধারণত: নভেম্বর ডিসেম্বরে আলুর দাম বাড়তি থাকে। এই সময় কৃষকের কাছে আলু থাকে না। পুরোনো আলু এখন বাজারে আসছে হিমাগার থেকে। অক্টোবর মাসে বেশি বৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণে দেরি হওয়ায় বাজারে আগাম আলু আসতেও দেরি হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, যার সুযোগ নিচ্ছেন হিমাগারের মালিকরা। চাহিদার তুলনায় আলুর ঘাটতি থাকার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছামতো দামে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের দিক থেকে হিমাগার পর্যায়ে কোনো তদারকি না থাকায় মজুতদারেরা এভাবে বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারছেন। (সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির আলুর বাজার, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪)
গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছিলেন, “সিন্ডিকেট শনাক্ত এবং ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। যদি সিন্ডিকেটের বিষয়ে কোনো তথ্য থাকে, কারা দাম বাড়াচ্ছে এবং একচেটিয়া ব্যবসা করছে তা আমাদের জানান। সরকার অবশ্যই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।”
সিন্ডিকেট সনাক্ত ও ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ঠিক কোন কাজটা করা হচ্ছে, আদৌ করা হচ্ছে কিনা, তেমন কিছু সরকারের পক্ষ হতে জানানো হয়নি। দেখা যাচ্ছে, সরকার এখনও সে সিন্ডিকেটের খোঁজ পায়নি।
৭.
যা দেখা গেল, শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, কিন্তু তার আমলের লুটপাটকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রয়ে গিয়েছে। ফলে সে সিন্ডিকেট না ভাঙলে কিভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ স্বস্তি পাবে না। কিন্তু সরকার একচেটিয়া ব্যবসায়ীগোষ্ঠী মালিকের বিরূদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি শ্রমিকদের মাসের পর মাস মজুরী বকেয়া রাখা গার্মেন্টস মালিকদের বিরুদ্ধে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদ আনে যে পুঁজিবাদী লুটপাটের ব্যবস্থাÑ তা রয়ে গিয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফাই ভগবান। দেশের পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় জনগণের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, সর্বোচ্চ মুনাফার জন্যই উৎপাদন নীতি ও উৎপাদন পরিচালিত হয়। ফলে মূল্যবৃদ্ধি পুঁজিবাদের অবশ্যম্ভাবী ফল। মালিকের শোষণের ফলে শ্রমিকসহ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমতে থাকে। আয়ের সাথে ব্যয়ের তাল মেলাতে না পারায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠে। ফলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল থাকলে, মূল্যবৃদ্ধির সংকট হতে সাধারণ মানুষের নিস্তার নেই। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়ও সরকার মূল্যবৃদ্ধি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এ দায়িত্ব সরকার অস্বীকার করতে পারেনা। খাদ্যদ্রব্য যাতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায়ীরা যাতে মজুতই করতে না পারে, সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে, সরকারকে তার বাস্তব অবস্থা তৈরি করতে হবে। সেজন্য একটা হচ্ছে সরাসরি মজুতদার ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান, আইনের আওতায় আনা। আরেকটি হচ্ছে, পরোক্ষভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ। সরকার নিজে আমদানি করে বাজারে ন্যায্য দামে সরবরাহ বাড়িয়ে, ব্যবসায়ীদের তৈরিকৃত ঐ পণ্যের কৃত্রিম সংকট ভেঙ্গে দিতে পারে, যাতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কায় দাম কমাতে বাধ্য হয়। এজন্য টিসিবির মাধ্যমে চাল, ডাল, চিনি, তেল, পিঁয়াজ এগুলো আমদানি করে ন্যায্যমূল্যে জনগণের কাছে বিক্রি, প্রতি জেলায় টিসিবির কার্যালয় স্থাপন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা- এগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনই করতে পারে। আর আমরা মনে করি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে অন্তত খাদ্যের ক্ষেত্রে পুরো রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও বন্টনের পুরো ব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীরা। কৃষক অল্প দামে পাইকার, আড়তদার, হিমাগার মালিক, চালকল মালিক, ফড়িয়া এ ধরণের মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না এবং অতিরিক্ত দামে জনগণকে তা কিনতে হয়। যেসব খাদ্যপণ্য আমদানিনির্ভর, তার দামও নির্ভর করে আমদানিকারকদের উপর। সেক্ষেত্রে সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ হতে ন্যায্যমূল্যে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র, এজেন্সির মাধ্যমে খাদ্যশস্য কিনে নিবে এবং যেক্ষেত্রে প্রয়োজন বিদেশ থেকে আমদানি করবে এবং সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত বন্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলে সে খাদ্যশস্য বিভিন্ন সরকারি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে। এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছোমতো কম দামে কৃষকদের কাছ হতে খাদ্যশস্য কিনতে পারবেনা, ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিতে পারবেনা। এর ফলে একদিকে কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবে, অন্যদিকে জনগণ লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি হতে রেহাই পাবে।